Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

পল্লী বিদ্যুতের অব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৫ জনের মৃত্যু

সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১, ০৩:২০ পিএম


পল্লী বিদ্যুতের অব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৫ জনের মৃত্যু

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বিদ্যুতের পুরনো জরাজীর্ণ খুঁটি বিদ্যুতায়িত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যুর জন্য পল্লী বিদ্যুতের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার শীলমুদ গ্রামের আব্দুর রহিম সুপার মার্কেটের সামনে নিহতদের মৃতদেহ শনিবার সকাল ১০টায় শীলমুদ মধ্যপাড়া মসজিদ প্রাঙ্গণে নামাজে যানাজা শেষে নিহতদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

নিহতরা হলেন- উপজেলার বজরা ইউনিয়নের শীলমুদ গ্রামের চৌকিদার বাড়ির আবুল বাশারের ছেলে আবদুর রহিম, উজির আলীর ছেলে মো.ইউসূফ, আবুল হোসেনের ছেলে মো. সুমন, একই গ্রামের রমজান আলী বাড়ির শহীদ উল্যাহর ছেলে মো. জুয়েল।

নিহতের স্বজনরা বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আব্দুর রহিম সুপার মার্কেটের মালিক আব্দুুর রহিম তাঁর মাকের্টের কোণায় অবস্থিত জরাজীর্ণ বৈদ্যুতিক খুঁটির পাশে দাঁড়ানো ছিল। পাশেই দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন ইউসূফ, সুমন ও জুয়েল। হঠাৎ বিদ্যুতায়িত খুঁটির ওপর একটি গাছের ডাল পড়লে ওই ডাল বিদ্যুতায়িত হয়ে যায়। পরে ওই ডালের সাথে স্পর্শে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয় আব্দুর রহিম। এসময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে ইউসূফ, সুমন ও জুয়েলও বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে পড়ে। পরে ঘটনাস্থলেই চারজনের মৃত্যু হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা শহিদ উল্যাহ, আরমান হোসেন ও মো. সেলিম বলেন, শীলমুদ গ্রামে দীর্ঘ ২০ থেকে ৩৫ বছর পূর্বে পিডিবি বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করে গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করে। গত ১০ থেকে ১২ বছর পূর্বে পিডিবি’র বিদ্যুৎ লাইনটি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড তাদের অধীনে নিয়ে যায়। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড পিডিবি থেকে লাইনটি তাদের অধীনে নিলেও পুরোনো খুঁটি ও ক্যাবল বিহীন তারেই চলছে তাদের সার্ভিস। 

গত দুই বছর যাবৎ ওই ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটিগুলো সরিয়ে নিতে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের অনুরোধ করলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। পল্লী বিদ্যুতের অব্যবস্থাপনার কারণে ক্যাবল বিহীন তারে জরাজীর্ণ খুঁটিটি বিদ্যুতায়িত হয়ে চারজন মানুষের তাজা প্রাণ অকালে ঝরে যায়। এই মৃত্যুর দায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকেই নিতে হবে।

নিহত আব্দুর রহিমের শ্যালক মোরশেদ আলম ও জুয়েলের চাচা মো. খোকন বলেন, পল্লী বিদ্যুতের পুরো কার্যক্রমেই অব্যবস্থাপনা রয়েছে। বহুবার তাদেরকে এই খুঁটিগুলো সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তারা ব্যবসাকেই প্রধান্য দিয়েছে। মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভাবেননি। 

বিদ্যুৎপৃষ্টে নিহতের ঘটনায় মামলা করেছেন কিনা এমন প্রশ্নে তারা বলেন, মামলা করে কি লাভ হবে? এটার কোন রেজাল্ট পাওয়া যাবে না। তাই মামলা-মোকাদ্দমা না করেই লাশ দাফন করেছি। তারা (নিহতরা) তো এমনিই অনেক কষ্ট পেয়েছে। ময়নাতদন্ত করে আর কষ্ট দিতে চাইনি।

বজরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিরনুর রশিদ বলেন, নিহতদের পরিবারের সম্মতিক্রমে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড নোয়াখালীর জেনারেল ম্যানেজার মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, বিদ্যুৎপৃষ্টে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কাশেম সরদারকে প্রধান ও উপ-পরিচালক আবদুল আলিমকে সদস্য করে দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

পল্লী বিদ্যুতের অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত দুই মাস আগে ওই খুঁটিটি সরিয়ে নিতে ঘটনাস্থলে আমাদের ঠিকাদার গেলে নিহত আব্দুর রহিম বাঁধা দেওয়ায় খুঁটিটি সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। 

আশ-পাশের এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটিগুলো সরানো হয়নি কেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেগুলো খুব শীঘ্রই সরিয়ে নেওয়া হবে।

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, নিহতদের মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করা হয়েছে। থানায় এ ব্যাপারে একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

সোনাইমুড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফজলুর রহমান বলেন, আমরা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে নিহতদের তালিকা পাঠিয়েছি। জেলা প্রশাসন থেকে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।

এদিকে জেলার সর্বত্ব পল্লী বিদ্যুতের অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিনিয়তই বিদ্যুৎপৃষ্টে প্রাণহানীসহ দুর্ঘটনা ঘটছে। 

অপরদিকে ১৫ সেপ্টেম্বর বিকালে সদর উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে মফিজ উল্যা নামের এক ব্যক্তি বাড়ির ছাদের ওপর পল্লী বিদ্যুতের হেলে পড়া খুঁটির তারের সাথে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা যান। 

এর আগে ওই হেলে পড়া খুঁটি সরানোর জন্য মফিজ উল্যা স্থানীয় পল্লী বিদ্যুতের অভিযোগ কেন্দ্রে আবেদন করলেও ওই খুঁটি সরানো হয়নি বলে অভিযোগ করেন নিহতের পরিবার।