Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

দ্বাদশ-পূর্বে ইসির ইনকোর্স

আবদুর রহিম ও রফিকুল ইসলাম

আবদুর রহিম ও রফিকুল ইসলাম

জুন ১৫, ২০২২, ০১:১০ এএম


দ্বাদশ-পূর্বে ইসির ইনকোর্স

ক্লাস পরীক্ষায় ইজ্জত নিয়ে প্রশ্ন! আউয়াল কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে। এখনো ফাইনাল বাকি। পরীক্ষার শুরুতেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন-ইসিকে ধাক্কা খেতে হয়েছে।

অনিয়ম ও প্রভাব বিস্তারের  অভিযোগে চিঠি দিয়েও একজন সংসদ সদস্যকে এলাকা থেকে সরাতে পারেনি। অসহায়ত্ব প্রকাশ করে ইসিকে পিছু হটতে হয়েছে। এই কথা বলে যে, সংসদ সদস্য ইসির আইন মানেননি তারই ইজ্জত গেলো! 

আজ কুমিল্লায় ইনকোর্স পরীক্ষার ফলাফলের মাধ্যমে ইসির মেধা দেখার বিষয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু নির্ভর করছে।

বলছেন, কুমিল্লা সিটিতে চোখ রাখা বিশেষজ্ঞরা। হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের অধীনে এটি প্রথম বড় নির্বাচন। এই ইসির অধীনে কেমন হবে কুসিক নির্বাচন? কতটা ‘সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ’ হবে। এমন আলোচনা সর্বত্র। 

অনেকে বলছেন, এটা বর্তমান কমিশনের জন্য একটি ‘এ্যাসিড টেস্ট’। এর আগের কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রায় নির্বাচন নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলো। যদিও কুসিক নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। 

তারা জানিয়েছেন, সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন করার জন্য সব রকমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। নির্বাচন অত্যন্ত সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ঘিরে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। ভোটাররা সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারবেন।

কুসিক নির্বাচনের দলীয় প্রতীকে অংশ নিচ্ছে না মাঠের ও সংসদের বিরোধী দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী (মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার)। যদিও নির্বাচনে অংশ নেয়ার কারণে দলের সব পদ থেকে দুইজনকেই অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। 

এদিকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে লড়ছেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল লড়াইটা হবে এই তিনজনের মধ্যে। নির্বাচনের প্রতীক পাওয়ার পর থেকে শেষ দিন পর্যন্ত অনেকটা ঝামেলাহীনভাবেই সম্পন্ন হয়েছে প্রচার-প্রচারণা। তবে শেষ দিকে এসে স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীই প্রশ্ন তুলেছেন সুষ্ঠু ভোট নিয়ে। 

সাক্কুর অভিযোগ— মানুষের যাকে ভালো লাগবে, তাকেই ভোট দেবে। এটা নিয়ে ভাবার কিছুই নেই। কিন্তু ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য যে পরিবেশ দরকার সেটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মূলত এটাই ভয়।

কায়সার বলেন— শেষ মুহূর্তে নির্বাচনি এলাকায় বহিরাগতদের আনাগোনা বাড়ছে। অলিগলিতে মহড়া দিচ্ছে ক্যাডাররা। এ ছাড়া বিভিন্ন হত্যামামলার আসামিরাও প্রকাশ্যে আসছে। এতে করে ভোটারদের মাঝে ভয় ও শঙ্কা বাড়ছে।

জানতে চাইলে কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু ভোট করার জন্য বদ্ধপরিকর। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্কুলার অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রত্যেকটি কেন্দ্রেই পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ, আনসার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। জেলা প্রশাসক, পুলিশের কর্মকর্তারা সবাই সজাগ থাকবেন। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় চেক পয়েন্ট করা হয়েছে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। আমি আশাবাদী, একটি ভালো নির্বাচন হবে।’

নির্বাচন বিশ্লেষক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এম সাখাওয়াত হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ‘সংসদ সদস্য বাহারকাণ্ডে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা প্রয়োগের অভাব সামনে এসেছে। আইন-কানুন অনুযায়ী ক্ষমতা প্রয়োগে কমিশনের সাহস নেই। এমন অবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে তারা কতটুকু ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে সেটিই বড় প্রশ্ন। কারণ কুমিল্লা নিয়ে তেমন বড় কোনো ইস্যু ছিল না। সাহস থাকলে ব্যবস্থা নিতে পারত। এই দুর্বলতা আগামীতে নির্বাচন কমিশনের ওপর অনেক বড় প্রভাব ফেলবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তেমন বড় নির্বাচন নয়। তাই এই নির্বাচন দেখে বলা যায় না জাতীয় নির্বাচন কেমন হবে।’ 

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আমার সংবাদকে বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের আগেই তাদের নির্বাচন ব্যবস্থায় অসহায়ত্ব দেখে আমরা সবাই হত্যাশ।  

কারণ যে কমিশন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মতো এত ছোট নির্বাচনে একজন সংসদ সদস্যকে নিয়ে নিজেদের দুর্বলতার প্রকাশ করল, সেই নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি জাতীয় নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য হবে! তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে যদি পুরো প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি দল, বিরোধী দলসহ অন্যরা নির্বাচন কমিশনের আদেশ অমান্য করার চেষ্টা করে, তাহলে নাগরিকরা কোথায় যাবে! অসহায়ত্ব প্রকাশ না করে নির্বাচন কমিশনকে আইনের সঠিক প্রয়োগ করা উচিত ছিল। ইসি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের অগাধ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে কমিশন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারত।’ 

সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকে নির্বাচনকেন্দ্রিক ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে কমিশনের দুর্বলতা সামনে এসেছে। মনে হয়েছে, এই কমিশনের অধীনে কোনোভাবেই বড় নির্বাচন হতে পারে না।’

এখন নির্বাচন নামে যা হচ্ছে সব সরকারের অধীনে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের প্রকৃত ক্ষমতা নেই। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। নইলে কোনোভাবেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়া সম্ভব নয়।’

নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা নগরী :  ২৭টি ওয়ার্ডে বিভক্ত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের এবারের মোট ভোটার দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। আজ নগরীর ১০৫টি কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য সোমবার থেকে নগরীতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চার হাজার ২৬০ সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২২৯টি টিমে পুলিশ সদস্য দুই হাজার ৪৬০ জন, ১২ প্লাটুন বিজিবির ২৪০ জন সদস্য, র্যাবের ২৭টি টিমে ২৫০ জন, ১০৫ কেন্দ্রে এক হাজার ২৬০ জন আনসার, এপিবিএনের ৯টি গ্রুপে ৫০ সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য ৫০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মাঠ তদারকিতে নিয়োজিত থাকবেন ছয়জন এডিসি ও ডিডিএলজি।

ভোটের মাঠে ১১০ সন্ত্রাসী নজরে : ভোটের আগে-পরে সন্ত্রাসীরা যাতে কোনো ধরনের সহিংস ঘটনা না ঘটাতে পারে, সে জন্য কুমিল্লা আদর্শ সদরের ৯০ জন ও সদর দক্ষিণের ২০ জনসহ ১১০ জন তালিকাভুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে পলিটিক্যাল ক্যাডার, অস্ত্রধারীসহ নানান অপরাধে অভিযুক্তরা এ তালিকায় রয়েছেন। 

জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, নির্বাচনে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অস্থানে রয়েছে। কুমিল্লার নির্বাচনকে সারা দেশের মডেল নির্বাচন হিসেবে উপহার দিতে চাই। এ জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। 

সূত্র জানায়, ভোটের দিন কেন্দ্র দখলসহ কোনো সহিংস ঘটনা যাতে ঘটতে না পারে, সে জন্য কেন্দ্রগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া অতি ঝুঁকিপূর্ণ প্রত্যেকটি কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থানে থাকবে পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স। তারা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সাথে সাথে অ্যাকশনে যাবেন। 

এছাড়া প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্দিষ্ট সংখ্যক পুলিশ, এপিবিএন সদস্য ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। কেন্দ্রের বাইরে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, বিজিবির টহল টিম, রিজার্ভ ফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে কাজ করবে। সব মিলিয়ে ভোটের দিনে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে ভোটকেন্দ্রসহ পুরো নগরী।

৯০ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ : কুসিক নির্বাচনে ১০৫ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮৯টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, সাতটি কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৯টি সাধারণ ভোটকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এর মধ্যে সদর দক্ষিণ উপজেলার ৯টি ওয়ার্ডের (১৯ থেকে ২৭ নম্বর) ৩২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে সব কেন্দ্রই অধিক ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে। অবশিষ্ট সব কেন্দ্র সদর উপজেলায়। বিজিবি ও র‌্যাবের টহল টিম অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নজরদারি থাকবে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।

সাক্কুর তৃতীয়, রিফাত-কায়সারের প্রথম : তৃতীয়বারের মতো কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে লড়ছেন সাবেক দুইবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। এর আগের দুই নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচিত হন তিনি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী নৌকা প্রতীকের আরফানুল হক এবারই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। আরেক স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের নিজাম উদ্দিন কায়সারও প্রথমবারের মতো নির্বাচন করছেন। মনিরুল হক সাক্কু ২০০৫ সালে কুমিল্লা পৌরসভার প্রথমবার চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে সাক্কু ৬৫ হাজার ৫৭৭ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। 

২০১৭ সালে ধানের শীষ প্রতীকে ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হন। এদিকে আরফানুল হক ১৯৮১ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের বহিঃক্রীড়া সম্পাদক পদে ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচন করে জয়ী হন। তিনি কুমিল্লা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করে একাধিকবার জয়ী হন। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার ১৯৯৮ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সহ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে নির্বাচনে জয়ী হন।

ইভিএমে ভোট : ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে হবে কুসিক নির্বাচনের ভোট। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ইভিএম রাখা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই নির্বাচনি সরঞ্জাম কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ইভিএম নিয়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে নানা আলোচনা। অনেকে বলছেন, এটার মাধ্যমে ভোট হলে এর ‘সুষ্ঠুতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তবে ভিন্নমত পোষণ করেছেন অনেকে। তারা বলছেন, কুমিল্লাবাসীর জন্য ইভিএম নতুন কিছু নয়। 

এর আগেও সিটি নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হয়েছে। এবারের সিটি নির্বাচনে দুই লাখের বেশি ভোটার ১০৫ কেন্দ্রের ৬৪০টি বুথে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ক্যান্টনমেন্ট কলেজ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আশা করি ইভিএমের মাধ্যমে একটি সুন্দর ও পরিকল্পিত নির্বাচন হবে। ইভিএমের মাধ্যমে কোনো ঝামেলা হবে না। আমরা সরকারের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করব।

বিধি-নিষেধ : নির্বাচন উপলক্ষে সোমবার মধ্যরাত থেকে ভোটের দিন দিবাগত মধ্যরাত পর্যন্ত নগরীতে বেবি ট্যাক্সি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো, মোটরসাইকেলসহ স্থানীয় যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যান চলাচলের নিষেধাজ্ঞার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনি এজেন্ট, পর্যবেক্ষকদের (পরিচয়পত্র থাকতে হবে) ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য। 

এছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক ও কতিপয় জরুরি কাজ যেমন— অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কাজে নিয়োজিত যানবাহনে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া মহাসড়কে জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।

একনজরে : মেয়র পদে লড়ছেন পাঁচজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রার্থী হয়েছেন। গত ২৫ এপ্রিল কুসিক নাসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কমিশন। নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তারা হলেন— বাংলদেশ আওয়ামী লীগের আরফানুল হক (নৌকা), ইসলামী আন্দোলনের রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া) ও কামরুল হাসান (হরিণ)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, কুমিল্লায় এখনো পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজ করছে। সব নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে। নির্বাচন কমিশন, ভোটকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাই প্রস্তুত রয়েছে। এ নির্বাচন আপনাদের কাছে এ্যাসিড টেস্ট কি-না? 

এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব নির্বাচনই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, চ্যালেঞ্জিং। সুতরাং কুসিক নির্বাচনসহ সব ভোট সুষ্ঠু করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। তিনি জানান, এবারই প্রথম প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, তাদেরকে কঠোর হাতে বিশৃঙ্খলা দমন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্বাচনে কোনো ধরনের গণ্ডগোল হলে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতায় আনার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া প্রয়োজনে ভোট বন্ধ করারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 

ভোটে দাঁড়িয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেছেন, কুমিল্লার মানুষ এখন ‘ঘোড়ার মধ্যেই ধানের শীষকে’ খুঁজে পাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি কোনো দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, যুদ্ধাপরাধী, নারী নির্যাতনকারী, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি, ঋণখেলাপি, বিলখেলাপি, সামপ্রদায়িক ব্যক্তি, ভূমিদস্যু, কালোটাকার মালিক অর্থাৎ কোনো অসৎ, অযোগ্য ও গণবিরোধী ব্যক্তিকে ভোট দেবে না। আমি জনগনের ভোটে জিতব বলে প্রত্যাশা করছি। 

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বলেছেন, ‘এখানে দলে গৃহবিবাদ পুরোনো হলেও নৌকার প্রশ্নে কোনো বিভেদ নেই। সবাই নৌকার জয়ের জন্য কাজ করছেন। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন দেখে কুমিল্লার মানুষ আনন্দিত। চারদিকে নৌকার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি, মানুষ উন্নয়নের স্বার্থে নৌকাকেই তাদের পছন্দের প্রতীক হিসেবে বেছে নেবেন।’ 

সদ্য সাবেক নগরপিতা মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেছেন, ‘এবারকার পরিস্থিতি তার জন্য একটু ভিন্ন। তবুও তিনি আশাবাদী। সব ধরনের ‘রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশকে’মোকাবিলা করেই অতীতের ভোটের রেকর্ড ভেঙে জয়লাভ করবেন।’ 

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারেনি। কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নৌকার প্রার্থীর জন্য কাজ করছেন। ইসি থেকে এমপি সাহেবকে এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি ইসিকে পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজই করে যাচ্ছেন। মানুষ ইসির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কিন্তু ভোটাররা আশা ছাড়েননি।’ 

তিনি বলেন, ‘আমি ৪২ বছর ধরে রাজনীতি করি। দুই বারের সিটি মেয়র। এর আগে পৌরসভার চেয়ারম্যান ও মেয়র ছিলাম। গত ১৬ বছর জনপ্রতিনিধি হিসেবে সাধারণ মানুষের সঙ্গেই আছি। মানুষ আমাকে আপন করে নিয়েছে। আমিও মানুষকে আপন করে নিয়েছি। এবারের নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররাই আমার জন্য কাজ করছেন। ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।

Link copied!