গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
অক্টোবর ১৪, ২০২১, ১০:৪০ এএম
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মোস্তাকিম জনি। বাবা মোঃ লোকমান হোসেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। যা আয় করেন তা দিয়েই অতি কষ্টে চলে ৫ সদস্যের সংসার। ৫ সদষ্যের ওই সংসারে মা গৃহিণী, তিন ছেলেই করছেন লেখাপড়া। বাবার একার পক্ষে সংসার চালানো কষ্টকর। তা অনেকটা বাধ্য হয়েই অনলাইনে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করেছেন মোস্তাকিম জনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জনি ঘরে বসেই এখন আয় করছেন বৈদেশিক মুদ্রা। বড় ভাইয়ের পাশাপাশি ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ চালানো এবং সংসারের হাল ধরেছেন অল্প বয়সেই।
মোস্তাকিম জনির বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুর এবং সিংড়া উপেজালার সিমান্ত এলাকার নাছিয়ার কান্দি গ্রামে। তার বাবা মোঃ লোকমান হোসেন এলাকায় কোকারিজের ব্যবসা করলেও বয়সের ভারে এখন পারছেন না ওই ব্যাবসা করতে। মা রুবিনা বেগম একজন গৃহিণী। তিন ভাইয়ের মধ্যে মোস্তাকিম জনি মেজো। বড় ভাই শরিফুল ইসলাম ঢাকা কলেজ থেকে গণিতে মাস্টার্স করে এখন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতা করছেন। পাশাপাশি বিসিএস পরিক্ষার চেষ্টা করছেন। ছোট ভাই মনিরুল ইসলাম উচ্চ মাধ্যমিক প্রথমবর্ষের ছাত্র।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মোস্তাকিম জনি ২০১৪ সালে একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে মাইক্রোসফট অফিস অ্যাপ্লিকেশনের ক্লাস নিতেন। এখানে কাজ করে যা পেতেন, তা দিয়ে নিজের খরচ চলত। তার বাবা কোকারিজ এর ব্যবসা করলেও বড় ভাই শরিফুল ইসলাম চাকরি পাওয়ার পরে সেটা ছেড়ে দেন। মোস্তাকিম জনি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে কাজ করার পাশাপাশি গ্রাফিক্স ডিজাইন ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের কাজ শিখেছিলেন। তার বাবার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি অনলাইনে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে সংসার পরিচালনায় সাহায্য করছেন।
মোস্তাকিম জনি ইতিমধ্যে প্রায় ৩১টি, দেশের ক্লায়েন্ট এর সাথে কাজ করছেন। এসব কাজের বিনিময়ে ঘরে বসেই উপার্জন করছেন বৈদেশিক মুদ্রা। এসব কাজ করে মোস্তাকিম জনি মাসে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ ইউএস ডলার আয় করছেন। শুধু জনিই নয় তার মতো স্থানীয় অনেক বেকার যুবক ফ্রিলান্সিংয়ে কাজ করছেন। তারাও এখন স্বাবলম্বী।
মোস্তাকিম জনি নানুপুর ওবাইদিয়া মাদ্রাসায় উচ্চমাধ্যমিক পাস করে তিনি চট্টগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে ভর্তি হন।
নানুপুর ওবাইদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আবু জাফর বলেন, ছোটবেলা থেকেই মোস্তাকিমের কম্পিউটারে কাজ করার প্রতি বেশ মনোযোগ ছিল। তার স্বপ্ন ছিল আইটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে পড়াশোনার পাশাপাশি ঘরে বসেই অনলাইনে কাজ করছেন তিনি। ইতিমধ্যে সফলও হয়েছেন তিনি।
মাদ্রাসা ছাত্র মোস্তাকিম জনি বলেন, তিনি ইউটিউবে ভিডিও দেখে দেখে ও চট্টগ্রামের কিছু বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এসব কাজ শিখেছেন।
তিনি আরও বলেন, যারা সঠিক প্রশিক্ষণের অভাবে এসব কাজ শুরু করতে পারছেন না, তারা ইউটিউব ও গুগলের সাহায্য নিয়ে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারেন। তবে অবশ্যই তাকে অধ্যবসায়ী ও পরিশ্রমী হতে হবে।
আমারসংবাদ/কেএস