Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে খাবার নিয়ে পুকুর চুরি

আগস্ট ৪, ২০২১, ০৬:১৫ এএম


কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে খাবার নিয়ে পুকুর চুরি

কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের খাবার নিয়েও চলছে ব্যাপক দুর্নীতি। সংসদ সদস্যের নির্দেশও এই হাসপাতালে মানা হচ্ছে না। রোগীদের দ্রুত সুস্থ করে তোলার জন্য হাসপাতালে উন্নতমানের খাবার পরিবেশ করার কথা থাকলেও সেখানে বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেকই চলে যাচ্ছে ঠিকাদার ও হাসপাতাল কর্মকর্তাদের পকেটে। দেখার কেউ নেই। এই অবস্থা চলছে দীর্ঘদিন ধরে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনা ডেডিকেটেড রোগীর দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় দেখা যায় দুপুর ও রাতের খাবারের ঝোলে ডুবে থাকা মুরগির দুটি ছোট পিস। সঙ্গে ডিম ও দুধ। সকালের নাশতায় দুই স্লাইস পাউরুটি, একটি করে ডিম ও কলা। 

হিসাব করলে এই খাবারের দাম ১৭০ থেকে ১৮০ টাকার ওপরে না। অথচ প্রতি রোগীর জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৩০০ টাকা। বাকি ১২৫ টাকা চলে যায় ঠিকাদার ও হাসপাতাল কর্মকর্তাদের পকেটে। হাসপাতালের সাধারণ শয্যার রোগীদের জন্য বরাদ্দ জনপ্রতি ১২৫ টাকা। তাদের খাবারের মান আরও খারাপ।

সরেজমিন হাসপাতালের রান্নাঘরে ঘুরে দেখা যায়, দুই জন নারী মুরগি কাটছেন। ৬’শ থেকে ৭’শ গ্রামের প্রতিটি সোনালি মুরগির পিস করা হচ্ছে ১২টি। এক নারী জানালেন, করোনা রোগীদের জন্য প্রতিদিন দুই বেলা মুরগির মাংস দিয়ে খাবার দেওয়া হয়। একজন রোগী দুই পিস মাংস পান, সঙ্গে সবজি ও ডাল। পাশাপাশি তিন বেলা ডিম দেওয়া হয়। সপ্তাহে দু'দিন খাসির মাংস।

বাজারে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকায়। একটি কলা ৫ টাকা ও পাউরুটি ৫ টাকা। এক কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। দুধ প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সেই হিসাবে হাসপাতালে যে খাবার দেওয়া হচ্ছে তাতে একজন রোগীর জন্য তিন বেলায় খরচ পড়ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা।

এদিকে হাসপাতালের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সরকারি খাবারের বাইরে প্রতিদিন স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের উদ্যোগে করোনা রোগীদের ফল, স্যুপ, খেজুর, ডিমসহ কয়েকটি আইটেম দেওয়া হয়। দুর্বল রোগীরা যাতে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেন সে জন্য এমন ব্যবস্থা।

দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে খাবার সরবরাহ করছেন একই ব্যক্তি। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আমিনুর রহমান পল­ব।

হাসপাতালের রান্নাঘরের একজন বাবুর্চি জানান, ওয়ার্ড মাস্টারের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী তারা খাবার সরবরাহ করেন। বাজার করে দেন ওয়ার্ড মাস্টার ও ঠিকাদারের লোকজন। রান্নাঘরে সিসি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে, যাতে কোনো কিছু লোপাট না হয়।

তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, রোগী অনেক সময় বেশি থাকলে খাবার বেশি প্রয়োজন হয়। কম থাকলে ওয়ার্ড মাস্টারদের যোগসাজশে রোগী বাড়িয়ে খাবারের বিল বেশি করা হয়। এতে ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন পান কিছু অসাধু কর্মকর্তা।

এর বাইরে ঠিকাদার যে বাজার করে দেন তাতে প্রতিদিন ৩০০ রোগী পর্যন্ত খেতে পারেন। হাসপাতালের কিছু কর্মচারীর সহযোগিতায় প্রচুর খাবার বাইরে চলে যায়। বিষয়টি ঠিকাদারের লোকজনও জানেন।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল মোমেন বলেন, 'সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ঠিকাদার খাবার সরবরাহ করেন। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। তবে খাবারের মান যাতে আরও বাড়ানো যায় সে চেষ্টা করা হবে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদার আমিনুর রহিম পল­বের সঙ্গে কথা বলতে তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল নম্বরে ফোন দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে হাসপাতালে পল­বের পক্ষে ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করা মিজানুর রহমান মিজান বলেন, 'সরকারি নিয়ম মেনে আমরা খাদ্য সরবরাহ করছি। কর্তৃপক্ষের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী বাজার করে ওয়ার্ড মাস্টারকে বুঝিয়ে দিই। ৩০০ টাকার মধ্যেই আমরা খাবার দিয়ে থাকি। এতে আমাদের খুব বেশি লাভ থাকে না।

আমারসংবাদ/এআই