Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

যমুনার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ

মোহাম্মদ আলী, বগুড়া

জুলাই ১৭, ২০২১, ১০:৩৫ এএম


যমুনার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ

যমুনার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা গ্রহণের কথা জানিয়েছে-বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড। বগুড়ার সোনাতলা ও সারিয়াকান্দী হয়ে ধুনট উপজেলার বানিয়াজান পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার যমুনার ডান তীর পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পাকা, মজবুতকরণ; ধুনটের শহড়াবাড়ী ও বানিয়াজান স্পার শক্তিশালী করে পর্যটকদের জন্য দৃষ্টিনন্দন করে তোলার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। 

এছাড়া মানস নদী ও যমুনা নদীর সংযোগ স্থলে স্লুইস গেইট নির্মাণ এবং মানস নদী খননে আরেকটি প্রকল্প জরিপের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়ার সহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ন কবির জানান, গাইবান্ধা থেকে বগুড়া সিরাজগঞ্জ হয়ে পাবনার বেড়া উপজেলা পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দৈর্ঘ্য ২১৭ কিলোমিটার। যমুনার ভাঙন রোধে ১৯৬৫ সালে বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়। 

সেই বাঁধের পশ্চিম পাড় ভাঙনের কবলে পড়ে মূল বাঁধ থেকে কোথাও ৯ কিলোমিটার, কোথাও ৮ এবং কোথাওবা ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে চলে এসেছে। লাখো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে এবং প্রতি বছরই ভাঙন চলছে। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। 

বাঁধ রক্ষা এবং বন্যা থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখতে প্রতিবছরই বাঁধ সংস্কারের কাজ করা হয়। “সারিয়াকান্দীকে রক্ষায় ১৯৯৮ সালে সারিয়াকান্দী সদরে একটি গ্রোয়েন, একটি হার্ড পয়েন্ট এবং মথুরাপুরে আরেকটি হার্ড পয়েন্ট নির্মাণ করা হয়; যার নির্মাণ ব্যয় পড়ে ২২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। 

তিনি জানান, ২০০৩ সালে বাঁধ রক্ষায় বগুড়ার সীমানায় সারিয়াকান্দীর হাসনা পাড়া থেকে ধুনটের বানিয়াজান পর্যন্ত ৬টি স্পার নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি স্পারে ১১ কোটি করে ৬৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু উত্তরে হাসনা পাড়া স্পারটি শুধু টিকে আছে। আর একদম দক্ষিণে বানিয়াজান স্পারের তিন ভাগের এক ভাগ রয়েছে। প্রায় প্রতি বছরই বর্ষা এলে বাঁধ সংরক্ষণে কাজ করা হয়। তবুও স্থায়ী কোনো সমাধান মেলে না। 

হুমায়ন কবির আরও জানান, ২০১৫ সালে গাইবান্ধা থেকে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ হয়ে পাবনার বেড়া উপজেলা পর্যন্ত ২১৭ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মজবুত ও বাঁধের উপর চার লেন পাকা সড়ক নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে জমা ছিল, পরে তা বাতিল হয়ে যায়। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, সোনাতলা উপজেলা থেকে সারিয়াকান্দী উপজেলা হয়ে ধুনট উপজেলার বানিয়াজান পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার বাঁধ মজবুত, প্রশস্থকরণ; শহড়াবাড়ী ও বানিয়াজান স্পার বিনির্মাণ এবং পর্যটক আকর্ষণ ও দৃষ্টিনন্দন করতে ছাতা-বেঞ্চ তৈরি করা হবে। এই প্রকল্প প্রি-একনেকে পাশ হয়েছে; ফাইল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ২০২৪ সালে প্রকল্পটি শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। 

তিনি আরও জানান, শহড়াবাড়ী ও বানিয়াজান দুটি স্পারের আলাদা ডিজাইনও তৈরি হয়েছে। স্রোত থেকে স্পারের সামনের অংশ রক্ষার জন্য ডিজাইনে এবার ওই অংশ গোলাকৃতি করা হয়েছে। 

বগুড়া-৫ আসনের (ধুনট-শেরপুর) সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবর রহমান বলেন, ধুনটকে রক্ষা করতে যমুনার ভাঙন রক্ষায় ইতিপূর্বেও কাজ করেছি। মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। আগামীতে বাঁধ রক্ষায় বড় ধরনের কাজ হবে।

ধুনটের চিথুলিয়ার আব্দুস সবুর বলেন, মানস খনন হলে নদীর নাব্যতা যেমন ফিরে পাবে তেমনি নদী, খাল, বিলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছে ভরে উঠবে। বর্ষায় পানির সাথে পলিমাটি গিয়ে জমির উর্বরতা বাড়াবে। রাসায়নিক সারের প্রয়োজন বেশি হবে না। পানির চাপ কম হলে যমুনার ভাঙন থেকেও রক্ষা পাবে লাখ লাখ মানুষ। 

ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বাবু বলেন, সারাবছরই যমুনা নদী দেখতে শত শত মানুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে শহড়াবাড়ী ও বানিয়াজান বন্যা নিয়ন্ত্রণ স্পারে আসে। বর্ষায় বেশি মানুষের সমাগম হয়। 

ঈদে বিনোদনের জন্য পরিবার-পরিজন নিয়ে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে। কিন্তু এসব মানুষের বসার কোনো স্থান নেই। দুটি স্পারে স্থায়ী ছাতা এবং বেঞ্চ তৈরি করা হলে শহড়াবাড়ী ও বানিয়াজান স্পার এলাকা বগুড়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে মনে করেন স্থানীয় জণগন। 

আমারসংবাদ/এআই