Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

মির্জাগঞ্জে প্রথমবার অফ-সিজন তরমুজ চাষে কৃষকদের সাফল্য

কামরুজ্জামান বাঁধন, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী): 

জুলাই ৩০, ২০২১, ১০:১৫ এএম


মির্জাগঞ্জে প্রথমবার অফ-সিজন তরমুজ চাষে কৃষকদের সাফল্য

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের কিসমত ছৈলাবুনিয়া গ্রামে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও প্রথমবার অফ-সিজন তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক সমির অধিকারী। মাত্র ২৫ শতাংশ জমিতে উচ্চমূল্যের অফ-সিজন তরমুজ চাষ করেছেন তিনি। 

চলতি ভরা বর্ষামৌসুমেও তার মাচায় ঝুলছে ছোট-বড় অনেক তরমুজ। এই তরমুজের স্বাদও বেশ ভালো। অসময়ে তরমুজের বাম্পার ফলনসহ লাভজনক হওয়ায় এলাকার অনেক কৃষক এ তরমুজ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের কিসমত ছৈলাবুনিয়া গ্রামের কৃষকরা বিভিন্ন সবজি চাষ করতো। সেই সবজির পাশাপাশি পুকুর পাড়ের চারপাশে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে মির্জাগঞ্জে এই প্রথম এসএসিপি প্রকল্পের অর্থায়নে সমির অধিকারীসহ ৩ জন দক্ষ কৃষকের মাধ্যমে সুস্বাদু উচ্চমূল্যের অফ সিজন এ তরমুজ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন।

প্রথমবার এই তিন কৃষক উচ্চমূল্যের অফ-সিজন তরমুজ চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। ফলে অসময়ে তরমুজ চাষের জনপ্রিয়তা বাড়বে এমনটাই আশা কৃষি বিভাগের। সারা বছরই এখন চাষ হবে উচ্চমূল্যের অফসিজন তরমুজ। এসব তরমুজ দেখতে গাঢ় সবুজ এবং ভেতরে লাল আবার হলুদ রংয়ের হয়ে থাকে। খেতেও বেশ সুস্বাদু। বর্ষাকালেও তরমুজের ভালো দাম পাওয়ার আশা কৃষকদের। এক সময় বছরে তিন মাস বাজারে তরমুজ পাওয়া গেলেও এখন মিলবে সারাবছরই।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো.আরাফাত হোসেনের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় বীজগুলো সংগ্রহ করে কৃষকদের বিনামূল্যে দিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদানসহ সকল প্রকার সহযোগিতা করে যাচ্ছেন চাষিদের। 

কিসমত ছৈলাবুনিয়া গ্রামে গিয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- কৃষক সমির অধিকারী নিজ ক্ষেতে তরমুজ পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত কাটাচ্ছেন। তরমুজের মাচার নিচে সারি সারি তরমুজ শোভা পাচ্ছে। রোগ-বালাই মুক্ত রাখতে তরমুজ বাগানে বসানো হয়েছে ফাঁদ। এতে পোঁকা মাকরের হাত থেকে তরমুজ রক্ষা পাবে।

একই এলাকার আরেক চাষি মিঠুন বলেন, ৫০ শতাংশ জমিতে উচ্চমূল্যের অফ-সিজন তরমুজ চাষ করেছি কৃষি বিভাগের সহযোগীতায়। এটি অতি উচ্চ মূল্য অফ-সিজন তরমুজ, রোপণকৃত গাছ গুলোতে তরমুজ ধরতে শুরু করেছে। আশা করি ১০-১৫ দিনের মাথায় বাজারজাত করতে পারবো। তরমুজ চাষে যে টাকা ব্যয় হয়েছে, তার চেয়ে দ্বিগুণ টাকা লাভ হবে। অল্প সময়ে ভালো ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজারে তরমুজের দামও বেশ ভালো পাওয়া যাবে। প্রতি পিস ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করা যাবে। অসময়ে বাজারে তরমুজের চাহিদাও রয়েছে। এসব তরমুজ বাজারে তুলতে হয় না। বাগানে এসে পাইকাররা কিনে নিয়ে যাবে। ফলে বাড়তি খরচও লাগছে না তাদের। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আরাফাত হোসেন জানান, মির্জাগঞ্জে প্রথমবার অফ-সিজন এই তরমুজের চাষ হয়েছে। তরমুজ বর্তমান সময়ে এ অঞ্চলের চাষিদের লাভজনক ব্যবসা। কৃষকদের বাড়ি তরমুজ -১ ও ২, ছিয়াথাই বীজ কোম্পানির, এফওয়ান হাইব্রীড বীজ ময়না, ব্লাক বেবি, বারোমাসি হাইব্রীড তরমুজ কানিয়া (যার ভিতরে একেবারে হলুদ), হাইব্রীড রক মেলন, বারোমাসি হাইব্রীড মিলন রিয়া জাতের তরমুজের বীজ কৃষকদের বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। এ সব উন্নত জাতের বীজ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে কৃষকদের অফ সিজন তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করা এবং কৃষকরা চাষ করে সফলও হয়েছেন। তরমুজ একটি অর্থকরী ফসল। তরমুজ ভিটামিন ও খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ। অর্থনৈতিক ভাবে বেকার যুবক ও কৃষককে স্বাবলম্বী করে তুলতে তরমুজ চাষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তরমুজের ভালো ফলন দেখে আগামীতে অফ সিজনের তরমুজ চাষ আরও বাড়বে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

আমারসংবাদ/এমএস