Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

অক্সিজেন নিয়ে অসহায়ের পাশে পুলিশ সদস্য সফি

সিলেট প্রতিনিধি 

আগস্ট ১১, ২০২১, ০৯:০৫ এএম


 অক্সিজেন নিয়ে অসহায়ের পাশে পুলিশ সদস্য সফি

করোনার শুরু থেকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আলোচনায় আসেন পুলিশ সদস্য সফি আহমদ। মানবিক নানা কাজে অবদানের জন্য পেয়েছেন পুরস্কার। গত ১১ মার্চ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে সম্মাননা স্মারক। নিজের বেতনের টাকা দিয়ে অসহায় মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এর আগেও সর্বমহলে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। 

এবার অসহায় মানুষকে ফ্রি অক্সিজেন সেবা দিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছেন। সম্প্রতি পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেধে নিয়ে যাওয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) এমন একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সর্বমহলে আবারো ভূয়সী প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। ছবিতে দেখা যায় ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় মোটরসাইকেল যোগে অক্সিজেন সিলিন্ডার পিঠে বেঁধে হাসপাতালের দিকে ছুটছেন সফি। সফি সিলেট মহানগর পুলিশের মিডিয়া এন্ড কমিউনিটি সার্ভিস বিভাগে নায়েক পদে কর্মরত।

অতিমারি করোনায় বিপর্যস্ত সিলেট। লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। মৃত্যু ও শনাক্তে প্রতিদিনই গড়ছে নতুন রেকর্ড। হাসপাতাল রোগীতে ঠাসা। চিকিৎসার জন্য আক্রান্তদের নিয়ে ছোটাছুটি করছেন স্বজনরা। খালি নেই সাধারণ শয্যা। আইসিইউর জন্য হাহাকার। রোগী নিয়ে অসহায় স্বজনরা ছুটছেন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। চাহিদা বাড়ায় অক্সিজেনের চরম সংকট দেখা দিয়েছে সিলেটজুড়ে। 

সংকটকালীন এই সময়ে অসহায়দের বিনামূল্যে অক্সিজেনসেবা দিয়ে যাচ্ছেন নায়েক সফি আহমেদ। অসহায় মানুষের ফোন পেলেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ছুটছেন বাসা-বাড়ি কিংবা হাসপাতালে। নিজের সামর্থ্যরে বাইরে হলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে অসহায় রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। দিনে-রাতে সমান তালে করে যাচ্ছেন মানবিক কাজ।

এ ব্যাপারে সফি আহমদ বলেন, সোমবার (৯ আগস্ট) ডিউটি শেষ করে জেলা পুলিশ লাইনস হাসপাতালে যাই ভ্যাক্সিনেশন ক্যাম্পে। সেখানে অবস্থানকালে একজন রোগীর স্বজন অক্সিজেন সাপোর্ট চান। জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেনের দরকার থাকায় তাৎক্ষণিক কাউকে না পেয়ে অন্য একটি মোটরসাইকেলে কাঁধে সিলিন্ডার বেঁধে দ্রুত সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি রোগীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে ওই রোগীকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেই।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের কাজে মানুষকে সহযোগতিা করেছি। কিন্তু করোনার এই সংকটকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি অক্সিজেন সাপোর্টে। আমার ব্যক্তিগত ১১টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। আরও আটটি সিলিন্ডার কোভিট-১৯ থেকে সুস্থ হওয়া রোগীরা আমাকে দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এ নিয়ে মোট ১৯টি সিলিন্ডার দিয়ে ফ্রি অক্সিজেন সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

সফি আরো বলেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার ক্রয়, রিফিল ও ক্যানোলাসহ মানবিক সহযোগিতায় বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ক্রয় করতে আমার বন্ধু, আত্মীয়স্বজন, পরিচিতজন ও প্রবাসীরা সাহায্য করছেন। কিন্তু এগুলো সঠিকভাবে মেইনটেইন্স করতে পারছি বলে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি। এভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

করোনা আক্রান্ত রোগী ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের জটিল ও মরণ ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের সহযোগিতা করে আসছেন এই পুলিশ সদস্য। এমনকি দেশে করোনা সংক্রমণের পর থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে খাবারও পৌঁছে দিচ্ছেন। পাশে দাড়িয়ে সহযোগিতার পাশাপাশি সাহস যোগাচ্ছেন। নিজের বেতনের টাকা দিয়ে অনেক পরিবারের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন। করোনার ভয় উপেক্ষা করে ছুটে চলছেন অবিরত।

এর আগে মহামারি শুরুর পর নিজের বেতনের টাকা দিয়ে অসহায় ও মধ্যবিত্ত সহস্রাধিক পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থ বিতরণ করে আলোচনায় আসেন মানবিক পুলিশ সদস্য সফি আহমদ। মানবিক কাজের জন্য পুলিশ বিভাগেও বেশ প্রশংসিত তিনি।

আমারসংবাদ/কেএস