Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

সখীপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে 'পার্চিং পদ্ধতি'

আমিনুল ইসলাম, সখীপুর (টাঙ্গাইল)

আগস্ট ২৫, ২০২১, ০৬:১০ এএম


সখীপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে 'পার্চিং পদ্ধতি'

পোঁকামাকড় ও রোগবালাই থেকে ফসলকে রক্ষা করা, কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনা ও পরিবেশ সম্মতভাবে ফসল উৎপাদন- এই তিনটি স্লোগান নিয়ে আমন ক্ষেতে 'ডাল পোতা উৎসব' (পার্চিং উৎসব) শুরু হয়েছে।

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের দিয়ে রোপা আমন ক্ষেতে ডালপালা পুঁতার কার্যক্রমের উদ্যোগটি নিয়েছেন স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। 

আর এ কারণে উপজেলার কৃষকের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আমন ক্ষেতের পোকা দমন করার 'পার্চিং পদ্ধতি'। ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ থেকে রোপা আমন ক্ষেত রক্ষায় এ পদ্ধতি একটি কৃষি বান্ধব প্রযুক্তি।

সাধারণত 'লাইভ পার্চিং' ও 'ডেথ পার্চিং' নামের দুই ধরনের পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে থাকে। কৃষকরা এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের অধিক ফলন পেয়ে থাকে। এছাড়া জমিতে কীটনাশক খরচ কম ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পায়।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামগঞ্জের কৃষকদের সবুজ ধান ক্ষেত বাতাসে দুল খাচ্ছে। ক্ষেতের মধ্যে একর প্রতি ১০ থেকে ১২ টি বাঁশের কঞ্চি কিংবা গাছের ডাল পোঁতা রয়েছে। ওই পার্চিংয়ে (খুঁটিতে) ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসছে। সুযোগ বুঝে ধানক্ষেতে থাকা ক্ষতিকর পোকা ওইসব পাখিরা খেয়ে ফেলছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ২৫ টি ব্লকে প্রায় ১৫ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের সম্ভাব্য ধানের লক্ষ্যমাত্রা ৭০ হাজার ৬৯৫ মেট্রিকটন। রোপণকৃত ওইসব ক্ষেতে ক্ষতিকর ঘাঁসফড়িং, পাতা মোড়ানো পোঁকা, চুঙ্গি ও মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। তাই এ সকল পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় বর্তমানে উপজেলায় প্রায় ৬০ ভাগ কৃষক পার্চিং ও আলোক ফাঁদ পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছেন। 

এ বিষয়ে একাধিক কৃষক জানান, পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে অনেকটা কীটনাশকের ব্যবহার কমে গেছে। তাই এ পদ্ধতিটি আমাদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

এ নিয়ে উপজেলার কীর্তনখোলা গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে বলেন, এ বছর আমি ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহার করেছি। এতে খরচ নেই।

হতেয়া গ্রামের কৃষক দানেছ আলী জানান, বাড়ির গাছ থেকে ডাল কেটে ক্ষেতে পুঁতে দিয়েছি। ওই ডালে বসা পাখিরাই ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোঁকা খেয়ে ফেলছে। এতে যেমন ধানগাছের উপকার হচ্ছে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাচ্ছে।

উপজেলার ইছাদিঘী গ্রামের কৃষক দেলোয়ার বলেন, উৎসবের মধ্য দিয়ে আমার এক একর জমির ফসলের ক্ষেতে ১০টি গাছের মরা ডাল পুঁতেছি। কয়েকদিন ধরে ক্ষেতে গিয়ে দেখি ডালে পাখি বসে আছে, আর উড়ে উড়ে পোঁকামাকড় খাচ্ছে। এ দৃশ্য দেখতে আমার ভালো লেগেছে। এটা যদিও আগেও দেখেছি তারপরেও এবার আরও ভালো লেগেছে। কালমেঘা গ্রামের হাসমত আলী ও উপজেলার কালিয়ান পাড়া গ্রামের শাহাদাত হোসেন একই ধরনের মন্তব্য করেন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আনিছুর রহমান আমার সংবাদকে জানান, ধানক্ষেতে গাছের ডাল পুঁতে রাখলে পাখিরা ওই ডালে বসে পোঁকামাকড় খেয়ে ফেলে। ফলে ওই জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয়না। পরিবেশ সম্মতভাবে ফসল উৎপাদন করা যায়। 

তিনি বলেন, কৃষকরা অনেক আগে থেকেই ফসলের ক্ষেতে গাছের ডাল পুঁতে রাখত। বর্তমান কৃষি বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে পোঁকামাকড় থেকে ফসল রক্ষার জন্য ক্ষেতে ডাল পুঁতা পদ্ধতি নতুনভাবে আবিষ্কার করেছেন। কৃষি বিভাগ এ মৌসুমে সখীপুরের কৃষকদের মাঝে এ পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিয়ন্তা বর্মন আমার সংবাদকে বলেন, উপজেলার প্রায় সকল কৃষকদের পার্চিং পদ্ধতির আওতায় আনার জন্য কাজ করছি। পার্চিং পদ্ধতি কৃষকের কৃষি ও পরিবেশ বান্ধব একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিটি কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কোন খরচ ছাড়াই এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্ষেতে পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে পারবে কৃষকরা। 

তিনি বলেন, সখীপুরে এ মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল জাতের ১৫ হাজার ৬৮০  হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়েছে। আমাদের কার্যালয় থেকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে উৎসব করে ফসলের কৃষকদের নিয়ে ক্ষেতে ডালপালা পুঁতার ব্যবস্থা করেছেন। 

তিনি নিজেও এ কার্যক্রমের তদারকি করছেন জানিয়ে বলেন, ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে রাখলে কী উপকার হবে; এনিয়ে সরেজমিন গিয়ে কৃষককে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ বছর এর সুফল পেলে কৃষক প্রতিবছর নিজের উৎসাহে ফসলের ক্ষেতে ডাল পুঁতে রাখবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আমারসংবাদ/এআই