Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

দুমকিতে আয়রণ ব্রিজ এখন মরণ ফাঁদ

দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

অক্টোবর ১৩, ২০২১, ০২:৪০ পিএম


দুমকিতে আয়রণ ব্রিজ এখন মরণ ফাঁদ

পটুয়াখালীর দুমকিতে কার্গোর ধাক্কায় একেবেঁকে যাওয়া লেবুখালী ভাড়ানী খালের ওপর অত্যন্ত ঝূঁকিপূর্ণ আয়রণ ব্রিজটি এখন এলাকাবাসীর জন্য মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

সাপ্তাহিক বাজারের শতাধিক ব্যবসায়ি-হাটুরে লোকজন ও সরকারি হাবিবুল্লাহ মাধ্যমিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশত শিক্ষক কর্মচারী এবং দেড় সহাস্ত্রাধিক শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর নিত্যপারাপারের ঝূঁকিপূর্ণ আয়রণ সেতুটিতে যেকোন মুহূর্তে বড় ধরণের প্রাণহানীর আশংকা রয়েছে। 

এলজিইডি কর্তৃপক্ষ অবশ্য ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটিতে না ওঠার নির্দেশযুক্ত সাইনবোর্ড দিয়ে রাখলেও তা কেউ আমলে নিচ্ছে না। ২ কি.মিটার দুরত্বের বিকল্প পথ ঘুড়ে যাওয়ার বিড়ম্বণা এড়াতে সবাই জীবনের ঝূঁকি সত্ত্বেও কাত হয়ে পড়া আয়রণ সেতুটি পারাপার হতে দেখা গেছে। যেকোন সময়ে বড় ধরণের প্রাণহানীসহ দূর্ঘটনার আশংকা রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের গোড়ার দিকে একটি মালবাহী কার্গোর সাথে ধাক্কা লেগে লেবুখালী বাজার সংলগ্ন ভাড়ানী খালের ওপর পুরাতন আয়রণ ব্রিজটির মাঝামাঝি দুটি খুটি ও এ্যাংগেল দুমড়ে-মুচড়ে একদিকে কাত হয়ে ঝুলে পড়ে। তাৎক্ষণিক এলাকাবাসী ও স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ প্রচেষ্টায় কার্গোটি আটকে সেতু মেরামতের জন্য ৭০হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়।

পরবর্তিতে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ওই টাকায় মেরামতের নামে কয়েকটি নাট-বল্টু লাগিয়ে জোড়াতালি দিয়ে দেয়া কয়েকদিনেই ফের নরবরে হয়ে যায়। বর্তমানে আয়রণ সেতুটি পারাপারকালে দুলতে থাকে।

এমতাবস্থায় সেতুটির পূর্বপাড়ে লেবুখালী হাবিবুল্লহ সরকারি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি দাখিল ও একটি নূরানী মাদ্রাসার শত শত শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী অপর পাড়ে ঐতিহ্যবাহি বাজারের ব্যবসায়িসহ সাধারণ মানুষের প্রতিনিয়ত যাতায়তের সহজ পথে সেতুটি ঝূঁকি নিয়ে নিয়মিত পারাপার হলেও সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেই।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ি সেরাজ উদ্দিন শরীফ অভিযোগ করে জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুটির এমন দুরাবস্থা হলেও তা কেউ দেখছে না। বারবার আবেদন নিবেদন করলেও উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের টনক নড়ছে না। তারা দায় এড়াতে সেতুর গোড়ার দিকে সাইনবোর্ড দিয়ে লোকজন পারাপারে নিষেধ করছেন কিন্ত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। 

জাকির হোসেন মোল্লা ক্ষোভের সাথে জানান, এ সেতুটি এখন কয়েকজন লোকের আয়ের খাত হয়েছে। কার্গো, ট্রলার ধাক্কায় ক্ষতিপূরণ আদায় এবং মেরামতের প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্দ এনে পকেট ভরছে-কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। 

লেবুখালীর স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুস সালাম ডাক্তার বলেন, আয়রণ সেতুটি ভেঙে তদস্থলে নতুন একটি ঢালাই সেতু নির্মাণের কথা শুনছি। এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে উপজেলা প্রকৌশলীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তা বলতে পারছি না। 

লেবুখালী সরকারি হাবিবুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহ-প্রধান শিক্ষক মো: কামরুজ্জামান আশ্রফ বলেন, বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকাবাসীর সহজ পথের সেতুটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হলেও পারাপার হচ্ছে। আয়রণ সেতুটি ভেঙে ফেললে জনভোগান্তি বেড়ে যাবে। তাই যতদ্রুত সম্ভব আয়রণ সেতুটি মেরামত করে সচল রেখে তার পাশ দিয়ে নূতন ঢালাই ব্রিজ নির্মাণ করলে ভালো হয়।

লেবুখালী সরকারি হাবিবুল্লহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রশাসনের নিষেধ সত্ত্বেও তার বিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সময় বাঁচানোর জন্য এ সেতু পারাপার হচ্ছে। অতিদ্রুততম সময়ের মধ্যে সেতুটি সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করার পাশাপাশি নতুন আরেকটি সেতু নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী দাবি করছেন।

দুমকি উপজেলা প্রকৌশলী মো: আজিজুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সেতুটির ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি এবং বার্ষিক উনয়ন কর্মসূচির আওতায় স্কীম পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে দুমকি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ বলেন, সেতুটি অতি পুরনো হওয়ায় ইতোপূর্বে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে উভয় তীরে সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে এবং জনসাধারণ চলাচলে নিষেধ করা হয়েছে।

আমারসংবাদ/কেএস