Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

সিরাজদীখানে নিষিদ্ধ চায়না চাইয়ে সয়লাব  

সিরাজদীখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি

অক্টোবর ১৯, ২০২১, ০৯:৩৫ এএম


সিরাজদীখানে নিষিদ্ধ চায়না চাইয়ে সয়লাব  

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে নিষিদ্ধ চায়না চাই দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করছে এক শ্রেণীর অসাধু মৎস শিকারি। এতে বিলুপ্তি ও চরম হুমকিতে রয়েছে দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং মাছের রেণু পোনাসহ বিভিন্ন প্রকার জলজ প্রাণি। নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের চেয়েও সুক্ষ্ম চায়না চাই খাল-বিল জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। এতে করে প্রাকৃতিক সব ধরনের দেশীয় মাছ ধরা পড়ছে এ চাইয়ে। এর ফলে ক্রমেই মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে নদ-নদী, খাল-বিলে। 

দীর্ঘদিন ধরে এক শ্রেণির মৎস শিকারিরা চায়না চাই কিনে অবাধে মাছ শিকার করে যাচ্ছে। প্রতিদিনই মাছ ধরার এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। মৎস শিকারিরা সন্ধ্যা রাতে চায়না চাই খাল-বিলে ও ফসলী জমি গুলোতে পেতে রাখে। পরদিন খুব ভোরে চাই উঠিয়ে মাছ শিকার করে। তাদের চাইয়ে ধরা পড়ে শুধু মাছই নয়, পানিতে থাকা জলজ প্রাণিও। এমনকি মাছের ডিমও ছেঁকে তোলা হয় এ চায়না চাই দিয়ে। উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে চায়না চাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা না করায় অবৈধ এ চাই ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। 

মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার জৈনসার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নিষিদ্ধ চায়না চাই সয়লাবের চিত্র দেখা গেছে। এ ছাড়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে একই চিত্র রয়েছে। এতে খাল-বিলের থাকা মিঠা পানির সব ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ সুক্ষ্ম এই চাইয়ে ধরা পড়ছে। বিশেষ করে পানি কমতে থাকায় চিংড়ি, পুটি, টেংরা, কৈ, শিং,মাগুর, তেলাপিয়া, বোয়াল, শোল, টাকিসহ প্রাকৃতিক সব মাছ এই সর্বশেষ প্রযুক্তির চায়না চাইয়ে নিধন হচ্ছে। এতে ক্রমেই মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে নদ-নদী, খাল-বিল গুলো থেকে। এলাকাবাসী বলছে কাশেম ও রতন মন্ডল নামের দুই ব্যক্তি চায়না চাই দিয়ে ভরে ফেলেছে। কারো কথাই মানছে না জেলেরা। তাই প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন গ্রামবাসী।

জানা যায়, চায়না চাই সাধারণত এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতা ৬০ থেকে ৯০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ক্ষুদ্র ফাঁশ বিশিষ্ট ঢলুক আকৃতির হয়ে থাকে। লোহার ৪টি রড ও রডের রিং দিয়ে খোঁপ খোঁপ আকারে বাক্স তৈরি করে চারপাশ সুক্ষ্ম জাল দিয়ে ঘেড়াও করে তৈরি করা হয়। এই চাইয়ে বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো বিলের জলের ও নদীর তলদেশে লম্বালম্বি ভাবে লেগে থাকে। ফলে কোন প্রকার খাদ্য দ্রব্য ছাড়াই দুদিক থেকেই মাছ ঢুকতে পারে। তবে কেউ কেউ অতিরিক্ত মাছের আশায় ঘ্রাণ জাতীয় খাবার দিয়ে থাকে। একটি চায়না চাইয়ের দাম মান ভেদে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। 

জৈনসার ইউনিয়নের বাসিন্দা পলাশ শেখ বলেন, আমার পুকুরের মুখ উন্মুক্ত রেখেছি যাতে করে মাছ পুকুরে ডুকতে পারে। কিন্তু রতন মন্ডল চায়না চাই পেতে আমাদের গ্রামের ছোট থেকে বড় সব ধরনের মাছ নিধন করছে। এতে করে আমরা দেশীয় মাছ খেতে পারি না। সেক্ষেত্রে প্রশাসনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি।

আরেক জন মো. শাকিব শেখ বলেন, আমাদের এলাকায় প্রচুর চায়না চাই দিয়ে ভরে গেছে। কাশেম, রতন মন্ডল তারা এই চায়না চাই ইউনিয়ন জুড়ে চাই পাতে। কিন্তু এতে করে জলজ প্রাণীর অনেক ক্ষতি হচ্ছে। চায়না চাই পাততে নিষেধ করলে তারা গালিগালাজ করে এবং বলে যাকে পারো তাকে নিয়ে আসো। আমরা চায়না চাই পাতবোই। সে ক্ষেত্রে মৎস্য কর্মকর্তাদের কাছে জানিয়েও কোনো উপকার পাচ্ছি না। তারা কোনো কাজই করছে না শুধু বসে বসে বেতন নেয়। আর কোনো কাজ করে না। এই চায়না চাইয়ের কারণে আগের মতন দেশীয় মাছ পাওয়া যায় না।

জৈনসার ইউনিয়নের চায়না চাই দিয়ে মাছ শিকারি মো.কাশেম বলেন, চায়না চাই দিয়ে মাছ ধরা ঠিক না তার পরও জীবিকার তাগিদে মাছ ধরি।

পেশাদার জেলে সামি পাল বলেন, চায়না চাই সব ধরণের মাছ ছেঁকে উঠে, সহজেই মাছ ধরা যায় এবং দাম কম হওয়ায় পানি কমার সময় মৎস্য শিকারিরা মাছ ধরতে নেমেছে। ফলে আমরা যারা চিরাচরিত কৌশল দিয়ে মাছ ধরতাম তাদের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে চায়না চাই কিনেছে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) যুধিষ্ঠির রঞ্জন পাল বলেন, আমরা কিছুদিন আগে প্রায় ৫০০ মিটারের মতো চায়না চাই পুড়িয়ে ধ্বংস করেছি। চায়না চাই দিয়ে মাছ শিকার করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। তবে সকল প্রকার নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে প্রচার প্রচারণা চলমান রয়েছে। আমরা সকল প্রকার নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকি। এ বছরও আমাদের এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আমারসংবাদ/কেএস