নভেম্বর ২৬, ২০২১, ০১:৫৫ পিএম
নোয়াখালী কবিরহাট উপজেলার নরোত্তমপুর গ্রামের এক কিশোরীকে প্রেমের ফাঁদে পেলে বিয়ের ৩ মাসের মাথায় স্বামী এবং শশুর পরিবারের প্ররোচনায় আত্মহত্যা করতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। প্রীতি ও তার স্বামী দুখুর ফোন কল টেকিং চেক করলে প্রীতিকে আত্মহত্যা প্ররোচনা বাধ্য করার তথ্য বের হয়ে আসবে বলে জানান মৃতের মা সামছুন্নাহার।
জানাযায়, কবিরহাট উপজেলার মধ্যম নরোত্তমপুরের আছমতের বাপের বাড়ীর বাচ্চু মিয়ার স্কুল পড়ুয়া মেয়ে তানজিনা সুলতানা প্রীতি( ১৫) কে একই ইউনিয়নের ছাদুল্ল্যাপুরের টঙ্গা বাড়ীর মৃত মেহের উল্যাহর পুত্র আব্দুল্যাহ আল দুখু (২৭)প্রেমের ফাঁদে পেলে প্রীতি কে পুশলিয়ে গোপনে কোর্টে বিয়ে করে। সামন্য কিছুদিন তাদের সংসার ভালোই চলছিল। তবে এটা ছিল শুধুই ছলনার কৌশল।
মৃত প্রীতির মা সামছুন্নাহার আমার সংবাদকে অভিযোগ করে বলেন, আমার অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে প্রেমের ফাঁন্দে পেলে আব্দুল্যাহ আল দুখু বিয়ে করে। মেয়ের সুখের জন্য আমরা আর মামলা করি নাই। সেই সুযোগে বিয়ের কিছু দিন পর থেকে দুখু ও তার পরিবার যৌতুকের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। আমার মেয়েটি গোপনে ও অল্প বয়সে বিয়ের করার কারণে আমার কাছে তথ্যটি গোপন রাখে।
যৌতুক না পেয়ে দুখু গত ১২ নভেম্বর তারিখে তাদের আত্নীয়ের বাড়ীতে বিয়ের অনুষ্ঠানে নিয়ে গভীররাতে বেদম মারধর করলে মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে পড়ে, নিরুপায় হয়ে তারা মেয়েকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। রাত ১২টায় তাদের আত্মীয়ের মোবাইলে মেয়ে এবং জামাই দুখু গলায় পাঁশ দিয়েছে বলে খবর দেন। হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার মেয়েটি হাসপাতালে ব্যাথায় ছটপট করছে,ছেলের কোন সমস্যা দেখাযায়নি।
১৩ নভেম্বর জামাই অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল হতে মেয়েটিকে রিলিজ করে আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। আমরা লোক লজ্জায় কাউকে কিছু জানায়নি। দুখু ও তার পরিবারের কেউ মেয়েটিকে দেখতে আসেনি।
অসুস্থ অবস্থায় মেয়েটি জামাই কে অনেক বার ফোন করেছে কিন্তু ছেলে চাপ জানিয়েছে যৌতুক না পেলে মেয়েকে আর তার বাড়িতে নেবে না। মেয়ে শুধু কান্নাকাটি করতো আমরাও লজ্জায় কাউকে কিছু বলতাম না। জামাই একাধিক মোবাইল থেকে প্রীতিকে গালাগাল করতো ও আত্মহত্যা করার জন্য প্ররোচনা দিতো, তাকে আর নিবে না বলে মরে যাইতে বলতো।
লজ্জায় ও টেনশনে মেয়েটি আবার গুরুতর অসুস্থ হলে ১৬ নভেম্বর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে জামাই দুখু ও তার পরিবারকে খবর দিলে কেউ আসেনি। কিছুটা সুস্থ হলে ১৮ নভেম্বর আবারও আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। আমার হতভাগ্য মেয়েটি মোবাইলে জামাইকে আসতে ফোন দিলে সে ফোন রিসিভ করতো না অনেক বার ফোন করলে গালিগালাজ ও মেয়ে কে হুমকি দুমকি দিত। বলতো আমার মা-ভাইকে খুশি করতে পারলে তার বাড়ীতে নিবে।
প্রেমের ফাঁদে বিয়ে করে মেয়েটি লজ্জায় কান্না করতো। মাকে কিছুই বলতো না। ২৩ নভেম্বর প্রীতি তার মা সামছুন্নারকে সন্ধ্যায় বলে আমি আর পারছি না, সে( দুখু)আমাকে আর নেবে না। আমি মরলে দুখু খুশি হবে বলেছে, ছলেন থানায় জিড়ি করবো, সামছুন্নাহার জামাইয়ের সাথে ফোনে কথা বলতে ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেনি। সে সমাধানের চেষ্টায় আর জিডি করেনি।
সামছুন্নাহার বলেন, সন্ধ্যায় আমার ছোট মেয়ের জামা সেলাই করতে বাজারে যাই। রাতে আমি আর আমার স্বামী বাজার হতে আসি ডাকা ডাকি করি দরজা না খোলায় ধাক্কা মেরে ঘরে ঢুকে দেখি মেয়ে মৃত অবস্থায় তার রুমের সাথে দাড়ানো মই এর সাথে মাথা আটকানো।
সামছুন্নাহার বলেন, দয়া করে দুখুর ও প্রীতির ফোন কল শুনলে আত্মহত্যা প্ররোচনার কথা আপনারা ও প্রশাসন জানতে পারবেন।
প্রীতির শাশুড়ি নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমার ছেলে নিজে বিয়ে করাতে আমরা রাগে ছিলাম সত্য, তবে পরে আমরা মেনে নিয়েছি। আমার নেয়াজ পুরের আত্মীয় বাড়ীতে তাদের স্বামী -স্ত্রীর কি হয়েছে জানি না। হাসপাতাল থেকে বৌ তাদের বাড়ীতে নিয়ে এসেছে আর ছেলের সাথে কি সমস্যা আমি জানিনা। বৌয়ের মৃত্যুর খবর শুনে এখন তাদের বাড়িতে আসছি।
প্রীতির স্বামী আত্মহত্যার প্ররোচনায় অভিযুক্ত আব্দুল্যা দুখুর বক্তব্য জানতে একাধিকবার মোবাইলে ফোন দিলেও সাংবাদিক পরিচয় পেলে সে ব্যস্ত আছে বলে ফোন কল কেটে দেন।
কবিরহাট থানার এসআই জসিম উদ্দিন লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আমি ভিকটিমের ভাইয়ের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল তৈরি করি। লাশের ময়নাতদন্ত করার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করি। মৃত প্রীতির ভাইয়ের অভিযোগে একটি অপমৃত্যু মামলা গ্রহন করি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
আমারসংবাদ/এআই