Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

সবুজ মাঠে বেগুনি ধানের চাদর 

সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি 

অক্টোবর ৩, ২০২১, ১০:০০ এএম


সবুজ মাঠে বেগুনি ধানের চাদর 

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে সবুজ মাঠে বেগুনি ধান গাছের ঝলকানি কৃষকের মধ্যে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।  উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের রহমান কারিগরী স্কুল এন্ড কলেজের পাশে সবুজ ধান ক্ষেতের মাঝে দুটি  জমিতে লাগানো ধান দূর থেকে দেখে অনেকটা রোদে পুড়া ও বালাই লাগার মত মন হলেও উত্তর আসে ধানক্ষেত নষ্ট হয়নি, বালাই আক্রান্তও হয়নি। আসলে ধান গাছের রংই বেগুনি। তাই এমন রঙিন  ধানক্ষেত কৃষক ও পথচারীদের মধ্যে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। 

কৃষি কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য মতে, নতুন চাষ শুরু হওয়া এ ধানের নাম ‘পার্পল লিফ রাইস’। দেশে সর্বপ্রথম এ জাতের ধানের আবাদ শুরু হয় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে। 

জানা যায়, সুন্দরগঞ্জের দুলালী নামের এক কৃষক ক্রয়কৃত বীজ ধানের মধ্যে থেকে অন্য জাতের কিছু ধান বাছাই করে। আলাদা করে তা থেকে চারা তৈরি করে কয়েক ধাপে জমিতে চাষ করে। অন্য ধানের তুলনায় ফলন বেশী পায়। এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে কৃষকদের মাঝে এ ধান চাষে আগ্রহ বাড়ে। সেই থেকেই বাংলাদেশ বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে এ ধান।  

সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ধানের রং সোনালি ও চালের রং বেগুনি। উফশী জাতের এ ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ তুলনা মুলক কম হয়। রোপণ থেকে ধান ঘরে তুলতে সময় লাগে ১৪৫ থেকে ১৫৫ দিন। একর প্রতি ফলন ৫৫ থেকে ৬০ মণ। অন্য সব ধানের তুলনায় এ ধান মোটা, তবে পুষ্টিগুণ অনেক। এ চালের ভাত খেতে সুস্বাদু। 

সাদুল্লাপুরের সৌখিন কৃষক জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক  অধ্যক্ষ এম এস রহমান এ বছর ৫৫ শতাংশ জমিতে এ ধানের চাষ করেছে। তিনি বলেন, আমি সখ করেই  পঞ্চগড় থেকে ৬ কেজি বীজ ধান ক্রয় করি। তা থেকে চারা তৈরি করে তা ৫৫ শতাংশ জমিতে রোপন করছি। এ ধানের চারা ১৫/২৫ দিন হলে জমিতে রোপন করতে হয়। কিন্তু  আমি ৩৫/৪০ দিনের চারা রোপণ করেছি। এ কারণে ফসল ভালো হয়নি। কাঙ্ক্ষিত ফলন  হয়তো হবে না। তবে এ ধানে অন্যান্য ধানের তুলনায় পোকার আক্রমণ ও রোগবালাই কম। 

তিনি বলেন, আমি মুলত ফেসবুকে ও পত্রিকার রিপোর্ট দেখে এ ধান চাষে আগ্রহী হই। তবুও আশা করছি, অন্যান্য ধানের তুলনায় ফলন ভালো হবে ইনশাল্লাহ।

সাদুল্লাপুরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, এ ধান নিয়ে কোন ফলপ্রসূ গবেষণা রিপোর্ট নেই। এ কারণেই আমরা এ ধান চাষে কৃষককে উদ্ভুদ্ধ করেছি না। ফলন অন্য ধানের মতই তবে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী, আবহাওয়ার সাথে সহনশীল।  

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খাজানুর ইসলাম বলেন, জেলায় অনেক আগে থেকেই  বেগুনি রঙের ধান চাষ হয়ে আসছে। দেখতে সুন্দর তবে ফলন অন্য ধানের মতই। বেগুনি রঙের এই ধান বিদেশি নয়। এটা আমাদের দেশি জাতের ধান। এ ধানটা অনেকটা জাতের মধ্যে অজাত থেকেই উদ্ভব। আমাদের দেশে ধানের জমিতে অনেক সময় দেখা যায় কোন গাছ লম্বা আবার কোনটা খাটো। আমরা যাকে বলি মিক্সচার। অনেক সময় আমরা অজাত হিসাবে উপরেও ফেলি মুলত এখান থেকেই আলাদা করে এ জাতের উৎপত্তি। গবেষণায় ভালো ফল পাওয়া গেলে এ ধান চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়বে বলে আমি মনে করি।

আমারসংবাদ/কেএস