Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ধামরাইয়ে ফসলি জমিতে আবাসন প্রকল্প, বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশ হাইকোর্টের

মো: আব্দুল কাদের, ধামরাই: 

সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১, ০৫:৩৫ এএম


ধামরাইয়ে ফসলি জমিতে আবাসন প্রকল্প, বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশ হাইকোর্টের

ঢাকার ধামরাইয়ে মাখুলিয়া এলাকায় বিনা অনুমতিতে গড়ে উঠেছে ‘আকসিরনগর’ নামের একটি আবাসন প্রকল্প। এ জন্য জেলা প্রশাসকের অনুমতি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত বা পরিবেশগত ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, আকশির নগর কর্তৃপক্ষ তাদের ক্রয়কৃত জমির আশ-পাশের জমিতেও মাটি ভরাট করছে। এ নিয়ে জমির মালিকরা উপজেলা নির্বাহী (ওইসময়ে দায়িত্বরত) কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মাখুলিয়া, কাইজারকুণ্ড, বড় কুশিয়ারা, সীতি ও সাছনা মৌজায় প্রায় চার বছর আগে নামসর্বস্ব ‘কাইজেন গ্রুপ’ একটি আবাসন প্রকল্প শুরু করে। স্থানীয়দের কাছ প্রথমে কয়েক বিঘা জমি কিনে মাটি ভরাট করেন সাভারের ব্যাংক কলোনীর তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ। ওই সময় অনেকের জমি না কিনেই স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল (কানা বাবুল) হোসেনের নেতৃত্বে মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছিল। এ নিয়ে এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। 

পর্যায়ক্রমে প্রায় অর্ধশত কৃষকের ওপর হামলা ও মামলা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় জনরোষ দেখা দেওয়ার পর সেটি বন্ধ করা হয়। এর এক বছর পর নাম পরিবর্তন করে ‘আকসিরনগর’ নাম দিয়ে আবার কয়েক বিঘা জমি কিনে মাটি ভরাট শুরু করেন তৌহিদুল। তিনি আশপাশের অনেক কৃষককে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করেন। না কেনা জমিতেও বালু ফেলে তা দখলে নিয়েছেন। এর আগে, তৌহিদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা কয়েকবার বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন। প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদনও করেছেন তাঁরা। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বরং তাঁদের হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। 

ঢাকার ধামরাইয়ে বংশী নদীর তীরবর্তী মাখুলিয়া, কাইজারকুন্ডু, সীতি ও সাছনা মৌজার তিন ফসলি প্রায় ১০০ একর উর্বর জমি ভরাটের অভিযোগের বিষয়ে বিচারিক অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আগামী ৬০ দিনের মধ্যে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ভরাট কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা বদরুল সরদারের পক্ষে এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৬ আগস্ট সোমবার বিচারপতি মো. মুজিবর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বংশী নদীর তীরবর্তী তিন ফসলি উর্বর জমি অবৈধ দখলকারীদের প্রতিরোধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না। অবৈধ দখলকারীদের থেকে উদ্ধার করে জমির মালিকদের ফিরিয়ে দিতে ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না এবং অবৈধ দখলকারীদের থেকে উদ্ধার করে জমির মালিকদের ফিরিয়ে দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের নির্দেশনার জবাব আগামী ৬০দিনের মধ্যে ভূমিসচিব, ঢাকা জেলা প্রশাসক, ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি), ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আবাসন প্রকল্প আকসির নগর, কাইজান, জুবিয়ানসহ সংশ্লিষ্টদের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এএম মাহবুব উদ্দিন ও এইচ এম শানজিদ সিদ্দিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।

উল্লখ্য, চলতি বছরের ৩০ মে দৈনিক আমার সংবাদে 'ধামরাইয়ে আকসিরনগর আবাসন প্রকল্প' অনুমোদন ছাড়াই তিন ফসলি জমিতে আবাসন প্রকল্প  শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। 

আমারসংবাদ/এমএস