Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

কেরানীগঞ্জে শত কোটি টাকার ভেজাল কীটনাশক উদ্ধার

কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি

জুলাই ১৩, ২০২১, ১০:০০ এএম


কেরানীগঞ্জে শত কোটি টাকার ভেজাল কীটনাশক উদ্ধার

ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার হযরতপুর ইউনিয়নের আলিপুর এলাকায় মেঘনা ফার্টিলাইজার লিমিটেড নামে দেশের সব চেয়ে বড় ভেজাল কীটনাশক কারখানার সন্ধান মিলেছে। 

মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) বাংলাদেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে ভেজাল কারখানাটি আবিস্কৃত হয়। কারখানাটিতে দীর্ঘদিন ধরে দেশের নামীদামী সব কোম্পানির কীটনাশক ও টিএসপি সারসহ বিভিন্ন ভেজাল কৃষি উপকরণ তৈরি হয়ে আসছিলো। কারখানাটি রাস্তার পাশে এবং জনবসতিতে হওয়া সত্যেও এর উৎপাদন সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না এলাকাবাসীর।

তবে স্থানীয় চেয়ারম্যান আয়নাল হক জানিয়েছেন, এখানে অবৈধ কারখানা আছে অনেকেই জানে। প্রায় তিন বছর আগে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এর বিরুদ্ধে অ্যাকশনে গিয়েও ব্যার্থ হয়েছে মালিক পক্ষের প্রভাবের কারণে। কারখানাটির মালিক ও বাড়ির মালিক পুলিশের প্রভাবশালী অফিসার হওয়ায় এর বিরুদ্ধে মুখ খুলে না কেউ।

মিমপেক্স এগ্রো কেমিক্যাল লিমিটেড এর চেয়ারম্যান ও বিসিপিএম এর সভাপতি এম সাইদুজ্জামান বলেন, অবৈধ ও ভেজাল এ কারখানাটি সরকারি ভাবে উৎপাদিত টিসপি সার, ফুরাডান, সেতারা, সুরেট প্লাস, টাবগর, জায়জিনন, এমিস্কোর, সেমকাপসহ দেশের নামকরা শিল্পীগোষ্ঠীর নাম ব্যবহার করে কীটনাশক উৎপাদন করে আসছিলো। কারখানাটি এতোই বিশাল যে সকলের কল্পনার বাহিরে। এসব কারখানার কারণে দেশের কৃষি ধ্বংস হচ্ছে। কারখানাটি বন্ধ হলে দেশের কৃষির উন্নতি হবে।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল আমিন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি কারখানাটিতে ভেজাল সার ও কীটনাশক উৎপাদন হচ্ছে।আমরা এসে এর সত্যতা পেয়েছি। কারখানাটির বিশালতা আমাদের কল্পনার বাহিরে। উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, এক ভেজাল কীটনাশক ক্রেতার সংবাদের ভিত্তিতে আমরা কারখানাটিতে পরিদর্শনে এসে দেখতে পাই দেশের সব প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির কীটনাশক ও সরকারি টিসপি স্যারসহ নানা ধরনের ভেজাল কৃষি উপকরণ তৈরি হচ্ছে কারখানাটিতে, যার কোন অনুমোদন নেই। কীটনাশক ও সার তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে গাজীপুর থেকে আনা লাল মাটি, ইটের গুড়া, বালি, খইল, সয়ামিল, সালফাইড এসিডসহ নানা আজেবাজে উপকরণ। এসব উপকরণ দিয়ে তৈরি কীটনাশক ও সার মাটির ক্ষতি না করলেও কৃষির কোন উপকার হবে না। অবৈধ এ কারখানাটি তার দেখা সব চেয়ে বড় ভেজার কারখানা বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ বলেন, আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কারখানাটিতে অভিযান পরিচালনা করে দেখতে পাই কারখানাটি সম্পন্ন ভুয়া এবং অবৈধ। কারখানাটিতে সাধারণ মাটি, বালি ও ইটের গুড়া দিয়ে স্যার ও কীটনাশক বানিয়ে তারা কৃষি ও কৃষকদের সাথে প্রতারণা করে আসছিলো। এটি একটি জঘন্যতম অপরাধ। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করছি। ইতোমধ্যে কারখানাটির অবৈধ উতপাদন বন্ধ করা হয়েছে। মওজুদ থাকা কেমিক্যাল ও কাচামাল ধ্বংস করা হচ্ছে। কারখানাটির মালিককে পাওয়া যায়নি তবে বাড়ির মালিক পরিচয়ে একব্যক্তি ফোন দিয়ে জানান তার বাড়িটি ভাড়া দেওয়া। তিনি পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয় দিলেও এর সত্যতা নিশ্চিত করা হয়নি এখনো। মওদুদ ভেজাল সার ও কীটনাশকের আনুমানিক মূল্য ৫০ কোটি টাকার উপর বলে জানান এ কর্মকর্তা। 

এলাকাবাসী জানিয়েছে বাড়িটির মালিক স্থানীয় জামাই ও পুলিশের একজন প্রভাবশালী ডিআইজি। তার বাড়ি গোপালগঞ্জে। তিনি প্রায় বাড়িটি দেখাশোনার জন্য আসেন বলেও জানান স্থানীয়রা। তবে অনেকেই ভয়ে মুখ খুলতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ পুলিশ, বিজিবি ও কৃষি সম্প্রসারণ সদস্যাদের অংশগ্রহণে অভিযানে নেতৃত্বে ছিলেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন কীটনাশক কোম্পানির মালিক, প্রতিনিধি ও কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সহকারী কমিশনার ভূমি ইকবাল হাসান, কলাতিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই আশিক প্রমূখ।

আমারসংবাদ/কেএস