Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

নিষিদ্ধ হচ্ছে ফ্রি ফায়ার-পাবজি গেম

আমার সংবাদ ডেস্ক

মে ২৯, ২০২১, ১০:০০ এএম


নিষিদ্ধ হচ্ছে ফ্রি ফায়ার-পাবজি গেম

আলোচিত ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম বন্ধ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে সুপারিশ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতেও আলোচনা হয়। 

সম্প্রতি ফ্রি ফায়ার ও পাবজি নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই দুটি গেম কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের মধ্যে আসক্তি তৈরি করেছে।

সম্প্রতি নেপালে পাবজি নিষিদ্ধ করে দেশটির আদালত। ভারতের গুজরাটেও এ গেম খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। এমনকি গেমটি খেলার জন্য কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে দেশে তরুণ প্রজন্মের মাঝে জনপ্রিয় ফ্রি ফায়ার ও পাবজি। দক্ষিণ কোরিয়ার গেম ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ব্লু হোয়েল এর অনলাইন ভিডিও ২০১৭ সালে চালু হয়। এরপর থেকে এই গেমটি দ্রুত বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অন্যদিকে চায়না প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালে তৈরি করা যুদ্ধ গেম ফ্রি ফায়ার একইভাবে তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু এই গেম দুটির ব্যবহারের ফলে দিনে দিনে এর অপব্যবহার এর মাত্রা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে এর ফলে তরুণ প্রজন্ম যাকে কিশোর গ্যাং বলা হয়। এরা চরমভাবে বিপথগামী হয়ে উঠেছে। 

তিনি বলেন, বিশেষ করে করোনা মহামারির ফলে স্কুল, কলেজ, ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার ফলে অন্যদিকে অনলাইনভিত্তিক ক্লাস হওয়ার ফলে অভিভাবকরা তার সন্তানদের হাতে সহসাই ল্যাপটপ, মোবাইল ডিভাইস তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এ সুযোগের বেশির ভাগ অপব্যবহার ঘটছে। এমনকি তরুণ প্রজন্ম এই গেম দুটির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। 

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, তাই এই গেম দুটি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই। গত ২১ মে চাঁদপুরে মামুন (১৪) নামে এক তরুণ মোবাইলের ডাটা কেনার টাকা না পেয়ে মায়ের সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যা করে। আমরা যখন আগামীর তরুণ প্রজন্মকে সহজলভ্য দ্রুতগতির ইন্টারনেট প্রাপ্তির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি ঠিক তখন আগামী তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তির অপব্যবহার করে বিপথগামী হয়েছে। যা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং নিয়ন্ত্রক কমিশনকে দ্রুত এবং দ্রুততার সহিত এই গেমগুলোর অপব্যবহার বন্ধ এবং ভালো দিক তুলে ধরতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা গড়তে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ধরনের গেম খেলার ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। অনলাইনে গেম খেলার পাশাপাশি ভার্চ্যুয়ালে অর্থ লেনদেন হচ্ছে এমএমএস প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। আর এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্র, সমাজ, ব্যক্তি ও পরিবার।

গেমস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মশিউর রহমান জানান, তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের মধ্যপড়ায় পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়ারা মোবাইলে দেদার গেম খেলছে। এর মধ্যে এগিয়ে আছে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি। সঙ্গী হিসেবে আছে আত্মীয় ও বন্ধুরা। এরা মিডিয়া হয়ে টাকার বিনিময়ে পাবজির বিশেষ কয়েন ‘ইউসি’ টপআপ করে।

গেমসে এ ধরনের টাকা ঢালার নেপথ্যে কাজ করছে কিছু মধ্যস্বত্বভোগী। তারা তাদের ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে অনবরত নানা অফার দিয়ে চলেছে। সার্চ করে দেখা গেছে এসব সাইট ও পেজ কয়েক হাজারের কম নয়। সংশ্লিষ্ট গেমের নাম লিখে গুগল ও ফেসবুকে সার্চ দিলেই আসবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম, কমিউনিটি, ফেসবুক গ্রুপ ইত্যাদি। কোনো গেম বা গেমের সরঞ্জাম (ভার্চুয়াল) যেমন— গান স্কিন, পোশাক, ক্যারেক্টার ইত্যাদি কেনার অসংখ্য সাইট ও ফেসবুক পেজ আছে। এগুলোতে দেয়া থাকে বিকাশ, নগদ বা রকেটের নম্বর। তাতে টাকা পাঠিয়ে কেনা যায় ভার্চুয়াল অনুষঙ্গ। 

দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইএসপি) সূত্রে জানা গেছে, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে এ সময়ে বেশি খেলা হচ্ছে পাবজি, ফোর্টনাইট, ফ্রি-ফায়ার, ভ্যালোরেন্ট, লিগ অব লিজেন্ড, ফিফা-২০২০, কাউন্টার স্ট্রাইক, কল অব ডিউটি ইত্যাদি। অন্যদিকে দেশে এ সময়ের শীর্ষ ফ্রি অ্যান্ড্রয়েড গেমগুলো হলো ফ্রি ফায়ার, পাবজি মোবাইল, পাবজি মোবাইল লাইট, লুডো স্টার, ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানস, ক্ল্যাশ রয়্যাল, ড্রিম লিগ ২০২০, সাবওয়ে সারফার্স ইত্যাদি।

দুই গেমারের গল্প:

নাফিজ ইমতিয়াজ অনলাইন গেমের ভক্ত। অনেকদিন হলো খেলছেন।  তার প্রিয় গেম ভ্যালোরেন্ট। তিনি খেলার জন্য কয়েন কেনেন। কখনো সরাসরি, কখনো ক্রেডিট কার্ড দিয়ে। 

তিনি জানান, সীমিত আকারে খেলেন এবং কোথায় থামতে হবে তা তার জানা আছে। ফলে এটা তার নেশায় পরিণত হয়নি।  

নাফিজ জানালেন, এই গেম দুনিয়ার অনেকে বিভিন্নভাবে খেলার অনুষঙ্গ কিনে থাকেন। এ ধরনের গেমারের সংখ্যা দেশে লাখের বেশি বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের কারেন্সিও ব্যবহার হচ্ছে গেমের অনুষঙ্গ কিনতে। মালয়েশিয়ার রিংগিত এ ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে আছে বলে তার ধারণা। 

কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ডলার বা পাউন্ডের চেয়ে রিঙ্গিত স্থিতিশীল। এ জন্য রিজিওনভিত্তিক কারেন্সি কেনার চলটা বেশি। 

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ধরা যাক আমি গেমের জন্য কিছু একটা কিনবো। রিঙ্গিতে কিনলে দাম কম পড়বে। যদি মালয়েশিয়ায় পরিচিত কেউ থাকে তবে সে ওখান থেকে আমার হয়ে পেমেন্ট করে দিলো। দেশে আমি তাদের লোককে পেমেন্ট দিয়ে দিলাম। আমার খরচ অনেক কম হলো (এটাই মূলত হুন্ডি)। যাদের এই সুযোগ নেই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠানের (মধ্যস্থতাকারী) সাহায্য নিয়ে বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে পেমেন্ট করে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অগণিত বলে জানান তিনি। 

আশরাফুল ইসলাম খেলেন পাবজি। মাঝে মাঝে কল অব ডিউটি। তিনিও গেমে প্রচুর কেনাকাটা করেন। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ‘ইন অ্যাপ পারচেজ’ করেন। এখন কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানালেন। মনোযোগী হয়েছেন পেশার প্রতি। 

আশরাফ জানান, বাংলাদেশ থেকে পাবজি গেমের ইন অ্যাপ পারচেজে মাসে অন্তত ৭০ থেকে ৯০ কোটি টাকার মতো চলে যাচ্ছে। পাবজিতে যে পরিমাণ বিজ্ঞাপন আসে তা থেকে গেম নির্মাতাদের (বাংলাদেশ থেকে) আয় হয় ১৫-২০ কোটি টাকা। গেমের বিশাল বড় বাজার এখানে। গেমস নিয়ে মধ্যস্বত্বভোগী কোম্পানির সংখ্যা হাজারেরও বেশি। 

আমারসংবাদ/জেআই