Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

প্রযুক্তি খাতে রোল মডেল হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

মার্চ ১৩, ২০১৫, ১০:৩৫ এএম


প্রযুক্তি খাতে রোল মডেল হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

 


তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত করতে সরকার ও বেসরকারি খাত একযোগে কাজ করছে। বর্তমান বিশ্বে জনগণের ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণের অন্যতম হাতিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি। এ হাতিয়ারকে ধারণ করে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ।

 বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর আওতাধীন বেশ কয়েকটি কোর্স চালু করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। এই কোর্স গুলোর মাধ্যমে দেশের শিক্ষিত বেকারদের কর্মঠ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রযুক্তি বিভাগ আরও জানায়, দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে আইসিটি খাত দেশের প্রত্যেক জেলা শহরে কম্পিউটার হাইটেক পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। উচ্চপ্রযুক্তি শিল্পের বিকাশে সম্প্রতি বাংলাদেশে চতুর্থবারের মতো ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের মতো আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। চার দিনব্যাপী এ সম্মেলনে আইসিটি খাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্য ও সক্ষমতা বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। মূলত ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকেই ব্র্যান্ডিং করার চেষ্টা করা হয়েছে।

এতে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রনালয় আশা করছে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা এখন অন্যান্য খাতের মতো আইসিটি খাতে বিশেষ নজর দেবে বাংলাদেশে। এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আইসিটি সেক্টরের বিভিন্ন দেশের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে মিনিস্টারিয়াল কনফারেন্স করেছি আমরা। ২৫টি দেশের ৮৬ জন প্রতিনিধি আমাদের সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।

 তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের পাশাপাশি দেশীয় অংশগ্রহণকারীদের সাড়া দেখে আমরা অভিভূত। চার দিনের সম্মেলনে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ্য দর্শনার্থী এসেছেন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে। যারা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আগামীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাফল্য নয়, এটি ১৬ কোটি মানুষের সাফল্য। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের প্রতিবেশী দেশ মালদ্বীপ আমাদের দেশের ভিশন ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর আলোকে ‘ডিজিটাল মালদ্বীপ’ করার উদ্যোগ নিয়েছে। দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তারা এ লক্ষ্যে আমাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।

 আমরা ধারণা করছি, সেদিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয় যেদিন আমাদের দেশের তরুণরা নিজেদের মেধা ও বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউবের মতো জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তৈরি করতে সক্ষম হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, নানাবিধ বাধাবিপত্তি ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আইসিটি খাত এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশে। এই অগ্রযাত্রার অন্যতম দাবিদার এ দেশের তরুণ সমাজ। তারা যেভাবে উৎসাহ নিয়ে এই খাতে এগিয়ে আসছে তা সত্যিই আশাজাগানিয়া। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা আশাবাদী, খুব অল্প দিনের মধ্যেই বাংলাদেশে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ডেটা সেন্টার স্থাপন করতে পারব। এর মাধ্যমে সরকারের সব তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া ভাড়া দিয়ে বাড়তি আয়ের সুযোগও তৈরি হবে।

২০১৪ সালে আইসিটি খাতে অগ্রগতিঃ বিদায়ি ২০১৪ সালে দেশের টেলিকম ও আইসিটি খাতের অর্জন ও অগ্রগতি ছিল লক্ষ্যণীয়। এ খাতে বিভিন্ন সাফল্য বর্হিবিশ্বের মনোযোগ লাভ করেছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) প্রদত্ত তথ্যানুসারে বিদায়ী বছরে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে নভেম্বরের শেষ নাগাদ ১২ কোটির কাছাকাছি পৌঁছেছে। অথচ একই সময়ে ল্যান্ডফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা মাত্র ১ কোটি অতিক্রম করেছে।

এদিকে বর্তমানে টেলিফোন এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন, জন্মনিবন্ধন, টিআইএন, পাসপোর্ট প্রভৃতি করার কাজেও বেশকিছু সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এ বছরই মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো দেশের ৬৪টি জেলায় ‘ত্রি-জি’ সেবা চালু করে। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তি, তৃনমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা ও নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় অবহেলিতদের উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং দারিদ্র বিমোচনে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছে। অন্যদিকে দেশে বর্তমানে সাড়ে ৪ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে।

বর্তমানে ছয়লাখ ফ্রি-ল্যান্সার আইটি খাতে কাজ করছে এবং এখাত থেকে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে গত নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব হয়েছে। আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে ৫৫ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরির উদ্দেশ্যে আরেকটি প্রকল্প চলমান আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ভিত্তিক তথ্য প্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান- ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড ইনোভেশন ফাউন্ডেশনের (আইটিআইএফ) মতে, বাংলাদেশের মধ্যবিত্তদের মধ্যে আইটি সামগ্রির ব্যবহার ৮১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

অন্যদিকে উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের মধ্যে এ বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৬৭ শতাংশ ও ৫২ শতাংশ। মোবাইল ফোনের ব্যাপক ব্যবহার মোবাইল ব্যাংকিং’র প্রসারে ভূমিকা রাখছে। যেসব মানুষ সনাতন ব্যাংকিং ব্যবস্থা না নেয়, তারা মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সুযোগ নিচ্ছেন।  বর্তমানে দেশের আড়াইকোটি নিবন্ধিত মোবাইল ফোন গ্রাহক প্রতিদিন গড়ে ৩২৩ কোটি টাকা লেনদেন করে। আর নিবন্ধিত এজেন্ট রয়েছে ৫ লাখ ৯ হাজার। বিদায়ি বছরেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) কাউন্সিল’র সদস্যপদ লাভ করে এবং গ্লোবাল আইসিটি এক্সেলেন্স এওয়ার্ড এবং আইটিইউ ই-গভর্ন্যান্স (ডব্লিউএসআইএস) লাভ করে।

এ বছরই বাংলাদেশ গ্লোবাল আইসিটি এওয়ার্ড লাভ করে। এ ছাড়াও বিদায়ী বছরেই বাংলাদেশকে অগ্রগতির পথে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৩ নভেম্বর জাতিসংঘের ‘সাউথ- সাউথ কো-অপারেশন এওয়ার্ড’ লাভ করেন। এ পুরস্কার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রতি একটি স্বীকৃতি। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় গত ছয় বছরে আইসিটি খাতের অর্জনকে সন্তোষজনক উল্লেখ করে বলেন, আইসিটি শিল্পের উন্নয়নে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

২০২১ সাল নাগাদ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমান সরকার রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করায় গত কয়েক বছরে আইসিটি’র বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছি। আইটি বিশেষজ্ঞ জয় তাঁর প্রবন্ধে বলেন, ২০০৮ সালে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ২ কোটি, ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি। এতে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮ সালে মাত্র ০.৪ শতাংশ লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করতো, বর্তমানে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ শতাংশ।২০০৮ ও ২০১৪ সালের মধ্যে এই সংখ্যাগত তথ্যের তুলনা করে জয় বলেন, আইসিটি’র অন্যান্য ক্ষেত্রেও একইভাবে সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

 জয় বলেন, অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রসর বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে সাধারণ মানুষের কাছে ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার ব্যান্ডউইথ’র মূল্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমিয়েছে। আইসিটি শিল্পের উন্নয়নে আইসিটি অবকাঠামো ও যোগাযোগ সম্প্রসারণের ওপর আমরা গুরুত্ব দিয়েছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইসিটি শিল্পের সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকার ১২টি হাইটেক পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আইসিটি উপদেষ্টা বলেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেইজ, ইন্টারনেট রোড, সায়েন্স প্লাজা ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ সমন্বয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ২৩১ দশমিক ৬৮৫ একর জমির ওপর হাইটেক পার্ক নির্মিত হচ্ছে।