Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে বিষখালীর কোল ঘেঁষা ‘ছৈলারচর’

জহির খান, বরিশাল

সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১, ০২:২৫ পিএম


পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে বিষখালীর কোল ঘেঁষা ‘ছৈলারচর’

ছৈলারচর একটি জায়গার নাম। এটি বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলার অর্ন্তভুক্ত। বিষখালী নদীর তীর লাগোয়া দীর্ঘ ৪১ একরের অধিক জমি নিয়ে জেগে ওঠা বিশাল চরই হচ্ছে ছৈলারচর। এখানে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মেছে প্রায় লক্ষাধিক ছৈলা গাছ। আর এই গাছের নাম থেকেই জেগে ওঠা চরের নামকরণ করা হয়েছে ছৈলারচর। 

ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের মতো প্রকৃতির নৈসর্গে সাজানো নয়নাভিরাম ছৈলারচর দিন দিন পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। তাই লকডাউন শিথিলের পর থেকে প্রতিদিনই দেশের দূর-দূরান্তের পর্যটকদের ছৈলারচরে ভিড় বেড়ে চলেছে। 

এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ছৈলারচরে প্রবেশের আগে নির্মাণ করা হয়েছে ডিসি ইকোপার্ক। যা ইতোমধ্যে পর্যটকদের আরও আকৃষ্ট করেছে। 

সম্প্রতি ছৈলারচরে যাতায়াতের জন্য সেতু ও গোলঘর নির্মাণ করা হয়। গত ১১ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ওই সেতু ও গোলঘর উদ্বোধন করেছেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাইফুল হাসান বাদল। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিষখালির তীরে জেগে ওঠা ছৈলারচরে লাখো ছৈলা গাছে নীড় বেঁধেছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আর মৌমাছি। পুরো চরজুড়ে বিচিত্র রকমের পাখির কলকাকলি পর্যটকদের মন ছুঁয়ে যায়। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ছৈলার চরের বৃহত এলাকা এখন তলিয়ে রয়েছে। 

ছৈলা গাছ ছাড়াও কেয়া, হোগল, রানা, এলি, মাদার, আরগুজিসহ বিভিন্ন প্রজাতের গাছকে ঘিরে অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র ছৈলারচর। পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে ছৈলারচরে নির্মাণ করা হয়েছে সু-বিশাল সেতু, একাধিক গোল ঘর, ওয়াশ রুম, বিশুদ্ধ পানির জন্য গভীর নলকূপ, শিশুদের জন্য খেলনা সামগ্রী ইত্যাদি। শেষ পর্যায়ে রয়েছে রেস্ট হাউজ নির্মাণের কাজ।

অপরদিকে ছৈলারচরের প্রবেশের আগেই প্রায় পাঁচ একর জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ডিসি ইকোপার্ক। কাঠালিয়ায় এই প্রথম একটি আধুনিক পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় এক একর জমিতে খনন করা হয়েছে ডিসি লেক আর লেকের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে সু-বিশাল সেতু ও গোলঘর। 

এছাড়া এখানে দেশি ও বিদেশী পর্যটকদের রাতযাপনের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন কটেজ। লেকজুড়ে তৈরি করা হবে সেতু, লেকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য থাকবে আধুনিক জলযান, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে থাকবে মিনি চিড়িয়াখানা আর ছোটদের জন্য কিডস জোন।

অতিসম্প্রতি ছৈলারচরে স্ব-পরিবারে ঘুরতে আসা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব কামাল হোসেন ও তার সহধর্মীনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৪ গুলশান আরা বেগম বলেন, এখানে বেড়াতে এসে দীর্ঘদিন পর প্রকৃতির সাধ পেলাম। এতো মনোরম পরিবেশে পর্যটনের জন্য এর চেয়ে আর ভালো স্থান হয় না। 

এটা পর্যটন আয়ের উৎস হতে পারে বলে উল্লেখ করে তারা আরও বলেন, ভবিষ্যতে এ পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে প্রচুর বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হতে পারে।

পর্যটক ইসরাত জাহান মিম বলেন, পাশ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য যেতে হয় জেলা শহরের বাহিরে। ছৈলারচরের পাশাপাশি ডিসি ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা পেলে পাল্টে যাবে এখানকার চিত্র। পার্কটি চালু হলে বৃদ্ধি পাবে রাজস্ব আয়।

স্থানীয় সংবাদকর্মী মোছাদ্দেক হাওলাদার বলেন, বিশখালী নদীর বুক চিরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ছৈলারচরে বিগত ৭ বছর ধরে প্রকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য গাছপালা। যা পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়েছে। প্রতিদিন পর্যটকদের ভীড়ে মুখরিত থাকে এই স্থানটি। দূর-দূরান্ত থেকে এখানে প্রতিদিন তিন থেকে চারটি পিকনিকের দল আসে। সরকারের সঠিক পৃষ্টপোষকতা পেলে দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে ছৈলারচর হতে পারে অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমাদুল হক মনির বলেন, ছৈলারচর পর্যটন সম্ভাবনার হাতছানি। পর্যটনকে বিকশিত করার পাশাপাশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নানামুখী প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। তাই এখানে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা তৈরি করতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন থেকে পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে আবেদন করা হয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ছৈলারচর হতে পারে একটি আধুনিক ও আর্ন্তজাতিকমানের পর্যটন কেন্দ্র।

ছৈলারচরের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে দিন-রাত কাজ করা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুফল চন্দ্র গোলদার বলেন, ২০১৪ সালে ছৈলারচরকে পর্যটন স্পট হিসেবে চি‎হ্নিত করেছে উপজেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে ট্যুরিজম বোর্ড ছৈলারচর উন্নয়নের জন্য কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। যা বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ প্রকল্পটি অনুমোদনের পর বাস্তবায়ন করা হলে ছৈলার চরটি হতে পারে দক্ষিণাঞ্চলে মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র।

পর্যটন ক্ষেত্রে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে ছৈলারচরকে গড়ে তোলা হবে জানিয়ে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাইফুল হাসান বাদল বলেন, ‘পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় ছৈলারচরকে ঘিরে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ইতোমধ্যে এখানে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা তৈরি করা হয়েছে। 

[media type="image" fid="142039" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

এছাড়া ট্যুরিজম বোর্ড থেকে ছৈলারচর উন্নয়নের জন্য প্রস্তাব করা কোটি টাকার প্রকল্প মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের পর বাস্তবায়িত হলে ছৈলারচরটি দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি পাবে। তাছাড়া প্রকৃতিতে সাজানো ছৈলারচরের পরিচিতি শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটিকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করা হবে।’ 

আমারসংবাদ/এআই