Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

 ৪০ বছর পর হারানো স্বজনের খুঁজে ব্যাকুল আলম

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

অক্টোবর ১৯, ২০২১, ০৯:১০ এএম


 ৪০ বছর পর হারানো স্বজনের খুঁজে ব্যাকুল আলম

এক দিন, সপ্তাহ, মাস কিংবা বছর নয়, নিজের মা-বাবা, ভাই বোন কিংবা কোন আপন আত্মীয় স্বজন ছাড়া জীবনের ৪০টি বছর কাটিয়েছেন নিজের এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় অন্যের বাড়িতে। দীর্ঘ ৪০ বছর পর স্বজনদের খুঁজে পেতে ব্যাকুল পঞ্চাশ পেরোনো মোঃ আলম। নিজের বাবা আশকর আলীর নাম বলতে পারলেও ভুলে গেছেন জন্মদায়ী মায়ের নাম। নারায়নগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার কাঁঠালীয়া পোঃ খামারদিয়া গ্রামে তার জন্ম। ভুলে গেছেন ইউনিয়নের নাম, বলতে পারছেন কামরাঙ্গারীর চর নামে একটি বাজারের নাম। এ ছাড়া এলাকার বিষয়ে অন্য কিছু মনে নেই আলমের।

হারানো পরিবার পরিজন সম্পর্কে জানতে চাইলে আলম জানান, তার পিতা আশকর আলী তাতের ব্যবসা করতো। তার ছোট দুই ভাই শামছুল হক ও সিরাজুল হক। এলাকায় নামকরা ব্যবসায়ী চাচাদের নাম বলতে না পারলেও চাচাত ভাই আইয়ুব আলী, শরাফত আলী ও মারফত আলীর নাম মনে আছে।

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ রফিকুল ইসলামের মাধ্যমে আলমের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে এই প্রতিবেদক আলমের মুখোমুখি হলে জানা যায় নানা অজানা কথা। কিশোর আলম ক্ষুধার তাড়নায় বাড়ি থেকে বের হয়ে পথ ভুলে বাজারে এসে ট্রেনে চড়ে চলে এলেন দেশের ভেতরে ভিন্ন আরেক দেশে যেখানে তার পরিচিত কেউ নেই। পথে পথে ঘুরছেন লোক মুখে জানতে পেলেন এলাকার নাম ত্রিশাল। সারা দিন ঘুরাঘুরি করে বিকেলে ত্রিশাল থেকে গাড়িতে চড়ে চলেন ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের সিডস্টোর বাজারে। হেংলা পাতলা ছিপছিপে গড়নের বোকা বোকা চেহেরার অভুক্ত আলম বাসষ্ট্যান্ডের পূর্ব পাশে অবস্থিত মিতালী হোটেলের মালিক সিরাজের কাছে কাজ চাইলেন। তাকে দেখে হোটেল মালিকের মায়া হলো। তাকে পেট ভরে খাওয়ালেন তারপর হোটেলের মেছিয়ারের কাজ দিলেন তিনি। শুরু হলো নতুন জীবন। এভাবে কেটে গেলো অনেক দিন। 

তারপর হোটেলের কাজ ভালো না লাগায় চলে গেলেন একই ইউনিয়নের ঝাঁলপাজা গ্রামের বাবুল মিয়ার বাড়িতে কাজ করতে। সেখানে কিছুদিন কাজ করে চলে যান হাজী শহিদুল ইসলামের বাড়িতে। সেখানে প্রায় অনেক দিন কাজ করার পর চলে গেলেন জামিরদিয়া কুমারপাড়া এলাকার হাসমত আলীর বাড়িতে। সেখানে কাজ করার সময় তার অসহায়ত্ব ও ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে হাসমত আলী তার আপন ভাই আঃ মান্নানের মেয়ে মেহের বানুর সাথে বিয়ে দেন। এরপর থেকে এই এলাকায় জীবন যাপন শুরু করেন। ব্যক্তিগত জীবনে আলমের এক ছেলে মোমেন ও এক মেয়ে সাবেকুন নাহার। 

কান্নাজড়িত কন্ঠে আলম বলেন, আমি আপনাদের মিডিয়ার মাধ্যমে আমার হারানো স্বজনদের ফিরে পেতে চাই। মরার আগে যদি আমার জন্মস্থানে আমার পরিবারের লোকজনদের সাথে দেখা হয় তাহলে আর আমার কোন কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই।

আমারসংবাদ/কেএস