Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

মাদককে জিরো টলারেন্স দেখাতে চান পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান টিটু

এম এ হান্নান, পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ)

সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১, ০৭:১৫ এএম


মাদককে জিরো টলারেন্স দেখাতে চান পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান টিটু

পাকুন্দিয়া উপজেলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুলেরঘাট উপশহর। এখানে কিশোরগঞ্জ ইকোনমিক জোন হওয়াতে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে পুলেরঘাট। এই পুলেরঘাট এলাকায় জণবসতি বেড়ে উঠায় অপরাধীদের বিচরণও বাড়ছে। অন্যান্য কিশোরগঞ্জ সদর কটিয়াদী পাকুন্দিয়া তিনটি থানার পাচঁটি ইউনিয়ন সীমান্ত এলাকা আয়তনে ও জনসংখ্যায় বড় হলে এলাকার নিরাপত্তা ও মাদকের জন্য পুলেরঘাট গুরুত্বপূর্ণ। 

এমন একটি আহুতিয়া তদন্ত কেন্দ্রে গত জুন মাসে নতুন পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে যোগদান করেছেন মো: আসাদুজ্জামান টিটু। তিনি আসা মাত্রই নড়েচড়ে বসেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। কারণ মাদকের বিরুদ্ধে এক রকম জেহাদ ঘোষণা করেছেন তদন্ত কেন্দ্রর ওই পরিদর্শক। পুরান ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় দায়িত্ব শেষে তিনি আহুতিয়া তদন্ত কেন্দ্র পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন। 

এর আগে তিনি মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) সহ বিভিন্ন জেলা পুলিশের ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন। মাদককে জিরো টলারেন্স দেখানোর জন্য নিয়মিত অভিযান শুরু করেছেন। এজন্য স্থানীয়দের কাছ থেকে সহযোগিতামূলক সমর্থনও পেয়েছেন তিনি। 

সম্প্রতি আমার সংবাদের সঙ্গে পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান টিটু একান্ত আলাপচারিতা হয়েছে। পাঠকদের উদ্দেশ্যে এর চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-

আমার সংবাদ: কেমন আছেন আপনি?

আসাদুজ্জামান টিটু: জ্বি আমি ভালো আছি। মিডিয়ায় আমাদের ভালো কাজের খবর কমই আসে। দেখি আপনার মাধ্যমে আমাদের কিছু অর্জন মিডিয়াতে আসে। যেখানে অপরাধীদের বিচরণ ও জন সাধারণের চলাফেরায় সাংঘাতিক ঝুঁকিপূর্ণ। আর এখানে ইকোনমিক জোন কাযর্কম চলমান  ও সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক এনজিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জনবসতিও বাড়ছে। সে কারণে ক্রমশই পুলেরঘাট গুরুত্ব বাড়ছে।

আমার সংবাদ: এই এলাকায় কি কি ধরণের অপরাধ হয়? 
আসাদুজ্জামান টিটু :
এখানে প্রধান সমস্যা মাদক ও যানজট। মাদকের কারণে এখানকার উঠতি যুবকরা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছিল। এছাড়া বড় কোনো ডাকাতি বা চুরির ঘটনা নেই বললেই চলে। তবে মহাসড়কে ছোট খাটো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। 

আমার সংবাদ: মাদক নিয়ন্ত্রণে আপনি কি ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছেন?  
আসাদুজ্জামান টিটু :
আমার প্রধান চ্যালেঞ্জ মাদক ব্যবসা, মাদক ও যানজট মুক্ত পুলেরঘাট উপহার দেয়া। বলতে পারেন ভুক্তভোগী জনসাধারণকে সাথে নিয়ে মাদক, যানজট সহ বিভিন্ন অপরাধের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান। এতে করে অবৈধ সুবিধা ভোগী প্রভাবশালী অনেকেই ক্ষুব্ধ। তবে আমি বদ্ধপরিকর। মাদক নিয়ন্ত্রণে আমি নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। নিজে অভিযানে যাচ্ছি। যেখান থেকেই অভিযোগ আসছে, সময়ক্ষেপণ না করে সেখানেই অপারেশন চালাচ্ছি। যদিও রিস্ক থাকে। ইতিপূর্বেও অপরাধের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখতে গিয়ে যেমন পুরস্কৃত হয়েছি তেমনি কঠিন হয়রানি ও অপ্রত্যাশিত বদলির ঘটনারও স্বীকার হয়েছি। আমি বিশ্বাস করি সঠিক লক্ষে অবিচল থাকলে যেখানেই চাকরি করি একই ইউনিফর্মের দায়িত্ব। যেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার শপথ নিয়েছি সেখানে বদলি বা সাময়িক হয়রানীর ভয় তো কিছুই না। তাছাড়া চাকরি থাকলে যেখানেই থাকি পরিচয় একটাই পুলিশ। চেয়ার বা অবস্থানের মায়া আকড়ে ধরে পেশাদারীত্বের সাথে যায় না এমন কিছুর সাথে আপোষ করার কোনো ইচ্ছে নাই। তবে বিগত কয়ে ক'মাসের অভিযানে অনেকটাই কমে এসেছে। যতো দিন যত সময় যেখানে থাকবো মাদক বা অন্যায়ের ব্যাপারে কোনো আপস করবো না।  এছাড়াও এলাকা ভিত্তিক আমাদের মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক টহল দেয়। মোবাইল টিমের মাধ্যমে আমরা সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নজরদারি রাখি। 

আমার সংবাদ : পুলেরঘাট আপনার আহুতিয়া তদন্ত এলাকার অপরাধ মানচিত্র আছে দেখলাম। অপরাধ মানচিত্র অনুযায়ী কোন কোন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ? 
আসাদুজ্জামান টিটু  :
অপরাধ মানচিত্রে বুরুদিয়া বটতলা ও পুলেরঘাট এলাকায় বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।  

আমার সংবাদ: আপনার তদন্ত কেন্দ্রর জনবল, সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?  
আসাদুজ্জামান টিটু  :
পাকুন্দিয়া থানার আহুতিয়া তদন্ত কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ এখানে মামলা ও জিডির পরিমাণে জনবল কমই বলতে পারেন। মাত্র ১৭জন পুলিশ সদস্য এখানে রয়েছে। আমরা পরিকল্পনা করে কাজ করার চেষ্টা করছি। তাতে সফলতাও আসছে। তবে জনবল বাড়ানো দরকার। এখানে আসার পর নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে। আপাতত তেমন কোনো চাপ নেই। আর চাপকে আমি পাত্তাও দেই না। অপরাধী যেই হোক ছাড় পাবে না।

আমার সংবাদ: পুলিশের কর্মকর্তা হিসেবে এই পেশাটিকে কিভাবে মূল্যায়ণ করবেন?  
আসাদুজ্জামান টিটু:
আমার গ্রামে বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া কাউরাট। তদন্ত কেন্দ্রেই থাকি। ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে পড়াশুনা শেষ করে ২০১১ সালে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে পুলিশে যোগদান করি। দেশের সেবায় কাজ করতে পারাটাকে সৌভাগ্যের মনে হয়। আর এই পেশায় থেকে নানা মানুষের সঙ্গে মেশার ও সেবা করার সবচেয়ে বেশি সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় এলাকার জনগণ চাইলে সবাইকে সাথে নিয়ে অপরাধ মুক্ত সমাজ বিনির্মাণ খুবই সহজ একটা বিষয়।