Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

বিয়ের পরও মুক্তি পায়নি অন্তরা, প্রেমিক আটক

অক্টোবর ২৮, ২০২১, ১০:৫৫ এএম


বিয়ের পরও মুক্তি পায়নি অন্তরা, প্রেমিক আটক

এলাকার উঠতি সুন্দরী মেয়েরাই ছিলো তার টার্গেট! পরিচয়ের পর প্রেমের প্রস্তাব, প্রেমের ফাঁদে ফেলে ফোনালাপ, অতঃপর এক সাথে ঘুরাঘুরি, নির্জনে দেখা সাক্ষাৎ, শেষে মিষ্টি কথার মায়ায় মেয়েদের সাথে অন্তরঙ্গ ছবি তুলা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে কথা ছলে খোলামেলা শরীরের স্কিনশর্ট নিয়ে সেই ছবি দিয়ে ব্লাকমেইল করে মেয়েদের মতের বিরুদ্ধে সম্পর্ক টিকিরাই ছিলো তার কাজ। 

অন্তরঙ্গ ছবির কারণে বিয়ের পরও স্বামীর সংসার আর লোকলজ্জা ভয়ে মেয়েরা তার সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতো। আর এভাবেই চলছিলো ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার কোন্ডা ইউনিয়নের নতুন বাক্তারচর গ্রামের সাত্তার মিয়ার ছেলে মিজানের অন্ধকার জীবন।

তার ব্লাকমেইলের শিকার প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে অন্যের স্ত্রীও। তবে এতো কিছুর পরও সে ছিলো ধরাছোঁয়ার বাইরে, মিজান আলোচনায় আসে তার দীর্ঘদিনের প্রেমিকা অন্তরা (২৩) নামে এক যুবতী আত্মহত্যার পর। 

পরিবারের অভিযোগ গত ১৪ অক্টোবর দুপুরে মিজানের ব্লাকমেইলের ভয়ে নিজ বাড়ীতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে তার প্রতিবেশী অন্তরা।

জানা গেছে, মা-বাবা আর একমাত্র ভাইকে নিয়ে ছোট্র সুখের সংসার ছিলো অন্তরার। নিজ বাড়ী, মামা বাড়ী আর স্কুল-কলেজই যেনো ছিলো তার পৃথিবী। তবে এই ছোট্র জগতে হঠাৎ আগমন মিজান (২৫) নামে একট যুবকের। 

নানা স্বপ্ন আর আশায় ক'দিনেই তাদের সম্পর্ক দানাবাঁধতে শুরু করে। গোপনে হলেও ভালই চলছিলো তাদের প্রেম। ধীরে ধীরে পরিবারসহ হয়ে এলাকাবাসীও জেনে যায় তাদের প্রেম কাহিনী। তবে প্রেমে বাধ সাজে বিয়ে! 

পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়ের জন্য পাত্র দেখা শুরু হলে মিজানকে জানানো হয় সে বিয়ে করবে কিনা আন্তরাকে? তবে এতে সে অস্বীকৃতি জানায়, পরে বাধ্য হয়ে গত ৮ জানোয়ারি মেয়েকে বিয়ে দেন নারায়ণগঞ্জের এক যুবকের সঙ্গে। তবে বিয়ে টিকেনি এ সপ্তাহ! মিজানের ফোন, ছবিসহ নানা ষড়যন্ত্রে অন্তরাকে বাবা বাড়ী পাঠিয়ে দেয় স্বামী আনন্দ। 

বাড়ী এসে সেই আগের মতো মিজানেই মজে অন্তরা, বের হতে পারেনি তার জাল থেকে তবে আবারও আন্তরার অন্তর ভাঙে মিজান। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবারও করলেন না বিয়ে। তাই আট মাস পর মেয়েকে পুনঃরায় বিয়ে দেন একই ইউনিয়নের যুবক জুয়েলের সাথে। এখানে ভালোই চলছিলো তাদের সংসার, অন্তরার অন্তর জুড়ে যেনো শুধুই জুয়েল। 

তবে এবারও বাধ সাজলো সেই মিজান, বন্ধু হৃদয়ের মাধ্যমে স্বামী জুয়েলকে নানা বার্তা পাঠিয়ে বিষিয়ে তুলেছিলো সংসার। পাশাপাশি মিজান অনলাইন প্লাটফর্মে তার সাথে অন্তরার তোলা অন্তরঙ্গ ছবি পোস্ট করতে শুরু করে এবং অন্তরার মতে বিরুদ্ধে মোবাইলে বারবার ফোন দেওয়ারও অভিযোগ তুলেছে অন্তরার পরিবার।

মেয়ের মামা খোকা জানান, গত ৮ অক্টোবর আমার ভাগনির কাবিন সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে মিজানের ফোন না ধরায় অন্তরার সাথে মিজামের যে সকল ডকুমেন্ট আছে তা ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দিয়ে যায় বাড়ী এসে। মৃত্যুর দিন (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে মিজান ও তার সহযোগিরা বাইক নিয়ে বাড়ির সামনে দিয়ে বার বার যাতায়াত করতে দেখা গেছে। সিসি টিভি ফুটেজেও দেখে গেছে বারবার ফোন আসছিলো অন্তরার মোবাইলে, আর সে বারবার কল কেটে দিচ্ছিলো। এক পর্যায় অন্তরা ফোনে কথা বলে অন্য রোম থেকে হাই টুল নিয়ে গলায় ওড়না পেচিয়ে ফাঁস দেয়। দরজা খোলা রেখেই ফাঁস দেয় অন্তরা কেউ হয়তো বাঁচাবে বলে, কিন্তু দুঃখের বিষয় কেউ ঘরে আসেনি।

অন্তরার মা বাদী মোসাঃ গোলেনুর বেগম জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ আমার মেয়ে অন্তরাকে বিভিন্নভাবে ডিস্টার্ব করা সহ এলাকায় নানাধরনের কুৎসা রটনা করে আসিতেছিল মিজান ও তার সহযোগী হৃদয়। 

গত ৮ অক্টোবর জনৈক মোঃ জুয়েল এর সাথে আমার মেয়ের বিয়ে হলে বিবাহ হওয়ার বিষয়টি বিবাদী মিজান জানতে পেরে আমার মেয়ে যাতে ঘর সংসার না হয় সে জন্য সে পূর্বের ন্যায় এলাকায় বিভিন্ন ধরনের বদনাম রটনা করতে থাকে এবং আমার মেয়ে ও তার স্বামীর সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করার অপচেষ্টা অব্যাহত রাখে। বিবাদী বিভিন্নভাবে আমার মেয়ের জামাইর নিকট আমার মেয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা বদনাম দেয় 

মৃত্যুর দিন (বৃহস্পতিবার) বেলা অনুমান ১১.৫০ মিনিটে আমার মেয়ে বিবাদীকে অহেতুক মিথ্যা কুৎসা রটনা করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে বিবাদী আমার মেয়েকে তার স্বামীর সাথে ঘর সংসার করতে দিবে না বলে হুমকি  প্রদান করে। আমার মেয়ে যাতে এলাকায় মুখ দেখাইতে না পারে তার জন্য যা করা দরকার তাই করবে বলেও জানায় সে। তাছাড়া বিবাদী মিজান আমার মেয়েকে বিভিন্নভাবে জ্বালা যন্ত্রণা দেয় এবং আত্মত্মহত্যা করার প্ররোচনা মুলক কথা বলে বাসা হতে বের  হয়ে যায়। পরবর্তীতে আমার মেয়ে তার কথা - বার্তায় , আচার - আচরণ ও জ্বালা - যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে সকলের অগোচরে সেদিনই  দুপুর অনুমান ০১.৩০ মিনিটে বাসার সিলিং ফ্যানের লোহার এঙ্গেলের সাথে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।

তদন্ত কর্মকর্তা এস আই আবুল খায়ের বলেন, আসামিকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যা জানা গেছে এবং মেয়ের মোবাইল থেকে যেসব তথ্যও ছবি পেয়েছি তা আমরা কোর্টে প্রেরণ করবো। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি বলা যাচ্ছে না।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি শুনার পর পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সেদিনই থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২৮ অক্টোবর রাতে পলাশপুর এলাকা থেকে মামলার একমাত্র আসামি মিজানকে আটক করতে সক্ষম হয়। আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কোর্টে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

উল্লেখ্য, মিজান আটক হওয়ার পর ভয়ে অনেকে গাঁ ঢাকা দিয়েছে, আতঙ্কে আছে তার সহযোগীসহ ফাঁদে পড়া অন্য মেয়েরা। কোন ভাবে খোলামেলা সে ছবি ফাঁস হয়েগেলে তাদেরও ভাঙবে সংসার, পরিবারের লোকজনসহ এলাকাবাসী দেখলে তাদেরও মরা ছাড়া থাকবেনা কোন উপায়।

আমারসংবাদ/এআই