Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

সাটুরিয়ায় নেই তাঁতপল্লীর খট খট শব্দ

সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি 

জুলাই ১৩, ২০২১, ০৯:৩৫ এএম


সাটুরিয়ায় নেই তাঁতপল্লীর খট খট শব্দ

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার তাঁতের শাড়ির কদর ও সুনাম রয়েছে দেশ ছারিয়ে বিদেশেও। উপজেলার বরাইদ ও দিঘলীয়া ইউনিয়ন জুড়ে তাঁতের শাড়ি উৎপন্ন হলেও তাঁতপল্লী হিসেবে পরিচিত বরাইদ ইউনিয়নের সাভার, আগ সাভার ও নাশুরপুরের তাঁত সমৃদ্ধ এলাকাকে ঘিরে। এ সব এলাকায় বছরজুড়ে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে মাকু আর শানার খটখট শব্দ। শিশু-বৃদ্ধ আর নারীদের সময় কাটে চরকা ঘোরানোর শোঁ-শোঁ আওয়াজে। সেই ব্যস্ত তাঁতপল্লী এখন নিরব-নিস্তব্দ। 

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে থেমে গেছে মাকু আর শানার চিরচেনা আওয়াজ। চরকাটাও ঘুরছে না। তাঁতের মালিক-শ্রমিকের সারাবছর যেভাবেই কাটুক, বৈশাখ আর ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আযহাটা কাটে উৎসবের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এবারের বৈশাখ ও ঈদুল ফিতর গেছে একদম সাদাসিদে। তাঁত বন্ধ থাকায় তাঁতপল্লী সাজেনি ঈদুল আযহার আনন্দেও। 

উপার্জন থেমে যাওয়ায় তাঁতীরা পড়েছেন ভয়াবহ দুর্দিনে। মানিকগঞ্জের শাড়ি বিক্রির অন্যতম বৃহৎ করটিয়া হাট বন্ধ রয়েছে। তাঁতপল্লীর শোরুমগুলোও বন্ধ। ফলে মজুদ শাড়িও বিক্রি হচ্ছে না। গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় দেশের পাইকার ব্যবসায়ীরাও শাড়ি নিতে আসছে না তাঁতপল্লীতে। মজুদ শাড়ি নিয়েও বিপাকে পড়ছে এ অঞ্চলের ছোট বড় ব্যবসায়ীরা। এতে তাঁত শিল্পে ধস নামার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাঁতশ্রমিক আবদুল হক জানান, লকডাউনে মহাজনরা শাড়ি বিক্রি না করতে পারায় তাঁতকল গুলো বন্ধ রয়েছে। ফলে মানবেতর দিন কাটছে।

সাটুরিয়া উপজেলা তাঁতমালিক সমিতির নেতারা জানান, সাটুরিয়ায় তাঁত মালিকের সংখ্যা দুইশত ২০ জন। তাঁত রয়েছে প্রায় ১ হাজার। এসব তাঁতে মোট ৩ হাজার জন তাঁত শ্রমিক সম্পৃক্ত। তাঁতপল্লীতে কেউ শাড়ি বুনেন, কেউ চরকায় সুঁতা কাটেন, কেউ কাপড়ের নকশার সুঁতা কাটেন। আবার সুঁতা রঙ করা, শুকানো, পাটিকরা, তানার সুঁতা কাটা, ড্রাম থেকে ভিমে সুতা পেঁচানো, তানা সাজানো, মালা বা নকশার ডিজাইন তোলা, কাপড় ভাঁজ করা, পেটি করা এবং বাজারজাত ও আনা-নেওয়ার কাজ করে থাকে এ পেশায় সম্পৃক্তরা। লকডাউনের এই লম্বা সময়ে সেব সেক্টরে কাজ করা তাঁতীরাই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। লকডাউনে প্রায় ৩ কোটি টাকার মজুদ শাড়ি অবিক্রিত রয়ে গেছে। কাপড় বিক্রি করে তাঁতীদের মজুরি দেওয়া হতো। কিন্তু দেড় বছর ধরে তাদের উপার্জন নেমে এসেছে শূন্যের কোটায়। ফলে তাঁতীরা সীমাহীন দুর্দিনের মধ্যে পড়েছেন। 

মহাজন শ্রেণির শাড়ি ব্যবসায়ীদের আর্থিক অবস্থা ভালো হলেও সাধারণ তাঁতীরা দিন আনে দিন খায়। অধিকাংশ তাঁতীদের বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে হয়। লকডাউনে এনজিওর কিস্তি বন্ধ থাকলেও ধার-দেনা করে চলছে সংসার। লকডাউন তুলে নিলে ধার-দেনার টাকা পরিশোধ করে এনজিওর কিস্তি শোধ করতে আরও বেগ পেতে হবে তাদের। তাই এ শিল্পকে বাঁচাতে তাঁতীদের পাশে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। 

স্থানীয় ১নং বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ হারুন-অর-রশিদ সাংবাদিকদের জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে তাঁতীরা এখন পুরোপুরি কর্মহীন। শাড়ি ব্যবসার জন্য বৈশাখী ও ঈদুল ফিতর, ঈদুর আযহার তিনটি প্রধান মৌসুম। পহেলা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতরে কোনো শাড়ি বিক্রি হয়নি। ঈদুল আযহার জন্য নতুন শাড়ি বানানো হয়নি। উৎসবের জন্য যেসব শাড়ি আগেই মজুদ করা ছিলো সেগুলোও বিক্রি হচ্ছে না। ঈদুল আযহায় “প্রতিটি শাড়ি উৎপাদন খরচ গড়ে সাড়ে পাঁচশ” টাকা। করোনার কারণে ঈদুল আযহায়ও তাঁতীরা এই লাভ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ঈদুল আযহার শাড়ি হয় আরও দামী। বিক্রিও হয় বেশি। এখানে লোকসানের পরিমান বৈশাখী ও ঈদুল ফিতরের তুলনায় তিন-চার গুণ বেশি হবে। সরকারি প্রণোদণা না পেলে তাঁতীরা এ সঙ্কট মোকাবিলা করতে পারবে না বলে তিনি মনে করেন তিনি।

এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম বলেন, সাটুরিয়ার উৎপাদিত তাঁতের কাপড়ের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ সুনাম রয়েছে। এটা আমাদের গর্বের। তাঁতশিল্পে জড়িতরা যাতে সহজ শর্তে সরকারি প্রণোদনা পান তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করব।

আমারসংবাদ/কেএস