Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

কম খরচে তারাগঞ্জে পাটের বাম্পার ফলন 

তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি

আগস্ট ৮, ২০২১, ০৭:৩০ এএম


কম খরচে তারাগঞ্জে পাটের বাম্পার ফলন 

ধীরে ধীরে দেশে সোনালী আঁশ পাট সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। কৃষকারাও পাটের ভালো দাম পেয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। পাটের উৎপাদন ও খরচ কম ভালো দাম পেয়েও লোকসানে কৃষক। রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা জমিতে পাট চাষ করে লাভবান হচ্ছে। অপরদিকে পাট ও পাটজাত পণ্য বিদাশে রপ্তানি করে দেশে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্র অর্জনে সক্ষম হবে বলে জনা গেছে। 

সম্প্রতি সরকার সার, চাল, চিনি, সিমেন্ট, ফসলের বীজসহ যে কনো খাদ্য সমগ্রী বাজার জাত করতে পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহারের উপর বাধ্য বাধকতা আরোপ করায় ও সেই সাথে পাট চাষের প্রতি গুরুত্ব দেয়ায় আবারও পাট চাষের উপর ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের এক সময়ের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় শীর্ষে স্থানে ছিল সোনালী আঁশ পাট আবারও তার ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে।

জানা গেছে, রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার আশপাশের এলাকায় এক সময়ে দেশের প্রথম সারির অর্থকারী ফসল সোনালী আঁশে পাটের ব্যাপক আবাদ হতো। এ উপজেলার আশপাশের এলাকায় গ্রামীন জনপদে পাটের চাষ অত্যন্ত ভাল হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় এর ব্যাপক চাহিদা ছিল হাট-বজারে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকার পাট ব্যবসায়ীরা এসে বিভিন্ন মোকাম থেকে পাট ক্রয় করে নিয়ে যেত।

এ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের বাঙ্গালীপুর গ্রামের কৃষক ওসমানগণী জানান, আমি ৯০শতক জমিতে পাট চাষ করেছি। গত বছর প্রতিমণ পাট ৫থেকে ৬হাজার টাকা বাজার দামে বিক্রি করেছি। এ বছর বর্তমান বাজারে পাটের মণ ১৭শ থেকে ১৮শ টাকা মূল্য বাজার থাকলে লোকসানের সম্ভবনা থাকবে। 

একেই এলাকার আনিছুল ইসলাম বলেন, আমি ৭৫শতক জমিতে পাট চাষ করেছি লাভ না হলেও লোকসান হবে না। এক সময়ে এক কথায় এলাকার আশপাশের পাটের ব্যাপক চাহিদা ছিল। এই এলাকার মাটিও পানি পাট চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী এ এলাকার নদী, নালা, খাল বিলের পানিতে জাগ দেয়া পাটের আঁশের রং ভাল হওয়ায় তুলনা মূলক ভাবে এ পাটের চাহিদা বেশী ছিল। অন্যান্য এলাকার পাটের তুলনায় দামও প্রতি মণে ৫০ থেকে ৬৫ টাকা বেশী। বিগত বছর গুলোতে পাট আবাদে সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ, শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে উৎপাদিত পাটের বাজারে দর না পাওয়ায় এবং অন্যান্য ফসলের আবাদ করে পাটের তুলনায় লাভবান হওয়ায় কৃষকেরা পাটের আবাদ ভুলে গিয়েছিল। বিগত বছর গুলোর তুলনায় এ বছর পাটের আবাদ করছে চাষিরা খুশি মনে। দেশের প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার সার, চাল, চিনি, সিমেন্ট, ফসলের বীজসহ যে কনো খাদ্য সমগ্রী বাজার জাত করতে পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহারের উপর বাধ্য বাধকতা আরোপ করায় ও সেই সাথে পাট চাষের প্রতি গুরুত্ব দেয়ায় আবারও এবছর পাট চাষের উপর ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে চলিত পাট মৌসমে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে যাতে চাষিরা উপযুক্ত মূল্য পান, কোন রুপ ফরিয়া দালালদের খপ্পরে পড়ে চাষিদের নাস্থানাবুদ হতে না হয়। 

পাট চাষ সম্পর্কে এ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামের পাট চাষি কৃষক আলতাফ হোসেন জানান, আমি ২০শতক জমিতে পাট চাষ করেছি। পাট খুব ভালো ফলেছে। তবে গত বছরের চেয়ে এবছর বর্তমান বাজার কম চলছে। মৌসমের শুরুর আগেই আগাম বৃষ্টিপাত হওয়ায় জমিতে জো আসার সাথে সাথে পাট বুনানি করেছিলাম। মাটিতে জো থাকায় চারাও ভালো গাজিয়েছে। দীর্ঘ খরার পর পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। গত বছরেও পাট চাষ করে ভাল বাজার দর পেয়েছিলাম। তাই এবারও পাটের আবাদ করেছি। 

এছাড়াও গত বারের তুলনায় এবছর প্রায় জমিতে পাটের আবাদ এবং ফলনও ভাল হয়েছে। জমি চাষ, বীজ, পরিচর্যা, কাটা, পচানো, আশ চড়ানো, শুকানোও বিক্রির জন্য পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। পাট আবাদে কোন বার লাভ হয় আবার কোন বার লোকসানের পাল্লা ভারি হয়। তবে নানা মহল থেকে শোনা যাচ্ছে এবার লোকসান হবে না। পাটের দাম ভালো পাওয়া যাবে।

তারাগঞ্জ উপজেলার বে-সরকারি সংস্থা প্রয়াস চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান, বিগত বছরগুলোত পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পলি ব্যগের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে দেশে পাটের তৈরী ব্যগের চাহিদা কমতে কমতে একেবারে শুন্যের কোঠায় নেমে এসেছিলো। ফলে পাটের তৈরী ব্যাগের ব্যবহার কমে গিয়েছিলো সেই সাথে বিদাশে পাটের রপ্তানি কমে যাওয়ায় পাটের বাজারে ধস নেমেছিলো। কিন্তু এবারে কৃষি দপ্তরের পাটের উপরে নজরদারী থাকায় পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। 

উপজেলা কৃষি অফিসার উর্মি তাবাস্সুম বলেন, ৮৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে পাট চাষিদের বাম্পার ফলনের জন্য কৃষি বিভাগ সার্বিক সহযোগিতা করেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাটের ফলন ভালো হয়েছে। আসা করি এলাকার চাষিরা অন্যান্য ফসলের চেয়ে পাট আবাদে মুনাফা ভলো পাবেন।

আমারসংবাদ/কেএস