লালমনিরহাট প্রতিনিধি
আগস্ট ৩, ২০২১, ০৮:০৫ এএম
বোয়াসিনকে একদিন জোর করে ধরিয়া হুরাহুরি করি এ্যাও কইরবার ধরছে (যৌন নির্যাতন)। উয়ার টাকা ম্যালা, সবায় খালি ওর টাকায় খায় কিন্তু বিচার হয় না। হামরা সুমন্তের বিচার চাই।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নে রথিপুর কুঠির পাড় এলাকায় গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করছে সুমন্ত চন্দ্র বর্মণ নামে ৫৫ বছরের এক বৃদ্ধের উপর।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন সুবিচার না পেয়ে সোমাবার (২ আগস্ট) দুপুরে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানার সুবিচার পাওয়ার আশায় একটি অভিযোগ দেয় ভুক্তভোগীর পরিবার। পরে স্থানীয় শেখ রাসেল স্মৃতি সৌধে সুমন্তের বিচার চেয়ে ঘণ্টাব্যাপী মৌন সমাবেশ করে চলে যান কয়েকজন ভূক্তভোগী ও তার পরিবার।
অভিযোগে জানা যায়, একের পর এক যৌন নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার রতিপুর গ্রামের ৫৫ বছরের বৃদ্ধ সুমন্ত চন্দ্র বর্মন। এলাকায় একা একা ঘরে থাকতে ভয় পাচ্ছেন সাধারণ নারীরা। কখন যে সুমন্ত কার ঘরে প্রবেশ করে যৌন নির্যাতন চালায় তার কোন হিসেব নেই। ভাবী, ভাগ্নি, জ্যাটাই, খুড়া, মাসি, ভাশুর বোয়াসিনসহ এলাকার বিভিন্ন বয়সের নারীদের ঘরে প্রবেশ করে বিভিন্ন ভাবে শারীরিক যৌন নির্যাতন চালায় এ সুমন্ত। এতে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়ের রতিপুর গ্রামের নারী পুরুষসহ সাধারন মানুষেরা।
অভিযোগ ও এলাকাবাসী আরও জানায়, গোকুন্ডা ইউনিয়নের রতিপুর কুটির পাড় এলাকার উজ্জল চন্দ্রের স্ত্রীকে ধর্ষন চেষ্টার শীকার গৃহবধূ আলো মতি (২৬)। গত ২২ জুন তার মাসীর শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য নিজ বাড়ি থেকে তার বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন আলো মতি। এ সময় বিকেল গৃহবধূ আলো মতি তার সাজগোজে ব্যস্ত থাকায় ওই এলাকার মৃত যতিন্দ্র চন্দ্রের ছেলে সুমন্ত চন্দ্র রায় আলো মতির ঘরে প্রবেশ করে পেছন থেকে জাপটে ধরে জোর পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। এতে গৃহবধূ আলো মতি নিজেকে রক্ষায় চিল্লা চিল্লি করলে তার শাশুড়ী ও প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে গৃহবধূ আলো মতিকে উদ্ধার করে। পরে সুমন্ত চন্দ্র পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার সম্মানহানীর ভয়ে প্রথমে মুখ খুলতে রাজি না হলেও পরে বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় ভাবে আপোষ মিমাংশার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে গত ১৩ জুলাই বুধবার লালমনিরহাট সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। পরবর্তীতে গত ১৮ জুলাই মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন সংশোধন আইন ২০২০ এর ৯(৪) (খ) ধারায় ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার অপরাধে লালমনিরহাট সদর থানা রেকর্ড করেন।
এ সময় ভুক্তভোগী গৃহবধূ ও তার পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, এতদিন সম্মানের ভয়ে চুপ ছিলাম তবে আর না। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ সময় স্থানীরা বলেন, এই ধর্ষণ চেষ্টা কারী সুমন্ত এর আগেও এমন অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে। এর সঠিক বিচার হওয়ায় দরকার।
এ সময় উপস্থিত রথিপুর এলাকার দেবেস্বরের স্ত্রী সন্ধ্যা রানী বলেন, সুমন্ত আমার স্বামীর পরিচিত ও ভাসুর হওয়ায় আমার বাড়িতে যাওয়া আসা করত। আমি গোসল করছিলাম সে সময় সুমন্ত এসে আমার গোসল করা দেখে এবং কুনজরে তাকিয়ে থাকে। স্বামী বাড়িতে থাকায় তেমন কিছু করতে পারেনি। এই সুমন্ত প্রায় প্রতিদিন একটা না একটা বাড়িতে ঢুকে আর মহিলাদের মধ্যে যাকে পায় তার উপরই যৌন নির্যাতন করে বেড়ায়।
একই এলাকার রনজিৎ চন্দ্রের স্ত্রী শেফালী রানী বলেন, সুমন্ত একদিন আমার ঘরে হঠাৎ প্রবেশ করে। ঐ সময় বাড়িতে শাশুড়ী ছাড়া আর কেউ ছিলো না। আমি ঘরের বাহিরে ছিলাম হঠাৎ ঘরে ঢুকে দেখি সুমন্ত বসে আছে এবং কুনজরে আমার দিকে দেখছে। পরে আমাকে জাপটে ধরার চেষ্টা করলে ভয়ে আমি সেখান থেকে সটকে পড়ি। এই সুমন্ত বুড়া হলেও খারাপ প্রকৃতির। আজকে একজনের ঘরে ঢুকে তো কালকে আর একজনের ঘরে প্রবেশ করে। টাকা থাকায় এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যানরা তার বিচার করে না। পুরো এলাকার মহিলাদের খালি শারীরিক নির্যাতনই করে চলছে। এভাবে খালি শরীরত হাত দেয় আর যৌন নির্যাতন করে সুমন্ত। এতে কি মানুষের সাহস বাড়ে না? সুমন্তর এমন কাজে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। দ্রুত ধর্ষণ চেষ্টাকারী সুমন্তের শাস্তি দাবি করছি।
এ বিষয়ে একই এলাকার সনেকা বেওয়া বলেন, সুমন্তের একজন বোয়াসিনকে একদিন জোর করে ধরিয়া হুরাহুরি করি এ্যাও কইরবার ধরছে যৌন নির্যাতন)। পরে আমাক নেদাই দিয়া ফালায় দিয়া পালে চলি যায় সুমন্ত। বুড়া হইছে এমন বুড়া ছাগল। ভাশুর কি কোন দিন বোয়াসিনক এমন করে? কেমন মানুষ ইয়ার কোন বিচার নাই। উয়ার টাকা ম্যালা সবায় খালি ওর টাকায় খায় কিন্তু বিচার হয় না। হামরা বিচার চাই সুমন্তের।
একই এলাকার বৃদ্ধ মনোরঞ্জন বলেন, সুমন্ত খুব খারাপ। এলাকার মহিলাগুলাক ধরে আর ওগুলা করে। এলাকার মহিলাদের উপর অত্যাচার করে। হামরা সুমন্তের বিচার চাই। এলাকার মানুষও কোন বিচার করে না। থানাত মামলা হইছে পুলিশও যায় না। তারে জন্য হামরা আজ সোমবার এসপির কাছত আচ্চি।
একই এলাকার আরও এক বৃদ্ধ সুবল চন্দ্র বলেন, এই সুমন এলাকার আরও প্রায় বহু মহিলার ক্ষতি করছে। প্রায় একটার পর একটা মহিলার ঘরত ঢোকে আর ক্ষতি করে। ওমার টাকা পয়সা আছে। ওমার কাও বিচার করে না। এলাকাবাসীক বিচার দিছি তার হল না। শেষ পর্যন্ত থানাত বিচার দিলাম থানাও এখন পর্যন্ত গেল না।
আরেক এলাকাবাসী বিষ্ণু পদো জানায়, এলাকায় সুমন্ত আরও অনেক ঘটনা ঘটাইছে। বার বার ঘটছে এমন ঘটনা। কেউ কাকি কেউ বোয়াসিন। কেউ স্বরম লজ্জায় বলে আবার কেউ বলে না। আমরা গরীব হতে পারি এজন্য কি কোন আমরা কোন ফল পাব না? এলাকাবাসী অতিষ্ট তার এ কর্মকাণ্ডে। এলাকায় যখন বিচার হল তাই আমরা থানায় মামলা দিছি কিন্তু কোন বিচার পাইলাম না। দেখি যে দেশে বিচার নাই। আবার বাদীর এর মধ্যে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এ জন্য আজ এসপি স্যারের কাছে আসনো দেখি ওনি কি করেন বিচার আছে কি না। ওনাকেও একটা অভিযোগ দিলাম সুবিচার পাওয়ার আসায়।
এলাকার ৭০ বছরের এক বৃদ্ধা বলেন, ভাসতা বউ, বোয়াসিন, কাকি ও খুড়া কিছুই না মানে। সবাকে খালি বোলায় সুমন্ত। সবারে গায়ে হাত দেয়। দেশত কি বিচার নাই। হামরা বিচার চাই। ওটা ভাল নোমায়। ছাগল ওটা ওটা বুড়া ছাগল।
আমারসংবাদ/কেএস