Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

মির্জাগঞ্জ থানার লাশ হস্তান্তর, পুলিশের তদন্ত ও আমার সংবাদ এর অনুসন্ধান 

মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি 

সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১, ০৮:১০ এএম


মির্জাগঞ্জ থানার লাশ হস্তান্তর, পুলিশের তদন্ত ও আমার সংবাদ এর অনুসন্ধান 

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে গত ১১ সেপ্টেম্বর (শনিবার) রাতে অপমৃত্যু মামলার নিহতের লাশ হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্খিত ঘটনার তদন্তে পটুয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ (পিপিএম) এর নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শামীম কুদ্দুছ ভূইয়া সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। 

পরিদর্শনকালে শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে ওই ঘটনার সময়ে প্রত্যক্ষদর্শী, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নিহতের স্বজন সহ সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। 

প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষীর সাক্ষ্য ও আমার সংবাদ এর অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লিখিত সংবাদ এর ভিত্তিতে মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিববুল্লাহ থানার অপমৃত্যু মামলার (মামল নং-১৬ তারিখ- ১১ সেপ্টেম্বর (শনিবার) তদন্তভার প্রদান করেন এসআই সাইফুল ইসলামকে। এস আই সাইফুল ইসলাম মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন ও নিহতের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কথা বলেন। এস আই সাইফুল ইসলাম সার্বিক বিষয়ে ওসি মহিববুল্লাহ ও ওসি (তদন্ত) মোঃ শাহআলমকে অবহিত করলে তারা দ্রুত হাসপাতালে যান এবং নিহতের জখমের স্থানস্হ বিভিন্ন স্থান পরীক্ষা করেন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ তানভীর হাসান নেয়ামতের সাথে কথা বলেন। 

নিহতের দুই স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনরা ওসি মোঃ মহিববুল্লাহকে জানান, নিহত মোঃ আবু জাফর আমড়া গাছ থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এসময় নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ নেয়ার জন্য মৌখিক দাবি জানান। 

তদন্তকারী কর্মকর্তা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ তানভীর হাসান নেয়ামত এর ভাষ্য এবং নিহতের মাথার আঘাত সন্দেহজনক মনে হওয়ায় অধিকতর তদন্ত করা শুরু করলে নিহতের গ্রামের বাড়ি পার্শ্ববর্তী বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা ও স্বজনদের সাথে আসা শফিকুল ইসলাম ইরান নামের বেতাগী উপজেলার একজন সাংবাদিক পরিচয়দানকারী ব্যক্তি তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে উচ্ছৃঙ্খল মূলক আচরণ শুরু করেন ও মৃতের স্বজনদের আবেগ তাড়িত বিষয়কে উস্কে দিয়ে একটি বিব্রতকর পরিবেশ তৈরি করেন। বিব্রতকর পরিস্থিতে হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার উপক্রম হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে লাশ থানায় পাঠানোর উদ্যোগ নিলে শফিকুল ইসলাম ইরানের প্রত্যক্ষ উদ্ধ্যত আচরণ ও উস্কানির কারণে উপস্থিত আত্মীয়-স্বজনরা পুলিশকে লাশ নিতে বাধা প্রদান করেন।

নিহতের লাশ থানায় নিতে বাধা প্রদান করে জোর পূর্বক লাশ বহনকারী অটো গাড়িতে উঠেন নিহতের দুই স্ত্রী। এসময় গাড়ীর গেটে দাঁড়িয়ে থাকা নিহতের ১ম স্ত্রী নাজমা বেগমকে গেটের বাম দিকে সরিয়ে দিয়ে ২য় স্ত্রী হাওয়া বেগমকে গাড়ি থেকে হাত ধরে নামিয়ে দিলে “মহিলাদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে” এমন অভিযোগ তুলে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে এসআই সাইফুলকে মারধর করার জন্য নির্দেশ দেন শফিকুল ইসলাম ইরান। ইতোমধ্যেই যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই ঘটনার ভিডিওতে স্পষ্ট শোনা যায়। 

এছাড়াও পুলিশকে দেখে নেওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার হুমকি দিতে থাকেন যার ভিডিও ফুটেজ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। এ সময় নিহতের কয়েকজন স্বজন বিক্ষুদ্ধ হয়ে পুলিশের উপর হামলা করতে উদ্যত হয়। 

তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাইফুল ইসলাম ও সাথে থাকা পুলিমের অন্যান্য সদস্যরা উদ্ভুদ পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টাকালে বিক্ষুদ্ধ স্বজনরা পুলিশের কাছ থেকে জোর করে লাশ নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ির দিকে রওয়ানা হন। তখন তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ হেফাজত থেকে জোর করে লাশ নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মহিববুল্লাহকে অবহিত করলে তিনি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তাৎক্ষণিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে লাশ না পেয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে ঘটনাস্থল (হাসপাতাল) থেকে আধা কিলোমিটার পশ্চিমে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে (পশুহাসপাতাল) সীমানা প্রাচীরের কাছে পৌঁছে লাশ ও স্বজনদের গতিরোধ করেন। নিহতের আত্মীয়-স্বজনদের আইনগত বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং সকলকে আইনসঙ্গতভাবে কথা বলা এবং কাজ করার পরামর্শ দিয়ে লাশ নিয়ে থানায় আসতে চাইলে স্বজনরা থানায় যেতে অস্বীকৃতি জনিয়ে হৈচৈ শুরু করেন। এ সময় নিহতের স্বজনদের ইচ্ছা অনুযায়ী লাশ নিয়ে হাসপাতালে যান অফিসার ইনচার্জ মো. মহিববুল্লাহ।

ওসি মহিববুল্লাহ ঘটনায় বিষয় বেতাগী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু’র সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেন, প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তির সাক্ষ্যগ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে পরিস্থিতি শান্ত করেন ও সকলের দেওয়া তথ্যে “আমড়া গাছ থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু’র বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে স্বজনদের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করে ময়নাতদন্ত ব্যতীত আইনগত সকল প্রক্রিয়া শেষে হোসনাবাদ ইউনিয়নের জলিসা গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মাসুদ ও নিহতের প্রথম স্ত্রী নাজমা বেগমের বড়ভাই মো. শহিদুল ইসলাম এবং দুই স্ত্রীর নিকট মরদেহ হস্তান্তর করেন। 

উল্লেখ্য, নিহতের স্বজনদের অভিযোগ তাদেরকে মারধর ও তাদের কাছে ঘুষ দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী ও সাক্ষিদের সাক্ষ্য প্রমানে তাদের অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রকাশ থাকে যে হাসপাতালে নিহতের মরদেহ পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শুরু থেকে লাশ হস্তান্তর পর্যন্ত এ প্রতিবেদক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

আমার সংবাদ’র অনুসন্ধান ও অভিজ্ঞ মহলের ধারণা মির্জাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মহিববুল্লাহ মানবিক কাজসহ সরকারের প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একটি মহল অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আমারসংবাদ/কেএস