Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে সেবা না পাওয়ার অভিযোগ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

অক্টোবর ১৩, ২০২১, ১১:২০ এএম


সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে সেবা না পাওয়ার অভিযোগ

হাওরাঞ্চলের জেলা সুনামগঞ্জের ২৫ লাখ মানুষের একমাত্র সরকারি চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র ২৫০ সয্যা বিশিষ্ঠ সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে ৬৪জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১৪জন। ৯ কনসালটেন্ট (বিশেষজ্ঞ) ডাক্তারসহ কাগজে কলমে ১৮ চিকিৎসক থাকলেও প্রকৃত পক্ষে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ৩-৪ জন। 

বাকী ডাক্তাররা সপ্তাহের ৬ দিনই অনুপস্থিত থাকেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়। তারা বাহিরে প্রাইভেট প্রাকটিস নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলেও চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ। 

হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় হাসপাতালের বহি:বিভাগে শত শত রোগী সরকারী চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির জন্য অপেক্ষমান থাকলেও দেখা মিলে ১২টা ১৫ মিনিটে জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থপেডিক) ডা: শ্যামল চন্দ্র বর্মনের। 

কি কারণে এত দেরী করে চেম্বারে আসছেন জানতে চাইলে ডা: শ্যামা চন্দ্র বর্মন বলেন, আমি আপনার কাছে ব্যাখ্যা দিতে পারব না। আমার কর্তৃপক্ষ আছে। উনাকে জিজ্ঞাসা করেন। 

এ সময় রোগী ও রোগীর স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, দেখেন আপনারা সাংবাদিকরা দেখেন। সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে অপেক্ষায় আছি ডাক্তার দেখাব বলে কিন্তু কোন ডাক্তারই চেম্বারে আসছেন না। প্রতিটি ডাক্তারের চেম্বার তালাবদ্ধ। 

হাসপাতালের র্দুদশা সর্ম্পকে তত্বাবধায়ক (উপ-পরিচালক) ডা: আনিসুর রহমান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই তিন জন কনসালটেন্ট ডিউটি করছেন এটা বলতে পারব কিন্তু বাকীদের বিষয়ে কিছুই বলতে পারছি না। 

ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলে তিনি জানান, আমাদের উপর থেকে নির্দেশনা আছে ক্যামেরার সামনে কথা না বলতে। 

সূত্র আরও জানায়, হাসপাতালে ২২জন কনসালটেন্ট (জুনিয়র ও সিনিয়র) থাকার কথা থাকলেও সিনিয়র কনসালটেন্ট পদে ৭জন ও জুনিয়র কনসালটেন্ট পদে ৫জন চিকিৎসকের পদ দীর্ঘ দিন যাবৎ শূণ্য রয়েছে। কর্মরত ১০জন কনসালটেন্ট এর মধ্যে সিনিয়র কনসালটেন্ট র্কাডিওলজি ডা: মোহাম্মদ হোসেন দীর্ঘ দিন যাবৎ অননুমোদিত অনুপস্থিত থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বর্তমানে কর্মরত ৯ জন কনসালটেন্ট এর মধ্যে ২/৩জনকে হাসপাতালে ডিউটি করতে দেখা গেলেও বাকীদের পাত্তাই মিলে না। 

সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক আরও জানান, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে জরুরী বিভাগে ৪জন ডাক্তার থাকার কথা কিন্তু একজনও নাই, ইনডোরে ১২জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও একজনও নাই। ৬৪জন চিকিৎকের মধ্যে বিশাল জনগোষ্টির স্বাস্থ্য সেবা দিতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৪জন। আমি হাসপাতালে যোগদানের পূর্বে কনসালটেন্টরা সপ্তাহে ১/২দিন বহি:বিভাগে রোগী দেখতেন। আমি যোগাদানের পর তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে কিছুটা হাসপাতালমুখী করতে পেরেছি। আস্তে আস্তে তাদেরকে একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা হবে। তবে কয়েকজন কনসালটেন্ট এর বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারছি না। 

এ ছাড়াও সদর হাসপাতালে কর্মরত সহকারী সার্জন ২২জনের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হইতে সংযুক্তিতে ১০জন ও স্থানীয় আদেশে সংযুক্ততে ১২জন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করছেন। মেডিকেল টেকনোলজিষ্টের ১৪টি পদের বিপরীতে ৪জন কর্মরত আছেন। বাকী ১০জনের পদ দীর্ঘ দিন যাবৎ শূণ্য পড়ে আছে। ২৫৪জন নার্সের মধ্যে ১৩৬জন কর্মরত থাকলেও ১৪৮ জন নার্সের পদ এখনও শূণ্য রয়েছে। ৩য় শ্রেণীর মঞ্জুরীকৃত ৩৮টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১১জন, ২৭টি পদ দীর্ঘ বছর যাবৎ শূণ্য রয়েছে। ৪র্থ শ্রেণীর ২৪টি পদের মধ্যে ১৫জন কর্মরত থাকলেও ৯টি পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। 

আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে ৪র্থ শ্রেণীর কিছু জনবল নিয়োগ দিলেও নিয়মিত বেতন ভাতাদি না পাওয়ায় নিয়মিত ডিউটি করতে নারাজ কর্মচারীরা। সদর হাসপাতালের ভর্তিকৃত রোগীদের খাবার পরিবেশনেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। মাছ মাংশের পরিবর্তে দেয়া হচ্ছে পাঙ্গাস ও কমদামী মাছ। সকালে উন্নতমানের নাস্তার পরিবর্তে দেয়া হচ্ছে একটি পাউরুটি ও কলা। দুপুরের খাবারে দেয়া হয় পাঙ্গাস মাছ ও আলু দিয়ে লম্বা জুল। রাতের খাবারেও ঠিক তেমনি। এযেন অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে। অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে বার বার বিভিন্ন পত্রিকায় ও টিভিতে খবর প্রকাশ হলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে না। 

চিকিৎসাসেবা নিতে আসা যুবক রুহুল আমিন জানান, আমাদের সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে কোন ডাক্তার পাওয়া যায় না। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করেও ডাক্তারের দেখা পাইনি। রোগি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে নিম্নমানের খাবার দেয়া হয় এবং কোন ঔষধই হাসপাতাল থেকে দেয়া হয়নি। হাসপাতালটি দুর্নীতিবাজদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। 

জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা: আনিসুর রহমান ফাঁকিবাজ ডাক্তারদের পক্ষাবলম্বন করে জানান, সুনামগঞ্জে কোন ডাক্তার আসতে চায় না। যারা আছেন তাদেরকে বেশী চাপ দিলে চলে যাবে। তবে নিয়মিত বহি:বিভাগে রোগী দেখার জন্য বার বার মিটিংয়ে আহবান করেছি। ৩-৪ জন কনসালটেন্ট নিয়মিত রোগী দেখেন। বাকীদের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হাসপাতালের খাবার সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। হাসপাতালের শূণ্যপদ পুরণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছি। 

আমারসংবাদ/কেএস