Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

মির্জাগঞ্জে উদ্বোধনের ৪ মাসের মধ্যেই বিদ্যালয় ভবনে ফাটল

কামরুজ্জামান বাঁধন, মির্জাগঞ্জ(পটুয়াখালী)

অক্টোবর ১১, ২০২১, ০৯:৪০ এএম


মির্জাগঞ্জে উদ্বোধনের ৪ মাসের মধ্যেই বিদ্যালয় ভবনে ফাটল

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে আবু ইউসুফ আলী মোল্লা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নির্মিত নতুন ভবনটি উদ্বোধনের চার মাসের মধ্যেই ফাটল দেখা দিয়েছে।

একটু বৃষ্টি হলেই ভবনের বিভিন্ন কক্ষের ছাদ চুঁয়ে পানি পড়ে। এরকম অবস্থার ফলে যে কোনো সময় দৃষ্টিনন্দন এ স্কুল ভবন কাম সাইক্লোন শেল্টারটি বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করেছেন বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষসহ এলাকাবাসী।

উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল চৈতা গ্রামসহ এর আশের-পাশের গ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী বাকেরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি গ্রামের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মানউন্নয়নের কথা চিন্তা করে ১৯৯৯ সালে স্থাপন করা হয় আবু ইউসুফ আলী মোল্লা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। 

কিন্তু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্মিত স্কুল ভবনটি উদ্বোধনের চার মাসের মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির পানি পড়ে শ্রেনী কক্ষের ভিতরের ছাঁদে সবুজ রংয়ের শ্যাওলা জমেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয়ের উদ্যোগে দায়সারা ভাবে কিছু মেরামত করেছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক। 

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আবু ইউসুফ আলী মোল্লা বালিকা মাধ্যমিক বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রটি নির্মাণ কাজ শুরু হলে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বিদ্যালয়ের ভবনের কাজ শেষ হয়। চলতি বছরের গত ২৩ মে বিদ্যলয়টি উদ্বোধনের কিছুদিন পর ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়। এতে শিক্ষার্থীদেরকে আতংকের মধ্যেই পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকরা। 

আবু ইউসুফ আলী মোল্লা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোতাহার উদ্দিন গাজী বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে চলতি বছরের গত ২৩ মে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভবনটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর আমরা বিদ্যালয় ভবনটি বুঝে পাই। সারাদেশের ন্যায় গত ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় বিদ্যালয় ভবনটি। নতুন ভবন পেয়ে শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থীসহ সবার মধ্যেই খুশির আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। 

কিন্তু ভবনের কাজ নিম্নমানের হওয়ায় কিছুদিন পরই এটি মেরামতের প্রয়োজন পড়ে। নামসর্বস্ব মেরামতও করা হয় ভবনের কিছু অংশে। কিন্তু ভারী বৃষ্টিতে ভবনের ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আবু ইউসুফ আলী মোল্লা বালিকা মাধ্যমিক বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। ৮টি কক্ষ ও ২টি চিলেকোঠাবিশিষ্ট দ্বিতল ভবনটি নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ২ কোটি ১৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। এটি বাস্তবায়ন করে বরগুনার বেতাগীর মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের সামনের ডান পাশের দিকের দেয়ালের বিভিন্ন অংশে বড় বড় ফাটল,দোতালায় উঠার সিড়ির আস্তর উঠে গেছে, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, করিডোর, শ্রেণিকক্ষের দেয়াল ও পলেস্তারায় ফাটল। ভেতরে কয়েকটি শ্রেণিকক্ষের ছাদ চুইয়ে পানি পড়ায় ভবনের ভেতরের রং নষ্ট হয়ে শেওলা পড়ে গেছে। 

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন,আমরা নতুন ভবন পেয়ে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু বিদ্যালয়ে নিম্নমানের কাজ হওয়াতে সামান্য বৃষ্টিতে ছাদ দিয়ে শ্রেণিকক্ষের ভেতরে পানি পড়ে। এতে ক্লাশ করতে আমাদের কষ্ট হয়। পানি পড়ে শ্যাওলা ধরেছে ছাদের কিছু অংশে। আর ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখে আমাদের আতংকে থাকতে হয়।

বেতাগীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী মো. খলিলুর রহমান বলেন, আমার লাইসেন্স নিয়ে এক ব্যক্তি কাজ করেছে। পিআইও সাহেব এ ব্যাপারে আমার সাথে আলাপ করেছে। আমি এর বেশি কিছু জানি না। 

বিদ্যালয়ের কাজ নেয়া লাইসেন্সের সাব ঠিকাদার মো. মামুন বলেন, বিদ্যালয়ের যে স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে সেসব স্থানে আমি দ্রুত মেরামত করে দিবো। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনে যে ফাটল দেখা দিয়েছে, তাতে ভয়ের কিছু নেই। নির্মাণের সময় ভালো কিউরিং না হওয়ায় এ ধরনের ফাটল দেখা দিতে পারে। আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার দিয়ে ভবন মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।

আমারসংবাদ/এআই