অক্টোবর ১, ২০২১, ০৯:২০ এএম
মহামারি কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দেড় বছর সারাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। আর এই দেড় বছরে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ৬৩৩ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।
কিন্তু সঠিক তথ্য গোপন করে উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ১৪ জনের একট তালিকা দিয়েছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সেই তথ্যই প্রকাশ করেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে।
[related nid="198298" layout="left"][/related]
মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দৈনিক আমার সংবাদে "ভূঞাপুরে করোনায় বাল্যবিয়ের শিকার ১৪ শিক্ষার্থী, তথ্য গোপন করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো" এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টিতে নজর দেন শিক্ষা অফিস সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর।
ভূঞাপুর উপজেলায় ৩০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২১ টি মাদ্রাসা রয়েছে। গোপনীয়ভাবে সরজমিন তথ্য নিয়ে দেখা যায়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলোর তালিকা অনুযায়ী উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে দীর্ঘ দেড় বছর করোনাকালীন বন্ধের সময় বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছেন ৬৩৩ জন শিক্ষার্থী।
এরমধ্যে মাধ্যমিকে ৪২৪ জন ও মাদ্রাসায় ২০৯ জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। এছাড়াও ৪ জন ছাত্র বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছেন।
এরমধ্যে উপজেলার রুহুলী উচ্চ বিদ্যালয় ৩৫ জন, টেপিবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৫ জন, ফলদা শরিফুননেছা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭জন, অর্জুনা মহসীন উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৫ জন, গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ জন, চরাঞ্চলের রায়ের বাসালিয়া কুলসুম জামান উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৮ জন, গাবসার দাখিল মাদ্রাসায় ৩০ জন।
এভাবেই প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছেন।
তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক পরিসংখ্যান গোপন করে ভুল তথ্য প্রদান করছে। বাস্তবে কয়েকগুন বেশি শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। শুধু মাধ্যমিকেও নয় প্রাথমিকেও বাল্য বিয়ে হয়েছে অনেক শিক্ষার্থীর। মহামারি করোনা ভাইরাসে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকায় বাল্যবিয়ে ও দারিদ্রতার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়েছে উপজেলার শত শত শিক্ষার্থী।
যমুনা চরাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তবে বিয়ের পরেও পড়ালেখা করতে বিদ্যালয়ে আসছে অনেক শিক্ষার্থী।
উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, করোনাকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের নিয়ে অনেকটা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। অনেকেই আবার নিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন তাই পছন্দমতো ছেলে পেয়ে গোপনেই তাদের সন্তানকে বিয়ে দিয়েছেন।
তবে বাল্যবিয়ের শিকার অনেক শিক্ষার্থীই বিদ্যালয়ে নিয়মিত অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিচ্ছে এবং পড়াশুনা করছে। বাল্যবিয়ে রোধে প্রশাসনের জোরালো পদক্ষেপ এবং এর কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে বাল্যবিয়ের সংখ্যা অনেকাংশে কমে আসবে।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী দোলা আক্তার সহ বাল্যবিয়ের শিকার বেশ কয়েকজন ছাত্রীর সাথে কথা বললে তারা জানায়, দীর্ঘ দিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আমাদের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরিবারের লোকজন আমাদেরকে বিয়ে দিয়ে দেন। আমাদের ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করে অনেক বড় হয়ে চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হলো না। নিজের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরিবারের ইচ্ছায় তাকে অল্প বয়সেই বিয়ে করতে হয়েছে আমাদের।
বাল্যবিয়ের শিকার এরমক কয়েকজন শিক্ষার্থীর পরিবারের সাথে কথা বললে তারা বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘ দিন ধরে স্কুল বন্ধ ছিল। আর এই বন্ধের মধ্যে মেয়ের বিয়ের জন্য ভালো ভালো সম্পর্ক আসতে শুরু করেছিল। সবসময় ভালো পাত্র পাওয়া যায়না। সেজন্য মেয়েকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেই। এদের মধ্যে অনেকে আবার কর্মহীন হয়ে পড়ায় অভাব অনটনের কারণে অল্প বয়সে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহীনুর ইসলাম বলেন, আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের বাল্যবিয়ের তথ্য চেয়েছিলাম, তারা আমাদের যে ১৪ জনের তালিকা দিয়েছিল সেটিই আমরা জেলা শিক্ষা অফিসকে পাঠিয়েছি।
আমারসংবাদ/এআই