Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

১৬ বছরেও দূর হয়নি বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তি

মহিব্বুল আরেফিন, রাজশাহী 

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১, ১০:১০ এএম


১৬ বছরেও দূর হয়নি বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তি

বিগত ১৬ বছরেও ভোগান্তি দূর হয়নি ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)সহ সাবসিডিয়ারী রাজশাহী শাখা অফিসের বিনিয়োগকারীদের। যেখানে উপেক্ষিত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় দীর্ঘসময় ধরে একরকম তারা উদাসীন রয়েছেন তারা। প্রত্যেক লেনদেন-এ তাদের কাছে প্রাধান্য পায় মুখচেনা এবং ব্যক্তি কমিশনে ব্যবসা করা বিনিয়োগকারীগণ। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার সরকারী পিএন স্কুলের কাছে গাফ্ফার প্লাজায় ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)সহ তার সাবসিডিয়ারী প্রতিষ্ঠান আইসিএমএল এবং আইএসটিসিএল শেয়ার ব্যবসার ব্রোকার হাউস হিসেবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। 

আর সাবসিডিয়ারী প্রতিষ্ঠান আইএসটিসিএল এর পঞ্চম তলার অফিসে ২০০৫ সালে শেয়ার মার্কেটে অনলাইন ট্রেডিং চালু হয়। এখানে তিনটি প্রতিষ্ঠানের অন্তত ২৫ হাজার বিনিয়োগকারী ৫ম তলায় শেয়ার কেনা-বেচা করেন। 

চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে সূচকের উর্দ্ধগতিতে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে উঠেছে আইএসটিসিএল এর ব্রোকার হাউজ। প্রতিদিন আড়াই থেকে ৩’শ বিনিয়োগকারী উপস্থিত হয়ে ট্রেড করেন। 

গত কয়েক মাসের ব্যাবধানে বিশেষ করে অইিসিবি রাজশাহীর সাবসিডিয়ারী প্রতিষ্ঠান আইএসটিএল এর বিনিয়োগকারীদের উপস্থতি কয়েকগুণ বেড়েছে। বর্তমানে এখানে প্রতিদিন গড়ে ২০ কোটি টাকারও বেশী লেদেন হচ্ছে বলে সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিনিয়োগকারীরা জানান, দীর্ঘ ১১ বছর থেকে কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানটি অন্যত্র স্থানান্তর অথবা লিফট সংযোজনের অনুরোধ করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ লিফ্ট সংযোজন বা স্থানান্তরের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। 

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ,  সিঁড়ি বেয়ে ৫তলায় উঠে ট্রেড করতে হাঁপিয়ে পড়েন অনেক বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ  ও নারী বিনিয়োগকারীরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, সিড়ি বেয়ে ৫তলায় উঠতে বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ  ও নারী প্রচন্ড কষ্ট বোধ করেন। সিঁড়ির মাঝ পথে তারা কিছুক্ষন জিরিয়ে আবারও উপরে উঠতে থাকেন। 

এদিকে গত ২০১০ সালে পত্রিকায় লেখালিখির পর কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। কিন্তু এরপর রহস্য জনক কারনে আর এখানে লিফ্ট সংযোজন বা স্থানান্তর আলোর মুখ দেখেনি। 

এ ব্যাপরে আইএসটিসিএলএর শাখা ব্যাবস্থাপক  মোঃ আহসান ইল্লাহ এই প্রতিবেদককে জানান  এই ভবন থেকে  অন্যত্র স্থানান্তরের  প্রস্তাবনা ঢাকায় প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হছে অনেক আগেই। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে এধরনের সকল র্কাক্রম বন্ধ ছিল। 

এ বিষয়ে আইসিবির শাখা ব্যবস্থাপক ডিজিএম মোতালেব হোসেন জানান, আমরা অন্যত্র লিফ্ট সম্বলিত ভবনে যাবার প্রস্তাবনা গত বছরের করোনার আগেই ঢাকা হেড অফিসে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রনালয়ে করোনাকালীন সময়ের জন্য এধরনের সকল কার্যক্রমের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করেছেন। সেটি এখনো প্রত্যহার করেনি অর্থমন্ত্রণায়। এ কারণে আমাদের স্থানান্তরের কাজটি ঝুলে আছে।

বিনিয়োগকারীরা আরও অভিযোগ করেন, বিশেষত আইসিএমএল এবং আইসিবিতে লেনদেন করতে হলে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ২য় তলা থেকে বাই-সেল আর্ডর অনুমোদন করিয়ে ৫ম তলায় উঠে কেনা-বেচা করতে হয়। 

এছাড়া দ্বিতীয় তলায় সংশ্লিষ্ট অফিসের লোকজনের অসহযোগীতা এবং বিরুপ আচারণ যেন নিত্য নৈমিত্বিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাই-সেল আর্ডর অনুমোদন করিয়ে পঞ্চম তলায় উঠতে উঠতে শেয়ার দাম প্রায়শ আনেক বেড়ে বা কমে যায়। যার কারণে অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থহন বিনিয়োগকারীরা। এদিকে  প্রতিষ্ঠানগুলোর অসহযোগীতা এবং বিরুপ আচারণের কারণে অনেক বিনিয়োগকারী এখানকার হিসাব বন্ধ করে অন্য প্রাইভেট বোকার হাউজে লেনদেন করছেন।

আপ্যায়নে দ্বৈত নীতি বিনিয়োগকারীরা জানান, আইএসটিসিএল এর বিনিয়োগকারীদের আপ্যায়নের জন্য সপ্তাহে একদিন করে একটি আলুর সিঙ্গাড়া বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু এখানকার কর্মকর্তাদের জন্য ডাবল সিঙ্গাড়া সাথে সালাতও থাকে। সম্মানজনকভাবে প্লেটে পরিবেশন করা হয়। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের জন্য হাতেহাতে। বিষয়টি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বয়োবৃদ্ধ বিনিয়োগকারীর অভিযোগ করেন্, নগরীর অন্যান্য ব্রোকার হাউজ-এ নানা উপকরণ দিয়ে প্রতিদিন বিনিয়োগকারীদের মর্যদার সাথে আপ্যায়ন করা হয়। এর মধ্যে সালতা সিকিউরিটিজ ব্রোকারেজ হাউজে কোন বিনিয়োগকারী প্রবেশের সাথে সাথে তাঁর সম্মানে চা পরিবেশন করা হয়। ঘন্টাখানের মধ্যে আবারো চা-বিস্কুট পরিবেশন করা হয়। 

কোন কোন দিন সিঙ্গাড়া, সামুচা, সাথে চা দেওয়া হয় যা কমপক্ষে একজন বিনিয়োগকারীর জন্য ৩০ থেকে ৪০ টাকা খরচ করা হয়। বিনিয়োগকারীদের সাথে সংযত আচারণ এবং তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আইসিবিসহ আইসিএমএল এবং আইএসটিসিএল এর উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। 

আমারসংবাদ/এআই