Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

ফখরুলরাও কি সুলতানের পথে নাকি জামায়াতে জমবে?

প্রিন্ট সংস্করণ॥আবদুর রহিম

মার্চ ১৬, ২০১৯, ০৭:০১ পিএম


ফখরুলরাও কি সুলতানের পথে নাকি জামায়াতে জমবে?

*আমি জামায়াত ছাড়ার পক্ষে -লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান
*জোট ছোট ও পুনর্গঠন একসাথে চলবে -নিতাই রায়
*আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি -শামসুজ্জামান দুদু
*তৃণমূল হতাশ-খায়রুল কবির

হাল ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বের করা এবং আন্দোলন, আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করে সরকারকে চাপের মধ্যে রেখে মুক্তিতে বাধ্য করা। এই দুই মাধ্যমে বিএনপি অনেকটাই ব্যর্থ ! সমপ্রতি কয়েকটি অনুষ্ঠানে তৃণমূলের নেতারা দলের মহাসচিব ও মওদুদ আহমদের কাছে জবাব চাইলেও সরকারের ওপর দায় চাপিয়ে এড়িয়ে যান তারা। বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা মনে করছেন এখন বিএনপির কাছে খোলা আছে দুইপথ! আন্দোলন করে সরকারকে ঠেকানো, না হয় সরকারের ইচ্ছানুযায়ী সমঝোতায় আসা! ক্ষমতাসীনদের কাছে মাথা নত করা। আওয়ামী লীগের প্রেসক্রিপশনে হাঁটা! আর সেটি হতে পারে সুলতান মনসুরের পথ ধরে মির্জা ফখরুলদের সংসদে যাওয়াও! কিন্তু বিএনপি এখন যে পরিস্থিতিতে চলছে এভাবে আর কিছুদিন চললে দল টিকিয়ে রাখতেও দায় হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। মাঠপর্যায়ের নেতাদের অভিযোগ, এখনো সাবেক ছাত্রনেতাদের কার্যত ভূমিকা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না বিএনপি। ছাত্রদল নিয়ে , যুবদল নিয়ে কিংবা মাঠপর্যায়ের নেতাদের নিয়েও মুখোমুখি হচ্ছে না দলটি। দলের কয়েকজন নেতার ভাষ্য, আসলে এ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে দলের চেয়ারম্যান তারেক জিয়া কি চাচ্ছেন এটা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে! খালেদা জিয়ার মুক্তিতে দলের করণীয় কি এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা নেই। মুক্তি ইস্যু বাদ দিয়ে হঠাৎ করে জোট ভাঙা এবং দল পুনর্গঠন কেন করছেন এ নিয়েও তৃণমূল থেকে প্রশ্ন উঠছে। তৃণমূল চাচ্ছে খালেদার মুক্তিতে এক দফা আন্দোলন আর তারেক জিয়া হাঁটছেন অন্যপথে। মাঠপর্যায়ের নেতাদের পরামর্শ থাকলেও সেটি দিতে পারছে না তারা। ঘরোয়া কয়েকজন নেতার পরামর্শেই বিএনপিতে আসছে একের পর এক তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত। এদিকে নির্বাচনের আগে আন্দোলনের ইস্যু নষ্ট করে, ড. কামাল-সুলতান মনসুরদের নিয়ে ঐক্য গঠন করে তৃণমূলের কাছে, জোটের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। প্রশ্নের বোঝা থেকে বিএনপির দীর্ঘদিনের জোটশক্তি জামায়াতে ইসলামীকে বের করে দিয়ে মিডিয়া ও তৃণমূলে আলোচনায় আসতে চাইছে দলটি। হঠাৎ মহাসচিবের পরামর্শে তারেক রহমানের প্রস্তাবে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের ইঙ্গিত আসে বিএনপিতে। সমপ্রতি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনাও হয়েছে। যদিও এটিও সমঝোতা বলে মনে করছেন দলের একটি অংশ। কেননা সমপ্রতি জামায়াতের শীর্ষ নেতা আবদুর রাজ্জাক জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে নিয়ে সমালোচনা করে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। রাজ্জাক তখন বলেও যান, জামায়াতের ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং দল বিলুপ্ত হওয়াও উচিত। আবদুর রাজ্জাক যখন এমন বক্তব্য দিচ্ছেন, তখন লন্ডনে ছিলেন বিএনপির চেয়ারম্যন তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আবদুর রাজ্জাকও! ধারণা করা হচ্ছে এগুলো নিয়ে তখনি কোনো হয়তো সমঝোতা হয়েছে। বিএনপির কয়েকজন নেতার মত, বিএনপি একটি সুসংগঠিত দল। দেশের প্রতিটি আনাচে-কানাচে বিএনপি আছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বের করার ইস্যু বাদ দিয়ে পুনর্গঠন ও জোট ভাঙার মাঝে রহস্যের মিল পাচ্ছে না তারা। কিন্তু এখন হুট করে দল থেকে জামায়াতকে বাদ দিলে এতে বিএনপিরই ক্ষতি মনে করছেন অনেকে। কেননা সামপ্রতিক সময়ে জামায়াত হারিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে, দলের ভাঙন নিয়েও আলোচনায়-সমালোচনায় রয়েছে। অন্যদিকে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের ভরাডুবিতেও জামায়াতের পলিসি আসে বলে অভিযোগ উঠছে। এখন সেই জামায়াতকে বিএনপি যদি বের করে তাহলে সাধারণ মানুষের কাছে জামায়াত কোনো ইস্যু নিয়ে অনন্য জায়গায় পৌঁছে যাবে। যেহেতু জামায়াত ক্ষমতাসীনদের আমলে তাদের নেতাদের হারিয়েছে তাদেরও একটা ক্ষোভ আছে। যদিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, ক্ষমতাসীনদের আমলে এ দলটি আর সক্রিয় রাজনীতি করতে ইচ্ছুক নয়। তৃণমূলের কাছে স্বচ্ছ অবস্থান দেখানোর জন্য তারেক জিয়া যদি হুট করেই এমন সিদ্ধান্ত দেন তাহলে দলের জন্য আরও বড় হুমকি আছে বলেও বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার মত। তাদের ভাষ্য, সরকার ইচ্ছে করলেই জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে পারে , কিন্তু কেন করছেন না! নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো রাজনীতি আছে। তাই বিএনপিকেও বুঝে শুনে রাজনীতি করতে পরামর্শ দলের বড় একটি অংশের।বিএনপির যুবদলের এক নেতা সামপ্রতিক এ দুই ইস্যু নিয়ে আমার সংবাদকে বলেন, বিএনপি যদি এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে ছাত্রদল-যুবদলের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের মাঠে নামিয়ে ম্যাডামের মুক্তির দাবিতে এক দফা আন্দোলনের ডাক না দেয় তাহলে বিএনপির ঘর থেকে সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর মুক্তি ইস্যু চিরতরে হারিয়ে যাবে। দলের চেয়ারম্যন ও মহাসচিবরা হয়তো বিএনপির আগামীর নীতিনির্ধারক হবেন কিন্তু একজন খালেদা জিয়া হারিয়ে গেলে আর পাওয়া যাবে না। বিএনপিতে একজন তারেকের নেতৃত্ব আসবে কিন্তু আর একটি খালেদা পাওয়া যাবে না। হঠাৎ করে বিএনপি জোটের পরিধি কমানো ও দল পুনর্গঠনের কাজে হাত দিচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। খালেদাকে কারাগারে রেখে দলের এ প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে কি কোনো ভূমিকা পালন করবে? জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যন শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমান তাদের নিজস্ব মত প্রকাশ করেছেন। শামসুজ্জামান দুদু আমার সংবাদকে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যু সব দিক থেকে আগে থাকবে। এ মুহূর্তে বিএনপির আন্দোলনও দরকার আছে পুনর্গঠনও প্রয়োজন আছে। দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য এ স্বৈরশাসককে হটানোর জন্য আন্দোলনের জন্যই গতানুগতিক সব কাজ করা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে আন্দোলনে নামা ছাড়া আর কোনো পথ নেই বলেও মনে করেন এই নেতা। অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, ম্যাডামের মুক্তিতে সরকার হার্ডলাইনে, ইচ্ছে করেই সরকার ম্যাডামকে মুক্তি দিচ্ছে না। এখন চলমান ইস্যুতে দল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন জোটের আকার ছোট করা এবং বিএনপিকে পুনর্গঠন করা। দলকে টিকিয়ে রাখার জন্য, সরকারকে হটানোর জন্য দুটোই একসাথে চলবে। খায়রুল কবির খোকন আমার সংবাদকে বলেন, এতদিনেও খালেদা জিয়া মুক্তি হয়নি। এতে তৃণমূল হতাশ। ম্যাডামের মুক্তির বিষয় নিয়ে তৃণমূলে চরম হতাশা। এ মুহূর্তে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপি পুনর্গঠন সেটাও আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। কারণ দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি তা দেশের মানুষ সবাই জানে। এই সরকারকে হটাতে ঐক্যবদ্ধ বিএনপির এখন প্রয়োজন সাংগঠনিক শক্তি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে দলে আলোচনা চলছে। তবে সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, আমি বরাবরই জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ার পক্ষে। কারণ জামায়াত বিএনপির জন্য বড় দায় হয়ে পড়েছে। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আলোচনা থেকে জানা যায়, জামায়াত ছাড়তে হলে কীভাবে তা করা যায় এ নিয়ে আলোচনা চলছে।