Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

মানবতার সেবায় অনন্য দামুড়হুদার ইউএনও দিলারা রহমান

হাবিবুর রহমান হাবীব, দামুড়হুদা

আগস্ট ১৬, ২০২১, ১২:৩৫ পিএম


মানবতার সেবায় অনন্য দামুড়হুদার ইউএনও দিলারা রহমান

রাজনৈতিক নেতা নন, তবুও সততা, কর্মস্পৃহা, দায়িত্বশীলতা আর জনমানুষের প্রতি আন্তরিকতায় এক অনন্য উচ্চতায় নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন চূয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলাবাসীর আইকন উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান। গরীব-দুখি, অসহায় মানুষের আস্থাস্থল ও সাহসিকতার অপর নামও দিলারা রহমান। শুধু তাই নয়- যে কোনো সংকটেও দামুড়হুদা উপজেলার জনমানুষের মুখে সর্বপ্রথম উচ্চারিত হয় তার নাম। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীপল্লীসহ উপজেলার এমন কোনো অজপাড়া গাঁ নেই যেখানে তিনি পা রাখেননি। 

স্থানীয়রা বলছেন, ইচ্ছা ও মানসিকতা থাকলে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়েও যে আমজনতার মাঝে মিশে যাওয়া যায়, কর্মদক্ষতা, সততা, আন্তরিকতা ও সাহসিকতা দিয়ে সেটাই প্রতিনিয়ত প্রমাণ করে চলেছেন তিনি। চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনায় পৌর শহর থেকে গ্রামের অজপাড়া গাঁয়ের মানুষকে সচেতন করতে ও তাদের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতে ছুটে বেড়াচ্ছেন দিলারা রহমান। চলমান করোনা সংকটে উপজেলার অস্বচ্ছল কর্মহীন দশ হাজার মানুষের মাঝে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দিয়েও হয়েছেন ব্যাপক সমাদৃত।  

মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দ্বিতীয় পর্যায়ে ঘর নির্মাণেও দিলারা রহমান পেয়েছেন লেটার মার্কস। ঘর তৈরিতে গুণগত মান অক্ষুন্ন রাখতে সার্বক্ষণিক সরেজমিন তদারকি করে দেখিয়েছেন চমক। কঠোর পরিশ্রম, সততা, আন্তরিকতা ও নির্মাণ সামগ্রী ক্রয়ে সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে ভূমিহীন, গৃহহীন ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের গৃহ নির্মাণ এবং গুণগত মান অক্ষুন্ন রাখতে তদারকির ক্ষেত্রে তার আপোষহীন মনোভাবই তাকে অধিষ্ঠিত করেছে এক অনন্য উচ্চতায়। 

একাধিকরার এসব ঘর নির্মাণ পরিদর্শনে এসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান,  খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) আব্দুর রশিদ ও জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকারও সন্তোষ প্রকাশ করেন।

উপজেলার সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা বাজারে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স সংলগ্ন এলাকার কোটি কোটি টাকা মূল্যের সরকারি সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ ভূমিদস্যুরা নির্মাণ করেছিলেন কাচা-পাকা দোকানঘরসহ একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ ভূমিদস্যুদের কবল থেকে সরকারি সে সম্পত্তিও উদ্ধার করে দিলারা রহমান সাহসীকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যা এলাকারবাসীর কাছে ছিলো আকাশ কুসুম কল্পনা। 

উপজেলার গন্ডি পেরিয়ে গোটা জেলাজুড়ে এ ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। সর্ব মহলে হয়েছেন প্রশংসিতও। আর অবৈধ দখলদারদের কাছে এটা ছিলো যেমন স্মরণকালের সব থেকে বড় পরাজয়। এ ঘটনার পর থেকেই ওই এলাকার প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরাও হয়ে পড়েছে কোণঠাঁসা।

এছাড়া অবৈধভাবে আবাদি জমির উপরিভাগের টপ সয়েলমাটি বালি ও রাতের আধারে ভৈরব নদীর পাড়ের মাটি কেটে প্রভাবশালী একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করে রাতারাতি অর্থশালী বনে যাওয়া সকল ভূমি খেকোদের কাছে ইউএনও দিলারা রহমান যেন এখন সাক্ষাৎ যমদূত। 

এছাড়া দর্শনার কালীদাসপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাগদী পাড়ায় একাধিক বার তাদের মাঝে ছুটে যেয়ে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘর বুঝিয়ে দেন। আর প্রাথমিক পর্যায়ে যারা ঘর পাননি তাদের জন্যও দ্রুত ঘর বরাদ্দের আশ্বাস দেন তিনি। একই সময় এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের জন্যও উপহার দেন ১০টি বাইসাইকেল।  

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারগুলোর শিশু সন্তানদেরকে কোলে নিয়ে নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমানের আবেগঘন পোস্ট উপজেলার গণ্ডি অতিক্রম করে সারাদেশেও ব্যাপক সাড়া ফেলে। দিলারা রহমানের কোলে নীরবের ওই ছবি চিরাচরিত মাতৃপ্রেম বা সন্তানের প্রতি মায়ের প্রকৃত ভালোবাসাই অঙ্কিত হয়েছে বলে বলছেন উপজেলার বাসিন্দারা। 

জয়রামপুরের চৌধুরীপাড়া, নতুন বাস্তপুর, কুড়লগাছী বাজারে অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া চাষী গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থিক ও মানসিকভাবে পাশে থেকে তাদেরকে নতুন ভাবে বাঁচতে শিখিয়েও তিনি পেয়েছেন অসংখ্য মানুষের দোয়া ও প্রশংসা।  

এছাড়া দামুড়হুদার দশমী পাড়ার অগ্নিদগ্ধ শিশু ফারহানাকে বাঁচাতে নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমানের তাৎক্ষণিক ছুটে যাওয়া, চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি আজও মানুষের মুখে মুখে। ঈদুল ফিতরের পূর্বেও অগ্নিদগ্ধ শিশু ফারহানাকে তিনি পৌঁছে দেন ঈদের পোষাক ও খাদ্য সামগ্রী। 

এছাড়া, জয়রামপুরের প্রতিবন্ধী স্বামীর অসহায় স্ত্রী পারভিনা যখন তার ক্ষুদ্র দোকানের পূঁজি হারিয়ে শ্বশুর শাশুড়ী ও সন্তানদের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই দেবদূত হিসেবে উপস্থিত হন ইউএনও দিলারা। দোকানের প্রয়োজনীয় মালামাল তুলে দিয়ে দোকান সাজিয়ে দেন। 

১২ বছর পূর্বে স্বামী পরিত্যাক্তা দামুড়হুদা উপজেলা সদরে দারিদ্রের সাথে সংগ্রাম করে বেচে থাকা ফাতেমা খাতুন এখন বয়সের ভারে নূয়ে পড়ায় প্যাডেল চালিত ভ্যানটি তার পক্ষে আর চালানো সম্ভব হচ্ছিলো না। নিজের কষ্টের কথা বলতে ছুটে যান ইউএনও দিলারার কাছে। ফাতেমার কথা শুনেই ইউএনও তাকে একটি ব্যাটারী চালিত নতুন ভ্যান উপহার দেন। 

যে কাজগুলো এলাকার জনপ্রতিনিধিদের করার কথা সে কাজগুলো প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান করছেন এবং এতে এলাকাবাসীর কাছে ব্যাপক প্রশংসিতও হচ্ছেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতও হয়েছে সর্বমহলে প্রশংসিত। 

গত ৩১ মে ২০২০ এ যোগদানের পর থেকে তার নেতৃত্বে বিভিন্নস্থানে মাদকাসক্ত ও মাদক পাচারকারী, মাদক কারবারি, ভূমি দস্যু, অসাধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে করা হয়েছে জেল জরিমানাও। এ সময় সরকারের অনুকূলে রাজস্ব আদায় হয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। 

তথ্য মতে, এ পর্যন্ত দিলারা রহমানের নির্দেশে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে মোট মামলার সংখ্যা ২২৮টি। দণ্ডিত ব্যক্তির সংখ্যা ২৭৮ জন। সরকারের অনুকূলে দণ্ডিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫০ টাকা। একই সময় কারাদণ্ডে দণ্ডিত আসামির সংখ্যা ৮ জন।  

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান আমার সংবাদকে বলেন, আমার উপরে অর্পিত রাষ্ট্রের সকল আদেশ আমি সততা, স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতার সাথে পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে বর্ধিষ্ণু জনপদ দামুড়হুদা উপজেলাও স্বমহিমায় ছুটে চলেছে বলেই আমি মনে করি।  

আমারসংবাদ/এআই