Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

সখীপুরে ধান ক্ষেতে পোকা দমনে ‘আলোক ফাঁদ’

আমিনুল ইসলাম, সখীপুর (টাঙ্গাইল)

অক্টোবর ২৫, ২০২১, ০৫:২৫ এএম


সখীপুরে ধান ক্ষেতে পোকা দমনে ‘আলোক ফাঁদ’

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কৃষকদের মাঝে দিন-দিন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কীটনাশক ছাড়াই ক্ষতিকারক পোকা দমনের ‘পার্চিং’ ও ‘আলোক ফাঁদ’ পদ্ধতির ব্যবহার। জমিতে সার দেয়ার পর থেকেই রোপা-আমন ক্ষেতে বাদামী ঘাসফড়িং বা কারেন্ট পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা ও চুঙ্গি-মাজরাসহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। 

আর এসব পোকার আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে কৃষকরা কীটনাশকসহ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেন। বর্তমানে কৃষকরা ক্ষেতে কীটনাশক ওষুধ পরিহার করে পোকা দমনে সহজ ও পরিবেশবান্ধব ‘পার্চিং’ এবং ‘আলোক ফাঁদ’ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।

উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ২৫টি ব্লকে উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে সপ্তাহের প্রতি রবিবার সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের আধ ঘন্টা পরে রোপা-আমন ফসলের ক্ষেতে পোকার উপস্থিতি যাচাইয়ের জন্য ‘আলোক ফাঁদ’ স্থাপন করা হচ্ছে।

এ মৌসুমে উপজেলায় ১৫ হাজার ৭শ’ ৪৮ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। ধানের উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৭০,৮,৬৬ মেট্রিকটন। ‘পাচিং’ ও ‘আলোক ফাঁদ’ একটি সহজলভ্য পদ্ধতি। আমাদের পরার্মশে কৃষকরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে খুব সহজেই ধান ক্ষেতের পোকার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারছেন।

সরেজমিনে রবিবার সন্ধ্যায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আমন ধানের ক্ষেতের আইলে কোথাও পানি ভর্তি পাত্রে, কোথাও কাগজের ওপর আলো জালিয়ে ধানে আক্রমণাত্মক বিভিন্ন পোকা ধরছেন। কৃষকরা নিজেই জমিতে এই পোকাগুলোর পরিমাণ দেখে ধান ক্ষেতে কী ব্যবস্থা নিতে হবে তা খুব সহজেই নিরূপন করতে পারছেন। যার ফলে পোকার আক্রমনের আগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারছেন কৃষকরা।

উপজেলার গজারিয়া গ্রাামের কৃষক লুৎফর রহমান, কীর্তনখোলা গ্রামের হাফিজ উদ্দিন, আয়নাল হক এবং কালমেঘা গ্রামের কৃষক কাদের মিয়া জানান, তারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেক উপকৃত হয়েছেন। সহজ লভ্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করে খুব সহজেই ক্ষেতের পোকা নিধন করতে সম্ভব। এতে করে তাদের খরচ অনেকটাই কমে এসেছে। এটা পরিবেশ বান্ধব একটি পদ্ধতি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ ইসমত আরা খাতুন আমার সংবাদকে জানান, বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা পোকার আক্রমণের আগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারছেন। বর্তমানে এই ‘আলোক ফাঁদ’ ব্যবহার করে এলাকার অনেক কৃষকরা খুবই কম ওষুধ প্রয়োগ করছেন। এতে কৃষকদের অনেকটাই খরচ কমে আসছে এবং ধানের উৎপাদনের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এবার রোপা-আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নিয়ন্তা বর্মণ আমার সংবাদকে বলেন, 'আলোক ফাঁদ' একটি সহজলভ্য এবং পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি। উপজেলার কৃষকেরা এই আধুনিক ও সহজলভ্য পদ্ধতি ব্যবহার করে খুব সহজেই ধানের শত্রু বিভিন্ন পোকা চিহ্নিত করতে পারছেন। যে সব ধানের জমিতে ক্ষতিকারক পোকা বেশি, সে সব জমিতে কৃষকদের নিয়ে আলোক ফাঁদের ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষতিকারক পোকা নিধনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আর যদি দেখা যায় যে তাদের জমিতে উপকরী পোকার পরিমাণ বেশি, সেই জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ না করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। 

কারণ, ধানের জমিতে বিভিন্ন উপকরী পোকাগুলো বেশি হলে ওইসব উপকরী পোকারা ক্ষতিকারক পোকাগুলোকে নিধন করবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো-উপজেলার কৃষকেরা নিজ নিজ জমির ধানের ক্ষতিকারক ও উপকারী পোকার পরিমাণ দেখে সেই ধান ক্ষেতে বিভিন্ন ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণের আগেই কোন ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে তা খুব সহজেই জানতে পারছেন। 

আমারসংবাদ/এআই