Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

হাজারো মানুষের স্বপ্নের পেপ্যাল

জুলাই ১৫, ২০১৫, ০৭:৪১ পিএম


হাজারো মানুষের স্বপ্নের পেপ্যাল

     পেপ্যাল কী বা কেন দরকার, সেটা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের তেমন দরকার নাই। সেটা তখনই দরকার পড়া শুরু করেছে যখন এদেশের কিছু ছেলে-মেয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু কেনাবেচা শুরু করে এবং কিছু সার্ভিস সেল শুরু করে। ব্যক্তিগতভাবে আমি ২০০৮ সালের আগে পেপ্যালের কোন প্রয়োজনীয়তা মনে করিনি কিন্তু ২০০৮ সালে যখন আমার এক অস্ট্রেলিয়ান ক্লায়েন্ট আমাকে বলল তোমার পেপ্যাল এড্রেস দাও, আমি তোমাকে টাকা সেন্ড করতেছি, তখন আমি পেপ্যাল দিতে পারিনি এবং ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে সেই পেমেন্ট নিতে গিয়ে আমার অর্ধেক টাকা চার্জ বাবদ দিতে হয়েছিল। সেটি হচ্ছে আমি ক্লায়েন্টের সাইটের কিছু এডিট করে দিয়েছিলাম, এই জন্য সে আমাকে ২৫ ডলার দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ২৫ ডলার আমি পেপ্যালের মাধ্যমে নিতে না পারায় আমাকে সে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে পাঠিয়েছিল আর এই জন্য আমার ১০ ডলার চার্জ দিতে হয়েছিল। এরপর থেকে পেপ্যাল এর প্রয়োজনীয়তা আমি ব্যাপকভাবে ফিল করি।

পেপ্যাল তাহলে কী?

আসলে পেপ্যাল অনলাইনে পে করার সবচাইতে সহজ ও নিরাপদ একটা মাধ্যম। এর মাধ্যমে সার্ভিস গ্রহীতা ও সার্ভিসদাতা দুজনেই নিরাপদে টাকা আদান প্রদান করতে পারে। পেপ্যালে ডিস্পিউট নামে একটা চমৎকার সিস্টেম আছে যার মাধ্যমে সার্ভিসদাতা যদি ঠিকঠাক মত সার্ভিস না দেয়, তাহলে সার্ভিস গ্রহীতা তার পে করা অর্থ ফেরত পায়। আর সার্ভিসদাতা যদি প্রমাণ করতে পারে সে ঠিকঠাক সার্ভিস দিয়েছে তাহলে সেটি রিফান্ড হবে না। এই জন্যই খুবই দ্রুত সারা বিশ্বে পেপ্যাল খুবই নিরাপদ একটা পেমেন্ট মাধ্যম হিসাবে পরিচিত পায়। এইখানে ব্যবসায়ী ও কাস্টমার দুজনের স্বার্থ যেহেতু দেখা হয় সেহেতু প্রায় সকল অনলাইন সার্ভিস প্রোভাইডার ইহা একসেপ্ট করে আর ইহার একাউন্ট যেহেতু খোলা খুবই ইজি তাই সবাই এটির একাউন্ট খুলে ইজিলি অনলাইনে সার্ভিস নেয়।

অনলাইনে অন্যান্য পেমেন্ট মেথড:

বাংলাদেশে পেপ্যালের মতই অন্যান্য অনেক পেমেন্ট মেথড আছে। সেগুলোর কাজ প্রায় পেপ্যাল এর মতই সেগুলো হচ্ছে:

    মানিবুকার্স/ স্ক্রিল
    পেওনিয়ার
    নেটেলার
    পেইজা
    পারফেক্ট মানি
    ওয়েবমানি
    বিট কয়েন
    টুচেকাউট
    গামরোড

এই সকল সিস্টেম দ্বারা আমরা পেপ্যাল এর বিকল্প হিসাবে টাকা দেশে আনতে পারি।
 
তাহলে কেন পেপ্যাল বা পেপ্যালের প্রয়োজনীয়তা কী?

বর্তমানে যারা ফ্রীল্যান্সিং করে তারা সাধারণত মার্কেটপ্লেসগুলোতে করে। যেমন আপওয়ার্ক, ফ্রীল্যান্সার, ফাইভআরআর ইত্যাদি। এইসকল মার্কেটপ্লেসে পেমেন্ট সাধারণত পেওনিয়ার, মানিবুকার্স এর মাধ্যমে অথবা সরাসরি ব্যাংকে টাকা সেন্ড করা যায়। সেই হিসাবে ধরতে গেলে যে সকল ফ্রীল্যান্সাররা মার্কেটপ্লেসে কাজ করে তাদের পেপ্যাল দরকার নাই। তাহলে কেন আমরা পেপ্যাল নিয়ে এত উচ্চবাচ্য করতেছি?

আসলে সত্যি কথা বলতে গেলে কোন ফ্রীল্যান্সার যদি মার্কেট প্লেসে কাজ করে তাহলে তার পেপ্যালের কোন দরকার নাই কিন্তু যদি মার্কেটপ্লেস গুলোতে না করে? মার্কেটপ্লেসগুলোর বাইরে কাজ করতে চায়? যদি সে অনলাইনে কোন প্রডাক্ট সেল করতে চায়? যদি সে এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে চায়? যদি সে তার কোন সার্ভিস অনলাইনে বিক্রি করতে চায়? তাহলে কিভাবে পেমেন্ট নিবে? তাহলেও অনেক বিকল্প আছে। যেমন- এফিলিয়েট সাইটগুলোতে সাধারণত পেওনিয়ার সাপোর্ট করে। আপনি যদি নিজে কোন সার্ভিস বিক্রি করতে চান তাহলে টুচেকাউট বা গামরোড ইউজ করতে পারেন। তারা পেপ্যাল থেকে পেমেন্ট নিয়ে আপনার পেওনিয়ার মাস্টারকার্ডে টাকা দিয়ে দিবে।

এরপরও পেপ্যাল দরকার?

জী, এরপরও পেপ্যাল দরকার। কারণ হচ্ছে উক্ত পেমেন্ট মেথডগুলো সব ক্লায়েন্টের নাই। আর সব ক্লায়েন্ট উক্ত পেমেন্ট মেথডগুলোতে কমফোর্ট ফিল করে না। আপনার ক্লায়েন্টের সাথে যদি আপনার খুবই ভালো সম্পর্ক না থাকে, তাহলে সে অন্য পেমেন্ট মেথডে একাউন্ট ওপেন করতে চাইবে না। আমার একটা ক্লায়েন্ট ছিল নাম যোসেফ, তাকে আমি একটা মানিবুকার্স একাউন্ট খুলতে বলেছিলাম। সে খুলতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল, পরে আর খোলেনি। সো ক্লায়েন্টরা এত ইজি জিনিস থাকতে প্যাচ গোচের জিনিসে যাবে না। এই জন্যই পেপ্যাল দরকার। এছাড়া অনেক এফিলিয়েট সাইট আছে যারা শুধু মাত্র পেপ্যালেই পেমেন্ট দেয়। এই জন্য পেপ্যাল দরকার। এছাড়া আপনি যদি অনলাইনে আপনার কোন প্রডাক্ট সেল করেন যেমন জুমশেপার, থিম এক্সপার্ট এর মত দেশী কোম্পানি যারা অনলাইনে থিম সেল করে তাদের মত কোন কিছু যদি সেল করতে চান তাহলে আপনার টুচেকাউট বা গামরোড এর মত প্রসেসর আছে কিন্তু তাদের মেইন সমস্যা হচ্ছে বেশী বেশী রিফান্ড হইলে তারা একাউন্ট ডিজেবল করে দেয়। আর অনলাইনে রিফান্ড হচ্ছে একটা কমন জিনিস। এছাড়া অনেক ফ্রড ট্রানজেকশন হয়। সেক্ষেত্রে এসব কোম্পানি আপনার একাউন্ট ডিজেবল করে দিলে আপনি শেষ মানে আপনি আর পেমেন্ট নিতে পারবেন না। এই জন্য আমাদের পেপ্যাল লাগবে। পেপ্যালে এই সমস্যা খুবই কম।

পেপ্যাল কেন বাংলাদেশে নেই?

বর্তমানে সারা বিশ্বে ১৯৬টা স্বাধীন দেশ আছে তার মধ্যে পেপ্যাল ১৯৩টি দেশে কাজ করছে ২৬টি কারেন্সিতে। তাহলে ৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তাহলে কি আমরা এতই হতভাগ্য যে আমরা বাদ পড়া মাত্র ৩টা দেশের মধ্যে অন্যতম? কেন তাহলে আমরা ৩টি দেশের মধ্যে? আমরা তো ব্যবসা বাণিজ্যের মধ্যে শেষ ৩টি দেশের মধ্যে একটি না। আমরা সভ্য দেশের মধ্যে শেষ ৩টি দেশের মধ্যে একটি না। আমরা মেধাসম্পদ এর দিক থেকে শেষ ৩টি থেকে একটি না। আমরা তো আর্থিক উন্নয়ন এর দিক থেকে শেষ ৩টি থেকে একটি না। তাহলে কেন আমরা ৩টি বাদ পড়া দেশের মধ্যে পড়েছি?

আসলে এই ক্ষেত্রে কাকে দোষ দিব বুঝছি না। আগে শুধু সরকার কে দোষ দিতাম এখন সরকার বলতেছে আমাদের দোষ না দোষ পেপ্যালের। আসলে পেপ্যাল নিজেই আমাদের দেশে আসছে না। আমার মাথায় আসেনা যেখানে পেপ্যালের ব্যবসা আছে তাহলে সেইখানে পেপ্যাল কেন আসবে না? এইটা আমাকে কেউ বুঝিয়ে বলুন। আমেরিকানরা যেখানে ১০ পয়সা ব্যবসা আছে সেখানেই ছুটে চলে যায় কিন্তু বাংলাদেশে বিশাল একটা মার্কেট রেখে কেন আসতে চাচ্ছে না? এইখানে আমাদের মনে হয় কোন ঘাপলা আছে। জনগনের চোখ বেধে সরকার পক্ষে যা বলতেছে তাই জনগণ বুঝতেছে।

এনিওয়ে সার্বিক ভাবে একটাই কথা বলতে চাচ্ছি সেটা হচ্ছে পেপ্যাল দেশে আসুক আর না আসুক দেশের অগ্রগতি থেমে থাকবে না। মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাবে কিন্তু একটু কষ্ট হবে এই আর কি। দেশের জনগণ ইজিলি কষ্ট ছাড়া বেশি ইনকাম যাতে করতে পারে সরকারের সেদিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। এছাড়া আমার আর কিছুই বলার নাই।