Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

খুলে দেয়া হচ্ছে পায়রা সেতু 

দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি 

অক্টোবর ২৩, ২০২১, ০৮:২০ এএম


খুলে দেয়া হচ্ছে পায়রা সেতু 

উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর বহুল আকাঙ্খিত দুমকি উপজেলার লেবুখালীর পায়রা সেতু। আগামী ২৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে খুলে দেয়া হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এর ফলে এই সেতু দিয়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল শুরু হবে এবং দক্ষিণাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। 

প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-১ ইসমাত মাহমুদা স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে পায়রা নদীর ওপর পায়রা সেতু উদ্ধোধনে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। ২৪ অক্টোবর সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি উদ্বোধনে অংশ নেবেন। 

অপরদিকে পায়রা সেতু, দুমকি, পটুয়াখালী প্রান্তে পটুয়াখালী, বরিশাল ও উপজেলার প্রশাসনের কর্মকর্তা, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকবেন। 

উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণার পর পায়রা সেতু এলাকায় সরব সাধারণের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।  পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার লেবুখালী এলাকায় পটুয়াখালী-লেবুখালী-বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে পায়রা নদীর ওপর নির্মিত পায়রা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব হবে।  দৃষ্টিনন্দন এই সেতুটি বাস্তবায়ন করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। চীনা প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন কোম্পানি সেতুটি নির্মাণ করেছে।পটুয়াখালীর পায়রা সেতুর অবকাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু উদ্ধোধনের অপেক্ষা। এই সেতুটি উন্মুক্ত হলে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে গোটা দক্ষিণাঞ্চল। 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালের মে মাসে সেতু নির্মাণের প্রকল্পে অনুমোদন দেয়। শুরুতে সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪১৩ দশমিক ২৮ কোটি টাকা । তবে পরবর্তীতে নকশা পরিবর্তন করে প্রকৃত নির্মাণ ব্যয় চূড়ান্ত করা হয়। সর্বশেষ এই সেতুটি নির্মাণে চুক্তি মূল্য নির্ধারণ করা হয় এক হাজার ১৭০ কোটি টাকা। তবে সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ১১৮ কোটি। এতে সাশ্রয় হচ্ছে ৫২ কোটি টাকা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, পটুয়াখালীসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক চাকাকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য অর্থনৈতিক লাইফলাইন হিসেবে কাজ করবে পায়রা-লেবুখালী সেতু। এ ধারাবাহিকতায় ২৪ অক্টোবর সেতুটি যানচলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। 

সেতু উদ্বোধনের আগে শেষ মুহূর্তে সেতু কর্তৃপক্ষের চলছে নানা আয়োজন। ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, দুমকি উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, দুমকি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)সহ জেলা-উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ঘটনাস্থল লেবুখালী ইউনিভার্সিটি স্কয়ার পরিদর্শন করেছেন। এ ছাড়াও জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে প্রস্তুতিমূলক সভাও করেছে জেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, এ সেতুর কিছু বিশেষত্ব আছে। এটি দেশের সব থেকে বড় সপ্যান বিশিষ্ট সেতু, যার দৈরঘ্য ২০০ মিটার করে। এতে পদ্মা সেতুর থেকেও বেশি বড় সপ্যান সংযুক্ত করা হয়েছে। দেশে এই প্রথম কোন সেতুতে হেলথ মনিটরিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে বজ্রপাত ও ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ওভার লোডেড যানবাহন চলাচলে সেতুর ভাইব্রেশন সিস্টেমে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে এই সিস্টেম ওয়ার্নিং দেবে। 

এটি দেশের দ্বিতীয় সেতু যা এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল সিস্টেমে তৈরি করা হয়েছে। ফলে নদীর মাঝে একটি এবং দুপাড়ে দুটি পিলারের ওপর মূল সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়াও পায়রা সেতুর জন্য আলাদা সাব স্টেশনের মাধ্যমে সেতুতে বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে বাতি জ্বলবে। থাকছে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থাও।

পায়রা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, ২৪ অক্টোবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। ইতোমধ্যেই সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। পায়রা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হলে বরিশাল হয়ে পায়রা সমুদ্র বন্দর ও পর্যটন  কেন্দ্র কুয়াকাটার সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণের পর ঢাকা হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত জাতীয় মহাসড়ক ফেরিমুক্ত সরাসরি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। 

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকনমিক ডেভেলপমেন্ট ও ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট যৌথ অর্থায়নে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। 

আমারসংবাদ/কেএস