Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

পৃথিবী থেকে ১২৮০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে পানির চিহ্ন

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক

নভেম্বর ১১, ২০২১, ০২:৪০ পিএম


পৃথিবী থেকে ১২৮০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে পানির চিহ্ন

পৃথিবী থেকে এক হাজার ২৮০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে পানির চিহ্ন শনাক্তের দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। আবিষ্কারটি সঠিক প্রমাণিত হলে এটি হবে পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে এবং পৃথিবীর বাইরে পানির প্রথম সন্ধান।

ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, মহাবিশ্বের বয়স যখন মাত্র ৭৮ কোটি বছর, যে সময় জন্ম নেয়া বিশাল ছায়াপথ SPT0311-58-এ মিলেছে বেশ কয়েকটি আণবিক কণা।

চিলির আতাকামা লার্জ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারে (আলমা) টেলিস্কোপ ব্যবহার করে ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আণবিক কণাগুলো যে পানির, সে প্রমাণ মিলেছে। প্রাচীন ছায়াপথটিতে চিহ্নিত অণুগুলো হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের অণু।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, অণুগুলো সৃষ্টি হয়েছিল বহুকাল আগে। হিলিয়াম ও হাইড্রোজেন বা হিলিয়াম হাইড্রাইড থেকে আরও জটিল রাসায়নিক রূপ নিয়েছে সেগুলো।

নক্ষত্রের জীবদ্দশার শেষ দিকে সেটির কেন্দ্রীয় বস্তুর উপাদান হিলিয়াম ও হাইড্রোজেনের চেয়ে ভারী হয়ে যায়। এই হিসাবে গবেষণা থেকে ধারণা মেলে, ছায়াপথটির জন্মলগ্নের অনেক নক্ষত্র সৃষ্টি হয়ে ধ্বংসও হয়ে গেছে এবং নক্ষত্রগুলোর মৃত্যুর ৮০ কোটি বছরের মধ্যে অণু তৈরি হয়েছে।

পৃথিবী, সূর্য, সৌরজগৎ ও মানবজীবন সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞানের সব তত্ত্বের সঙ্গেই মেলে এ ধারণা।

মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর পর আণবিক গ্যাস নিয়ে সবচেয়ে বিস্তারিত ও জটিল গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত নতুন গবেষণাটি। পানির অণুর উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়ার পাশাপাশি কত দ্রুত মহাবিশ্ব বদলেছে, সে বিষয়েও এ গবেষণার মাধ্যমে ধারণা মিলেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

যে এলাকায় পানির আণবিক কণা পাওয়া গেছে, অর্থাৎ SPT0311-58, সেটি দুটি ছায়াপথের সমন্বয়ে গঠিত। ২০১৭ সালে প্রথম সেটি দেখতে পান আলমা গবেষকরা।

এটি পৃথিবী থেকে এক হাজার ২৮০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে। অর্থাৎ যে আলোটা বিজ্ঞানীরা এখন দেখছেন, সেটির জন্ম এক হাজার ২৮০ কোটি বছর আগে। সময়টি বিজ্ঞানে পরিচিত রিয়নিজেশন যুগ বলে।

মহাবিশ্বের বয়স যখন বর্তমানের ১০০ ভাগের পাঁচ ভাগ মাত্র, সে সময়কে বলা হয় রিআয়নিজেশন যুগ। ওই সময়ে প্রথম নক্ষত্র ও ছায়াপথগুলো সৃষ্টি হয়েছিল।

এখন পৃথিবী থেকে এক হাজার ২৮০ কোটি বছর আগের যে আলো দেখা যাচ্ছে, সে আলোতে দুটি ছায়াপথের মিলন ঘটছে বলে দৃশ্যত মনে হচ্ছে। ছায়াপথ দুটির ভেতরে দ্রুতবেগে নক্ষত্র গঠিত হচ্ছে এবং তারা ছায়াপথের গ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমে সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে তারা একজোড়া বিশাল উপবৃত্তাকার ছায়াপথে পরিণত হচ্ছে।

গবেষণা প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক শ্রীবাণী জারুগুলা বলেন, ‘আলমা টেলিস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ছায়াপথ দুটির জোড়ায়, অর্থাৎ SPT0311-58-এ, আণবিক গ্যাসের সন্ধান পেয়েছি। দুটি ছায়াপথেরই বড় অংশে পানি আর কার্বন মনো-অক্সাইডের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।’

এই জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও প্রধান গবেষক আরও বলেন, ‘অক্সিজেন ও কার্বন খুব প্রাথমিক উপাদান। পানি ও কার্বন মনো-অক্সাইডে এ দুটি উপাদান আণবিক রূপে উপস্থিত থাকে। প্রাণের জন্য দুটিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

SPT0311-58 বর্তমানে সর্ববৃহৎ ছায়াপথ, যার জন্ম মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রাথমিক লগ্নেই। অন্য যেকোনো ছায়াপথের চেয়ে এটিতে গ্যাস ও ধুলার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই ছায়াপথের মাধ্যমে আরও অনেক বিচ্ছিন্ন আণবিক কণা পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাওয়া যাবে। প্রাণ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ এসব উপাদান মহাবিশ্বের জন্মলগ্ন থেকে বর্তমান পর্যন্ত কী প্রভাব ফেলেছে, সে বিষয়েও বিশদ তথ্য দিতে পারে ছায়াপথটি।

আমারসংবাদ/আরএইচ