Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

বরিশালের ১০ জেলার জন্য মাত্র চারজন ডুবুরি

বরিশাল প্রতিনিধি

অক্টোবর ৫, ২০২১, ১১:৩০ এএম


বরিশালের ১০ জেলার জন্য মাত্র চারজন ডুবুরি

শুধু বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা নয়; আশপাশের জেলা থেকেও উদ্ধার কাজের ডাক আসলে ছুটে যেতে হয় বরিশালের ডুবুরিদের। আর তাও মাত্র চারজন ডুবুরিকে এ কাজ করতে হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। ফলে সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে প্রায়ই তাদের কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নদী স্টেশনকে আরও শক্তিশালী করতে জনবলসহ বিভিন্ন আধুনিক সরঞ্জাম প্রাপ্তির লক্ষ্যে চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যেগুলো প্রাপ্তির মাধ্যমে উদ্ধার অভিযানে আরও বেশি সফলতা অর্জন করতে পারবে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের নৌ-ইউনিট।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ছয় জেলায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন রয়েছে ৩৮টি। এরমধ্যে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলায় রয়েছে মাত্র দুটি নদী ফায়ার স্টেশন। এই দুটি স্টেশনের আওতায় রয়েছে দুইটি হাইস্পিডবোট ও একটি ফায়ার ফাইটিং অগ্নিঘাতক বোট এবং চারজন ডুবুরি। বিভাগের অন্যকোনো স্টেশনে ডুবুরি নেই। হাইস্পিডবোট দুটি ব্যবহৃত করা হয় ফায়ার ফাইটারদের বহনের জন্য। 

আর অগ্নিঘাতক নামের বোটটি ব্যবহার করা হয় আগুন নেভানোর কাজে। যদিও আগুন নেভানোর বোট নিয়ে সন্তুষ্ট নয় বর্তমান যুগের ফায়ার ফাইটাররা। এটি অটোমেটিক সিস্টেমের নয় বরং আলাদা পাম্প দিয়ে পানি তুলে আগুন নেভাতে হচ্ছে। 

অথচ ফায়ার সার্ভিসের চাহিদা অনুসারে বরিশাল বিভাগের উপকূলীয়, দ্বীপ উপজেলা এবং আয়তন বিবেচনায় কমপক্ষে ১০টি নদী স্টেশন দরকার। এরমধ্যে বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ, পটুয়াখালী উপজেলার রাঙ্গাবালি এবং ভোলা জেলা পুরোপুরি নদী বেষ্টিত হওয়ায় এসবস্থানে পূর্ণ সক্ষমতা সম্পন্ন নদী স্টেশন স্থাপনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। প্রতিটি নদী স্টেশনে পর্যাপ্ত ডুবুরি, সরঞ্জাম ও যানবাহন থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

সূত্র মতে, ২০১১ সালের আদমশুমারির হিসেব অনুযায়ী নদী-খাল বেষ্টিত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় প্রায় ৮৪ লাখ মানুষ বসবাস করছেন। আর গেল ১০ বছরে এই জনসংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ক্রমবর্ধমান এ জনসংখ্যার জন্য মাত্র চারজন ডুবুরি রয়েছে গোটা বরিশাল বিভাগে। যদিও সম্প্রতি আরও চারজন ডুবুরি নিয়োগ পেয়েছেন বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের বিভাগীয় কার্যালয়। তবে তারা কবে নাগাদ যোগদান করবেন সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত আসেনি। 

ফলে চারজন ডুবুরি দিয়ে বিভাগের নৌ-দুর্ঘটনায় উদ্ধার অভিযান চালানো যথারীতি অসম্ভব হয়ে পরেছে। গত এক বছরের হিসেব অনুযায়ী বিভাগে ছোট-বড় ১৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়া প্রায়ই পানিতে ডুবে নিখোঁজ ও মৃত্যুর ঘটনা লেগেই রয়েছে। 

বরিশাল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের নদী ফায়ার স্টেশন অফিসার খোরশেদ আলম বলেন, মাত্র চারজন সদস্যকে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শুধু বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় নয়; বিভাগের বাহিরের মাদারীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ থেকেও ডাক আসে। ফলে সেখানেও বরিশালের ডুবুরিদের উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণের জন্য যেতে হয়। আবার কখনও একদিনে একাধিক জেলা থেকে ডাক আসে। আর তখনই আমরা অসহায় হয়ে যাই। তবে এ সীমাবদ্ধতার মধ্যেও মানুষের জীবন বাঁচাতে চারজন ডুবুরি দিয়েই সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়।

ফায়ার সার্ভিসের বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক এ.বি.এম মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিগত ১০ বছরে ফায়ার সার্ভিসে অনেক পরিবর্তন এসেছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি, সরঞ্জাম, যানবাহন প্রতিনিয়ত সংযুক্ত হচ্ছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের ফায়ার ফাইটাররা বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করছেন। সরকার ফায়ার সার্ভিসের উন্নয়নে যথেষ্ট আন্তরিক। নদী বেষ্টিত বরিশালের প্রতি জেলায় নদী স্টেশন ও ডুবুরি ইউনিটের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া বর্তমান ডুবুরি সংকট নিরসনে প্রস্তাবনার অনুকূলে নতুন চারজন ডুবুরি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের যোগদানের বিষয়টি এখনও নির্ধারণ হয়নি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।