Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

সাভারে ক্রেতা না পাওয়ায় পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারীরা

সাভার প্রতিনিধি 

জুলাই ১৩, ২০২১, ০৯:০০ এএম


সাভারে ক্রেতা না পাওয়ায় পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারীরা

করোনা পরিস্থিতির কারণে পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে সাভারের খামারিরা। ঈদ ঘনিয়ে এলেও ব্যাপারীদের তেমন পদচারণা নেই কোন খামারে। এর ফলে ঈদ উপলক্ষ্যে প্রস্তুত করা গরু নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে খামারিদের মাঝে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সাভারের হেমায়েতপুরের লালন ডেইরি নামের ফার্মটিতে মোটাতাজাকরণ দেশীয় পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হচ্ছে অর্ধশতাধিক ষাড়। অন্যান্য বছর কোরবানী ঈদের এক দেড় মাস আগে থেকেই এসব খামারে ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও এ বছর নেই সেই চিত্র। 

করোনাকালীন সময়ে অধিক মূল্যে গো-খাদ্য কেনা ও  লকডাউনের কারণে খামারে আশানুরূপ ক্রেতা না আশায় বিক্রির উপযুক্ত পশু নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন লালন ডেইরি ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়ার মো. শাওন সরকার। 

সাভার উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে তিন হাজারের অধিক খামারী রয়েছেন। আসছে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এসব খামারিরা সম্পন্ন প্রাকৃতিক উপায়ে ঘাস, খড়, ভুসি ও দানাদার খাবারের মাধ্যমে তাদের গরু মোটাতাজা করণ করেছে। 

সাভার পৌরসভার নামা গেন্ডা এলাকার ক্ষুদ্র খামারী রাশিদা বেগম জানান, এ বছর ঈদ উপলক্ষে তিনি তার দুইটি ষাঁড় গরুকে অতি যত্নে লালন পালন করে কোরবানির উপযুক্ত করে তুলেছেন। তবে করোনার কারণে সাভারে এখনো পযর্ন্ত বসেনি কোন পশুর হাট। কোন ক্রেতাও আসেনি বাড়ির উঠানে। এ বছর ষাঁড় দুটো বিক্রি না পারলে কোন উপাই নেই আরেক বছর লালন পালন করতে হবে। তাই লোকসান হলেও বিক্রির কথা ভাবছেন তিনি। 

সাভারের চাপইন এলাকার আরেক খামারি বলেন, কিছু কিছু ব্যাপারী আসছেন গরু দেখার জন্য। কিন্তু তেমন দাম বলছেন না। কোরবানিতে বিক্রির জন্য গরুর মাংসের দামের চেয়ে গরুর আকার-আকৃতি দেখে দাম নির্ধারিত হয়। আমার গরুগুলো আকার আকৃতিতে বেশ ভাল। এবার হাটে তুলতে পারলে ভাল দাম পাওয়া যেত। কিন্তু করোনাকালীন পরিস্থিতি ভাল না দেখে অনলাইনে গরু বিক্রির চেষ্টায় আছি। 

লালন ডেইরি ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়ার মো. শাওন সরকার বলেন, প্রতি বছরের মতো এ বছরও লালন ডেইরি ফার্মে অর্ধশতাধিক ষাড় প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করণ করা হয়েছে। তবে ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও আশানুরূপ ক্রেতা আসছে না খামারে। 

শাওন সরকার এই প্রতিবেদকের কাছে আরো জানান, কোরবানির ঈদের আগে কঠোর লকডাউন ও বিধিনিষেধের মুখে কোরবানিযোগ্য অর্ধশতাধিক পশু নিয়ে বিপাকে আছি আমরা। এবার আমাদের প্রত্যাশা ছিল আসন্ন কোরবানি ঈদে ভাল দামে পশু বিক্রি করে গতবারের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া। তবে এবারও আশায় গুড়েবালি পড়েছে। করোনা রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধে চিন্তিত সাভারে হেমায়েতপুর এলাকার লালন ডেইরি ফার্ম।

তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন সময়ে অধিক মূল্যে গো-খাদ্য কেনা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে যে সমস্ত ষাড় গরুকে মোটাতাজা করণ করা হয়েছে এগুলো যদি বিক্রি না হয় তবে বড় ধরণের লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে। 

লালন ডেইরি ফার্মের চেয়ারম্যান আমান সরকার বলেন, এবারের কোরবানির ঈদে, আমার খামারে আমি ৫০টি ষাঁড় মোটাতাজা করেছি। দেশীয় পদ্ধতিতে শুধু সবুজ ঘাস, খড়, গম ও কালাইয়ের ভুসি, খৈল খেঁজুরের গুর এবং ফিড খাওয়ানো হয়েছে। পাশাপাশি ষাঁড়ের হজমশক্তি বৃদ্ধি এবং শারীরিক গঠনের জন্য জিঙ্ক খাওয়াচ্ছি। 

মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কোনো মেডিসিন ব্যাবহার করা হয় নাই। তবে ছোটখাটো খামারিদের মধ্যে তেমন কোন চিন্তা ভাবনা কাজ না করলেও চরম দুশ্চিন্তায় আছেন বড় বড় খামারি। খামারে পালিত পশুগুলো ক্রেতা ধরার জন্য অনেকেই করছেন আগাম প্রচার-প্রচারণা। 

তিনি আরো বলেন, ঈদের আগ পর্যন্ত এভাবে বিধিনিষেধ চলতে থাকলে অনেক বিপদে পড়বেন তারা। অন্তত কিছু দিনের জন্য হলেও সাভারে হাটে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ঈদ-উল-আজহাকে সামনে রেখে প্রতি বছরই সাভার উপজেলার হেমায়েতপুর এলাকা থেকে প্রায় ৫০-৬০টি গরু বিক্রি হয়ে থাকে। এ বছর এখন পর্যন্ত লালন ডেইরি ফার্মে গরু ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে তেমন কোন তৎপরতাই নেই।

এ বিষয়ে সাভার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সাজেদুল ইসলাম বলেন, খামারিরা গরু পালন করেন লাভের আশায়। পবিত্র ঈদ-উল-আজহার বেশি বাকি নেই। চেষ্টা করা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরুর হাঁট বাজার চালু করার। কিন্তু পরিস্থিতিই বলে দিবে কি করার আছে। 

তিনি আরো বলেন, এ বছর সাভার পৌরসভাসহ এই উপজেলায় ১১টি ইউনিয়নে ছোট-বড় খামার রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার গরু লালনপালন করে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে চলমান লকডাউনের কারণে এসব গরু সঠিক সময়ে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারবেন কি-না এই শঙ্কায় রয়েছেন গরুর খামারি মালিকরা। 

আমারসংবাদ/কেএস