Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

ধর্ষণের শিকার সেই বাক প্রতিবন্ধী কিশোরী’র পুত্র সন্তান জন্ম

শাহিন আলম, দেবিদ্বার (কুমিল্লা)

জুলাই ১২, ২০২১, ০২:০৫ পিএম


ধর্ষণের শিকার সেই বাক প্রতিবন্ধী কিশোরী’র পুত্র সন্তান জন্ম

কুমিল্লার দেবিদ্বারে ধর্ষণের শিকার সেই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোরী একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছে। সন্তান জন্ম দেওয়ার পরই নির্যাতিতার অসহায় ও দরিদ্র পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। 

শুক্রবার রাতে (৯ জুলাই) ওই কিশোরীর বাড়িতে শিশুটি ভূমিষ্ট হয়। এ ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা ধর্ষকের শাস্তি দাবি জানিয়েছে। তবে এ ঘটনায় থানায় এখনও মামলা বা অভিযোগ দেওয়া হয়নি। 

পুলিশ বলছে, মামলা হলে আইনগত সব রকম সহায়তা করা হবে ভুক্তভোগীর পরিবারকে। দেবিদ্বার পৌর এলাকার বারেরায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় একটি চক্র মীমাংসার করার পাঁয়তারা করছে বলে একাধিক সূত্র  থেকে জানা যায়।

ওই সূত্রটি জানায়, ঘটনার পর থেকে ওই কিশোরী ও তাঁর পরিবার কাজী সোহাগ নামে স্থানীয় এক চা দোকানিকে অভিযুক্ত করলেও ওই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে সোহাগের পরিবার। অভিযুক্ত কাজী সোহাগ বারেরা এলাকার মো.মফিজুল ইসলামের ছেলে। ভুক্তভোগী ওই কিশোরী একই এলাকার বাসিন্দা।  

রোববার বিকালে সরেজমিনে ওই ভুক্তভোগী কিশোরীর বাড়িতে গেলে ওই কিশোরীর মা জানায়, এলাকার লোকজন বিচার করে দিবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি কাজী সোহাগকে অভিযুক্ত করে বলে, আমরা এলাকার লোকজন যে সিদ্ধান্ত দিবেন আমরা তা মেনে নেব।  

জানা যায়, গত বছরের আনুমানিক অক্টোবর মাসের কোন একদিনে বারেরা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি বাড়িতে কাজ করতে যায় ওই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোরী। এরপর প্রতিবেশী কাজী সোহাগ তাকে গাছ থেকে পেয়ারা পেড়ে দিবে বলে ওই কিশোরীকে বাড়ির ছাদে নিয়ে ধর্ষণ করে। ওই ঘটনার ৬ মাস পর ওই কিশোরীর শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে আল্ট্রা করার পর জানা যায় ওই কিশোরী ৬ মাসের অন্তস্বত্ত্বা। 

পরে ওই কিশোরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ওই কিশোরী জানায়, প্রতিবেশী চা দোকানদার কাজী সোহাগ তাকে গাছ থেকে পেয়ারা পেড়ে দিবে বলে ওই বাড়ির ছাদে নিয়ে ধর্ষণ করে। সোহাগকে অভিযুক্ত করে এ সংক্রান্ত ওই কিশোরীর একটি ভিডিও বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তোলপাড়। 

এরপর থেকে স্থানীয় একটি চক্র আরও কয়েকজন জড়িত আছে বলে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর ডিএনএ টেস্ট অভিযুক্তকে তখন জানা যাবে এ কথা বলে থানায় অভিযোগ করে বাঁধা প্রদান করে বলে জানায় এলাকাবাসী।   

এ ব্যাপারে হেলাল উদ্দিন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ওই কিশোরীর পূর্বে একটি বিয়ে হয়েছে। তার সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় গত দুই বছর আগে। পূর্বের স্বামী এ কাজ করে থাকতে পারে বলে আমরা সন্দেহ করছি। 

এছাড়াও ওই মেয়ের খালাতো ভাই রয়েছে একজন তাকেও আমরা সন্দেহ করছি। তবে মেয়েটা বারবার সোহাগের নামই বলে আসছে। এখন ডিএনএ টেস্ট করলে প্রকৃত অভিযুক্ত কে জানা যাবে। 

স্থানীয় বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম, শ্রমিক নেতা আবদুল হালিম, চা দোকানি আবদুল বাতেন রবিবার বিকালে এ প্রতিবেদককে জানান, ভুক্তভোগী ওই মেয়েটির বাবা কিছু দিন আগে মারা যান। মেয়েটির মা’ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। বর্তমানে তাঁর শক্ত কোন অভিভাবক নেই যে তাকে আইনগত সহায়তা করবে। এ ঘটনায় মেয়েটি শুরু থেকে কাজী সোহাগের নাম বলে আসছে। তবে এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। 

এ ব্যাপারে স্থানীয় কমিশনার এমএ আবদুল আউয়াল বলেন, শুক্রবার রাতে তাঁর একটি পুত্র সন্তান ভূমিষ্ট হয়।  ঘটনার পর থেকে ওই কিশোরী সোহাগের নামই বলে আসছেন। আমরা ওই স্থানীয়ভাবে সমাধান করার চেষ্টা করব, না পারলে আইনগত সব সহায়তা তাকে করা হবে। 

এ ব্যাপারে দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আরিফুর রহমান বলেন, কিশোরীর পরিবার থেকে এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে যারা এ ন্যাক্কারজনক কাজ ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

আমারসংবাদ/এআই