Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

অবৈধ সন্তান বিক্রির সময় ভুয়া ডাক্তারসহ ১০ জন আটক

বিএইচ সজল, খুলনা

জুলাই ১৭, ২০২১, ০১:৩০ পিএম


 অবৈধ সন্তান বিক্রির সময় ভুয়া ডাক্তারসহ ১০ জন আটক

বেশ কিছুদিন পূর্বে র‌্যাব-৬ একটি অভিযানিক দল তাদের গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে জানতে পারে খুলনার গল্লামারী এলাকায় সুন্দরবন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিছু অনৈতিক ও মানবতা বিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। 

এরপর শুক্রবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় র‌্যাব-৬ এর গোয়েন্দা টিম জানতে পারেন, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ থেকে এসে অবৈধ গর্ভপাত করেন জৈনক নারী। নবজাতক কন্যা শিশুটি মাত্র ১৫ হাজার টাকায় নবজাতক বিক্রি করছিলেন তিনি। ঠিক সেই মুহুর্তেই তারা অভিযান চালান। 

খুলনার জিরোপয়েন্ট সংলগ্ন রংধনু আবাসিক এলাকায় মায়ের আর্শীবাদ নামের তিনতলা ভবনের সুন্দরবন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। বেবী মন্ডলের মালিকাধীন লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধও জব্দ করা হয়েছে।

র‌্যাব-৬ এর নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট গালিব পাশার নেতৃত্বে ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পরিচালিত অভিযানে জেলা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ সাবরিনা রহমান স্নিগ্ধাও ছিলেন। এই ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। দীর্ঘদিন যাবত সাইন বোর্ডে খুলনার স্বনামধন্য চিকিৎসকদের নাম ব্যবহার করে ক্লিনিকটিতে অপারেশন করছেন বেবী মন্ডলের স্বামী টি কে মন্ডল। তারও চিকিৎসা শাস্ত্রের ওপর কোন সনদ নেই বলে জানিয়েছে র‌্যাব-৬।

সূত্রে জানা গেছে, দু’দিন আগে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ থেকে সোহবান হোসেনের স্ত্রী জৈনক মহিলা (২৫) সুন্দরবন ক্লিনিকে ভর্তি হন তার পিতার মাধ্যমে। এলাকায় বলে এসেছে টিউমার অপারেশন করতে খুলনায় এসেছেন তারা। 

পূর্বে দু’টি সন্তান থাকায় স্বামীর অনুপস্থিতিতে জন্ম নেয়া অবৈধ এ সন্তানটি জন্মের পর সুন্দরবন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ঝাড়ুদার রেহেনা ও তার বোন হোসনেয়ারার মাধ্যমে বিক্রির জন্য খরিদ্দার খুঁজতে থাকে সে।

আর এ কাজে সার্বিক সহায়তা করেন ক্লিনিক মালিক বেবী মন্ডল ও তার স্বামী চিকিৎসক পরিচয়দানকারী তুষার কান্তি মন্ডল। সন্ধ্যায় ১৫ হাজার টাকা মুল্যে নবজাতক কন্যা সন্তানটি কিনতে যান সাচিবুনিয়া এলাকার চা বিক্রেতা মো: মজনুর রহমান ও লাজলী খাতুন দম্পত্তি। এসময় তারা র‌্যাবের হাতে আটন হন।

এদিকে শিশু কিনতে আসা চা বিক্রেতা মো: মজনুর রহমান ও লাজলী খাতুন বলেন, আমাদের বিয়ে হয়েছে ১২ বছর যাবত। কোন সন্তান না থাকায় পাশের বাসার চাচি তাদের বলেছিলেন সুন্দরবন ক্লিনিকে একটি বাচ্চা পাওয়া যাবে। সিজারের খরচ বাবদ ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে। তাই তারা বাচ্চা নিতে ১শ’ টাকার তিনটি স্টাম্প নিয়ে এসেছেন। 

২০১২ সাল থেকে সুন্দরবন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি। ক্লিনিকটিতে অন্তত ২৪জন স্বনামধন্য চিকিৎসকের নাম সাইনবোর্ডে ব্যবহার করা হয়েছে, যারা কেউ এখানে রোগী দেখেন না। চিকিৎসাশাস্ত্রের বৈধ ডিগ্রি না থাকা স্বত্তেও তুষার কান্তি মন্ডল (টি.কে মন্ডল) নামের এই ব্যক্তি নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিতেন, শুধু তাই নয়- তিনি মেজর অপারেশনও করতেন।

ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে কয়েকজন নারী ও শিশু মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। অস্বাস্থ্যকর জিঞ্জির পরিবেশের এ ক্লিনিকটিতে কোন নার্স, ওয়ার্ডবয় বা টেকনিক্যাল হ্যান্ডস্ নেই। এমনকি অন্য কোন চিকিৎসকও আসতেন না এখানে। তাই দ্রুত ক্লিনিক খালি করার নির্দেশ দিয়েছে সিভিল সার্জন অফিস।

র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল রওশনুল ফিরোজ শনিবার এক প্রেস কনফারেন্সে বলেন, সুন্দরবন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রায়শই অবৈধ বাচ্চা ক্রয়-বিক্রয় ছাড়া নানাবিধ অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। 

পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ রেজিস্ট্রেশনকৃত সুন্দরবন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেজিষ্টাড ডাক্তার কিংবা প্রশিক্ষিত নার্স করো উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কথিত ডাক্তার মেডিকেল এ্যাসিসটেন্ট হয়েও রোগী দেখা থাকে শুরু করে সিজারিয়ান অপারেশন পরিচালনা করত। 

গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে সকল অপকর্মের তথ্য-প্রমাণসহ সুন্দরবন ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করে এবং সন্তান বিক্রি করার সময় একজন নবজাতক উদ্ধার পূর্বক উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত সকল অপরাধীকে আটক করতে সক্ষম হয়। এসময় ১০ জনকে আটক করা হয়। 

তারা হলেন, তুষার কান্তি মন্ডল(৪৫), বেবী চন্দন(৩২), মোঃ সোহরাব হাওলাদার(৬৫), তামান্না(২৬), মোঃ মজনুর রহমান(৪৫),  মোঃ মহিদুল ইসলাম(২৭), মোঃ শামীম হোসেন(১৮), মোছাঃ লাজলী খাতুন(৩০), মোছাঃ লাকী আক্তার(৪৮), মোছাঃ হোসনে আরা বেগম(৪৫)।

আমারসংবাদ/এআই