Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

অর্থের অভাবে ওষুধ কিনতে না পারছেন না বেতারের দোতরা বাদক

সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি

সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১, ০২:২৫ পিএম


অর্থের অভাবে ওষুধ কিনতে না পারছেন না বেতারের দোতরা বাদক

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের ধাপেরহাটের নেপেন্দ্রনাথ সরকার অর্থের অভাবে ওষুধ কিনতে পারছেন না। তিনি গাইবান্ধা জেলার একজন গুণী শিল্পী ও রংপুর আঞ্চলিক বেতার কেন্দ্রের নিয়মিত দোতরা বাদক। 

তাকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক বার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলেও সরকারি বা বেসরকারিভাবে সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেয়নি কেউ। তার এই রোগের দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছে তার পরিবার। তার ওষুধ কেনার জন্য প্রতিদিন ৭৫০ টাকা জোগাড় করতে পারছে না। তাই বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর প্রহর গুণছে সে।

উল্লেখ্য, দরিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত, ১৯৮২ সাল থেকে বাংলাদেশ বেতারের রংপুর অঞ্চলের নিয়মিত দোতারা বাদক সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নেপেন্দ্রনাথ সরকার  আজ অবধি সামান্য সন্মানি ভাতায় সংসার কিংবা চিকিৎসা কোনটাই চলছে না তার। রিউমাটয়েড আত্রাস্টিস(rhiumatoid arthritis)রোগে  গত ২০ বছর থেকে আক্রান্ত নেপেন্দ্রনাথ সরকার।

অর্থের অভাবে বন্ধ রয়েছে ওষুধ কেনা ও চিকিৎসা। চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে তাঁর। ধাপেরহাট ইউনিয়নে হাসান পাড়া গ্রামের  মৃজগাই চন্দ্র সরকারের ছেলে নেপেন্দ্র নাথ সরকার(৬৬)। তার হাতে প্রশিক্ষণ নিয়ে একাধিক শিষ্য বিভিন্ন মিডিয়াতে যন্ত্র শিল্পী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। সাদুল্লাপুরের ধাপের হাট ইউনিয়নের হাসানপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা কৃতি সন্তান একাধিক বাদ্য যন্ত্রে পারদর্শী দেবেন্দ্রনাথ সরকার।

অভাবের সংসারে, পরিবারের সদস্যদের বাঁচাতে, কম বয়সে বেঁচে নিতে হয় কুলির কাজ। মা বাবার তৃতীয় সন্তান সে। ভাইদের মূখে দু -বেলা দুমুঠো অন্ন তুলে দিতে বাবাই জগাই চন্দ্র সরকার সাথে প্রতিনিয়ত চলে জীবন যুদ্ধ।

অবসরে একটু বিনোদনের আশায় কখনো বাবার সাথে কখনো সম বয়সী বন্ধুদের সাথে ঘরোয়া পরিবেশে চলতো বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান গাওয়ার চেষ্টা। কখনো বাবা ছেলে মিলেও চলত আড্ডা। সেখানেই বাবার নিকট বাদ্যযন্ত্রে হাতে খড়ি হলেও হাতে খড়ি হয়নি লেখাপড়ার। অভাবের তাড়নায় সুযোগ হয়নি স্কুলে যাওয়ার। কিন্তু নিরন্তর সাধনায় সকল বাদ্যযন্ত্রের পারদর্শী হয়ে ওঠে দেবেন্দ্রনাথ সরকার।

স্থানীয় গুণীজনদের সহযোগিতায় রংপুর বেতারে ১৯৮১ সালের দিকে অডিশনে দোতরা বাদক হিসেবে অংশগ্রহণ করে নেপেন্দ্রনাথ সরকার। ১৯৮২ সাল থেকেই  রংপুর আঞ্চলিক বেতার কেন্দ্রের নিয়মিত দোতরা বাদক হিসেবে কর্মরত থাকলেও অভাব-অনটন পিছু ছাড়েনি তাঁর। কখন খেয়ে না খেয়ে রাত কাটে তার।মাসে একবার দোতরা বাজিয়ে যে সন্মানি পায়। তা দিয়ে চিকিৎসা দূরের কথা সংসারই চলে না। এখনো কখনো খেয়ে না খেয়ে রাত কাটে বলে জানান তার সহধর্মিণী।

৫ সন্তানের জনক নেপেন্দ্রনাথ সরকার। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তার দুই সন্তান ছেলে আলাদা হলেও দুই ছেলের মাঝেই চলে খাওয়া দাওয়া। নির্দিষ্ট কর্ম না থাকায় করোনা কালে তার দুই ছেলের উপার্জন না থাকায় তারাও মানবতার জীবন যাপন করছে।

রিউমাটয়েড আত্রাস্টিস (rhiumatoid arthritis)সম্পর্কে অবসরপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য পঃপঃ অফিসার ডাঃ মোহাম্মদ মমিনুল হক এমবি বিএস বলেন, আমি নিজেও এই রোগে আক্রান্ত। অতীতে এই রোগের চিকিৎসা ছিলাম না। বর্তমানে এ রোগের চিকিৎসা আছে। তা অনেকটাই ব্যয় বহুল। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বিকালঙ্গ হলে তার আর কিছু করার থাকে না।

তিনি বলেন, নেপেন্দ্র নাথ সরকারের যে অবস্থা তাতে নিয়মিত চিকিৎসা ওষুধ খাওয়ানো না হলে, যে কোনো সময় বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে। কোন কারণে হাত পা যদি বিকালঙ্গ হয়ে যায়। তাহলে জীবনে আর সাড়ানো /ভালো করা সম্ভব  নয়। তাই এমন একজন গুনী শিল্পীকে বাঁচাতে, পঙ্গুত্বের হাত থেকে রক্ষা করতে, সবার সাহায্য প্রয়োজন।  সরকারিভাবে চিকিৎসা অব্যহত রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এলাকাবাসী। সাহায্য পাঠাতে চাইলে পাঠিয়ে দিন বিকাশ নং ০১৭৫১-২৪৮১৮৮ (পার্সোনাল)।