Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

আপনি কি প্রক্সি দিয়ে ফেইসবুক চালচ্ছেন? সাবধান...

নভেম্বর ২২, ২০১৫, ১২:১৬ পিএম


আপনি কি প্রক্সি দিয়ে ফেইসবুক চালচ্ছেন? সাবধান...

   নাশকতা রোধে দেশে ফেইসবুক বন্ধ। সেইসঙ্গে বন্ধ রয়েছে ভাইবার এবং ওহায়াটসঅ্যাপের মতো যোগাযোগের টুল বা অ্যাপ। এরই মধ্যে অনেকেই ব্যবহার করছেন ফেইসবুক, আপডেট করছেন ‘স্ট্যাটাস’। কোনো সাইট কেন্দ্রীয়ভাবে ব্লক করা হলে তা সাধারণত ‘ভিন্ন পথে’ ব্যবহার করা যায় যদি আপনার এ বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান থাকে। প্রচলিত ভাষায় একে বলা হয় ‘প্রক্সি’।

সম্প্রতি ‘নিরাপত্তার স্বার্থে' ফেইসবুক, ভাইবার, ফেইসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে’ বলে জানিয়েছেন সরকারের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। কিন্তু এরপরও বাংলাদেশিদের এই সামাজিক মাধ্যমগুলোর ব্যবহার থেমে থাকেনি। অনেকেই টর বা বিভিন্ন প্রক্সি সার্ভারের মাধ্যমে ব্যবহার করছেন এই সামাজিক মাধ্যমগুলোতে।

প্রশ্ন হল, কী এই প্রক্সি সার্ভার?

প্রক্সি সার্ভার হচ্ছে এমন একটি সার্ভার যা ব্যবহারকারীদের অন্যান্য নেটওয়ার্ক সংযোগের সঙ্গে পরোক্ষভাবে নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপনের সুবিধা দেয়। আর ওয়েবে অন্যান্য সার্ভারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য ব্যবহার করা ওয়েব প্রক্সি। এসব ওয়েব প্রক্সির অনেকগুলোই পরিচয় আর স্থান গোপন রাখার নিশ্চয়তাও দেয়। আর টর হচ্ছে অন্যতম আলোচিত একটি প্রক্সি ওয়েব ব্রাউজিং সেবা।

টর কী ও কেন?

টর ব্যবহার করা কেন উচিত তা নিয়ে নিজেদের সাইটে কিছু যুক্তি তুলে ধরেছে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘টর প্রজেক্ট’। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য হল—

০১. এর মাধ্যমে নীতিহীন বিজ্ঞাপন প্রচারণাকারীদের হাত থেকে নিজেদের গোপনীয়তা রক্ষা করা সম্ভব। অনেক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান অর্থের বিনিময়ে ব্যবহারকারীদের ব্রাউজিং রেকর্ড বিজ্ঞাপনদাতাদের দিয়ে দেয়। কিন্তু টর ব্যবহারের মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।

০২. অনেক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের ডেটার সুরক্ষা দিতে পারে না, নিজেদের তথ্য নিয়ে চিহ্নিত গ্রাহকরা এ কারণে টর ব্যবহার করে থাকেন।

০৩. এইচআইভি, জন্মনিয়ন্ত্রণের মত স্বাস্থ্যগত বিষয়ে অনেক গ্রাহক অনলাইনে চিকিৎসকের সঙ্গে বা গবেষকদের জরিপে নিজেদের তথ্য শেয়ার করতে চান না, তারা এসব কাজে টর ব্রাউজার বেছে নেন।

০৪. বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় টর ব্রাউজার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে সাংবাদিকদের বাক-স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করা ফরাসী প্রতিষ্ঠান রিপোর্টার্স উইথআউট বর্ডার্স। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ব্রডকাস্টিং ব্যুরোও সংবাদমাধ্যমগুলোর স্বাধীনতা রক্ষায় টর ব্যবহারকে সমর্থন জানিয়েছে। ‘তদন্তের নিরাপত্তার স্বার্থে আইন-প্রণয়নকারী সংস্থাগুলোরও টর ব্যবহার উচিত’ বলে তারা নিজেদের সাইটে জানিয়েছে।

সত্যিই কি তাই?

এতসব সুবিধার পরও টর বা এ ধরনের কোনো প্রক্সি সেবা ব্যবহার করা উচিৎ নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ-এর সাবেক পরিচালক ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির এ প্রসঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, টর বা এ ধরনের প্রক্সি ওয়েব সার্ভিসকে সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ আর গোপন ভাবার কোনও কারণ নেই।

সুমন বলেন, “টর বা এ ধরনের প্রক্সি সার্ভার ব্যবহারে অনেক সময় ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করানো হতে পারে। এসব ম্যালওয়্যার ব্যবহারকারী কম্পিউটারে অ্যাকসেস নেওয়ার ঝুঁকি থাকে।”

“আপনি যখনই টর ব্যবহার করছেন, মনে রাখবেন তখন আপনি যেমন অন্য কোনো সার্ভার বা পিসি ব্যবহার করে, ধরা যাক, এখন ফেইসবুকে ঢুকতে পারছেন, তেমনি আপনিও কিন্তু একইসঙ্গে আপনার পিসিটিও অন্যকে ব্যবহার করার জন্য অনুমতি দিয়ে দিচ্ছেন। এটি ছাড়া আপনি টর ব্যবহার করতে পারবেন না।” সুমন আরও যোগ করেন, “আপনি না হয় ফেইসবুকে লগইন করলেন, কিন্তু আপনার পিসি ব্যবহার করে অন্য দেশের কেউ যে কোনো নাশকতার জন্য বা আরও ভয়াবহ কোনও কাজে আপনার পিসিটি ব্যবহার করছে না, তার কিন্তু কোনও গ্যারান্টি নেই।”

“এমনকি টর ব্যবহারের ফলে আপনি যে ব্যকডোর তৈরি করে দিচ্ছেন, সেটি আপনার দেশের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হতে পারে।”

সুমন যোগ করেন, “হয়ত আগামী কালই ফেইসবুক সরকারিভাবে খুলে দেওয়া হবে এবং আপনি টর ছাড়াই আগের মতো প্রচলিত ব্রাউজার ব্যবহার করে ফেইসবুক ব্যবহারে ফিরে গেলেন। কিন্তু যতদিন আপনার পিসিতে টর ইনস্টলড অবস্থায় থাকছে, ততদিন কিন্তু আপনি ঝুকিটি বহাল রাখছেন।”

“কাজেই সরকারেরও উচিৎ হয়নি এভাবে ফেইসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্লক করে দেওয়া। এ মাধ্যমে সরকার নিজের অজান্তেই দেশের ভেতরে অসংখ্য ব্যককডোর তৈরি করে দেওয়ার ঝুঁকিটি নিল। এর আগে সরকারের উচিৎ ছিল বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া।”

টর নিয়ে আরও তিন তথ্য

১। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে টরের ‘এক্সিট নোড’ পর্যবেক্ষণ করে ইমেইল অ্যাকাউন্টের ইউজারনেইম আর পাসওয়ার্ড বিচ্ছিন্ন করার কথা জানান সুইডিশ নিরাপত্তা পরামর্শক ড্যান এগারস্ট্যান্ড। এভাবে এ ধরনের ব্রাউজারে আড়ি পেতে তথ্য চুরির ঝুঁকি থাকে।

২। ২০১১ সালের অক্টোবরে ফরাসী প্রযুক্তি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় ইএসআইইএ টর নেটওয়ার্ক ডিক্রিপ্ট করে এর গোপনীয়তা ভঙ্গের দাবি করে।

৩। ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড অটোমেশন ইতোমধ্যে 'এক্সিট নোড' ব্যবহার করে টর বাইপাস করে দেখায়।

তাই, টর বা এ ধরনের প্রক্সি ওয়েব সার্ভিসকে সম্পূর্ণ নিরাপদ আর গোপন ভাবার কোনও কারণ নেই।