Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

চলনবিলে নির্বিচারে চলছে পাখি শিকার

মো. আব্দুস সালাম, গুরুদাসপুর (নাটোর)

অক্টোবর ১০, ২০২১, ০২:৫৫ পিএম


চলনবিলে নির্বিচারে চলছে পাখি শিকার

বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বানানো ডাংয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে শিকারি বক। ডাংয়ের সেই বক-ই মূলত শিকারির পাখি শিকারের প্রধান অস্ত্র। বেতের আর কলাপাতা দিয়ে বানানো হয়েছে পাখি শিকারের ঘর। শিকারি বকের ডানা ঝাপটানো দেখে আশপাশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বক এসে পড়ছে সেই ঘরে। 

ঘরে লুকিয়ে থাকা শিকারিরা এসব বক ধরে ধরে খাঁচায় ভরছেন। প্রতিদিন ভোর বেলায় এভাবেই চলনবিলজুড়ে অভিনব কায়দায় নির্বিচারে পাখি শিকার করছেন এক শ্রেণির অসাধু শিকারিরা।

পাখি শিকারের এই দৃশ্যটি রোববার (১০ অক্টোবর) সকালে ধরে পড়ে গুরুদাসপুর পৌর সদরের দুখাফকিরের মোড় এলাকার একটি ফসলের খেতে।

স্থানীয়রা বলছেন, বানের পানি নেমে যাচ্ছে। কাদা-জলে ছোট বড় নানা প্রজাতির মাছ দেখা যাচ্ছে। সেসব মাছ খেতেই চলনবিল এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে বকসহ নানা অতিথী পাখি। বিল জলাশয়ে পাখির এমন অবাদ বিচরণে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন এসব অসাদু শিকারিরা।

বিষটোপ, জাল পেতে এবং কলাপাতার ঘর ও বিশেষ ফাঁদ পেতে নির্বিচারে বক, কাদাখোঁচা, রাতচোরা, শালিকসহ নানা প্রজাতির পাখি শিকার করা হচ্ছে। রাতে এবং ভোরে শিকার করা এসব পাখি প্রকাশ্যে স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে পাখি শিকার করা হলেও বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন পাখি নিধন রোধে কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

তবে ২০১২ সালের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে পাখি শিকারিদের জন্য ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, গুরুদাসপুরের পাঁচশিশা বিলে, কাছিকাটা, মশিন্দা, ধারবারিষা, চাঁচকৈড় মধ্যম পাড়া বিলসহ সিংড়া, তাড়াশ, চাটমোহর, পাবনা ও বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে পরিযায়ি এসব পাখি শিকার করা হচ্ছে। 

গুরুদাসপুরের শাহীন আলম, শফিক, রাকিব হোসেন ও আব্দুল হান্নান প্রতিদিন ফাঁদ পেতে বক শিকার করছেন। শিকার করা এসব পাখি এক জোড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এসব পাখি শিকারিরা জানান, পাখি শিকার করা যে, অপরাধ তা তারা জানেন না।

গুরুদাসপুর রোজি মোজাম্মেল মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক সায়মা চৌধুরী বলেন, বকসহ অন্য পাখি ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এভাবে পাখি ধরা বন্ধ করতে হবে।

উপজেলা বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, শিকার বন্ধে গত বছর নানা সচেতনতামূলক প্রচারপ্রচারণা চালানো হয়েছে। কিন্তু এ বছর জনবলসংকটের কারণে সেই প্রচারণা বন্ধ রয়েছে। 

রাজশাহী বিভাগীয় বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির রোববার জানান, ১৬টি জেলা নিয়ে তাঁরা কাজ করেন। এ কারণে সব এলাকায় দায়িত্ব পালন করা কঠিন। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আমারসংবাদ/এআই