Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

ফুটপাত আংশিক দখলমুক্ত

প্রিন্ট সংস্করণ॥ফারুক আলম

মার্চ ১৬, ২০১৯, ০৭:১৭ পিএম


ফুটপাত আংশিক দখলমুক্ত

রাজধানীর ফুটপাত দখল করে দীর্ঘদিন ব্যবসা-বাণিজ্য করছে হকাররা। এতে পথচারী ভোগান্তিতে পড়ায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) গুলিস্তান, শাহবাগ, নিউমার্কেট ও মতিঝিলে হকার উচ্ছেদ করায় অলিগলিতে অবস্থান করছে। দক্ষিণের চেয়ে উত্তর সিটির ফুটপাতে হকারদের দাপট বাড়ছে। সরেজমিন দেখা যায়, গুলিস্তানের হকারদের অনেকে এখন চাঁনখারপুল, হাতিরপুল, আজিমপুর ও দৈনিক বাংলার মোড়ের অলিগলিতে ব্যবসা শুরু করছে। আর ডিএনসিসির আওতাধীন কারওয়ানবাজার, রামপুরা, মালিবাগ, উত্তরা জসিমদ্দিন এলাকার রাস্তার ফুটপাত দখল করে হকাররা ব্যবসা করছে। পথচারীদের চলাচলের ফাঁকা জায়গা নেই বললেই চলে। সকালে হকাররা ফুটপাতে বসে ডালা ও টুকরি নিয়ে। শুধু ফুটপাত নয়, ফ্লাইওভারের সিংহভাগ দখল করে রাখে। ডিএনসিসি আঞ্চলিক কার্যালয়-৪ মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে মূল ফটকের সামনের দুপাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ প্যান্ট, শার্ট ও জুতার দোকান।ভুক্তভোগীদের মতে, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করেছেন ঠিকই। কিন্তু হকাররা সন্ধ্যার আগে যাতে বসতে না পারে সে জন্য ডিএসসিসির কঠোর তদারকি থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল কাশেম আমার সংবাদকে বলেন, লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজরাই তাদের চাঁদাবাজিকে টিকিয়ে রাখার জন্য এসব কাজ করছে। তারা আগের মতোই চাঁদাবাজি করছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এসব চিহ্নিত চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার দাবি করে আসছি।ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদে করতে গত ১৮ বছর আগে হাইকোর্ট সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশনায় দুই সিটিতে কিছুদিন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা হলেও পরে থমকে পড়ে। তবে সম্প্রতি ডিএসসিসি হকারদের মূল পয়েন্টগুলোতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে কিছুটা সফল হয়েছে।জানা যায়, নগরীর ফুটপাতের ২০ ভাগ হকারদের দখলে, ২৫ ভাগ দোকান মালিকদের দখলে, পাবলিক টয়লেট ও অন্যান্য যাত্রী ছাউনি ১২ শতাংশ, রাজনৈতিক দলের অফিস ২ শতাংশ, সব মিলিয়ে ৫৭ শতাংশ দখল এবং ৪৩ শতাংশ উন্মুক্ত রয়েছে।ফুটপাত উন্মুক্ত করতে জনস্বার্থে করা একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দেয়া রায়ে বলা হয়েছিল ‘ঢাকার ফুটপাত ও চলাচলের পথকে জনসাধারণের ব্যবহার এবং পথচারীদের জন্য অবশ্যই পরিচ্ছন্ন ও উন্মুক্ত রাখতে হবে’। ওই রায়ে আরও বলা হয়েছিল, অবৈধ স্থাপনা অপসারণে সংশ্লিষ্টদের পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিয়ে বন্ধ করতে হবে সড়কের ফুটপাত ও চলাচলের পথে নির্মাণসামগ্রী রাখা যাবে না। হাইকোর্টের এই রায় ঘোষণার পরে কেটে গেল ১৮ বছর। দীর্ঘ সময় পর রায়ের আংশিক বাস্তবায়ন করছে ডিএসসিসি।ফুটপাতের ওপর দিনের পর দিন দোকান বসিয়ে ব্যবসা, বাজার, এমনকি বসতবাড়ি পর্যন্ত চোখে পড়ে। এমনই পরিস্থিতিতে নির্মাণধীন ভবন থেকে পড়া ইটের আঘাতে মৃত্যু হচ্ছে পথচারীর। এছাড়া ফুটপাত আটকা থাকায় প্রধান সড়ক দিয়ে হাঁটতে গিয়ে পথচারীরা দুর্ঘটনায় পড়ছেন ও নিত্যদিনের যানজট প্রকট হচ্ছে।সুনির্দিষ্ট আইন থাকলেও ঢাকার ফুটপাত দখল মুক্ত না হওয়ায় জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ বছর আগে রায়ে বেশকিছু নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। তৎকালীন বিচারপতি আবু সাঈদ আহম্মেদ ও বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী হাইকোর্টে বেঞ্চের ওই রায়ে ঢাকার ফুটপাত পরিচ্ছন্ন ও অবৈধ দখলমুক্ত রাখার নির্দেশনার পাশাপাশি জনস্বার্থের সব রায় ও আদেশ বাস্তায়নে একটি তদারকি সেল গঠন করতে বলা হয়। কিন্তু ফুটপাত নিয়ে আংশিক রায় বাস্তবায়ন হলেও সেল গঠনের নির্দেশনাও উপেক্ষিত আছে গত ১৮ বছর।ফুটপাত ও চলাচলের পথ পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত রাখতে সংশ্লিষ্টদের আইনগত বাধ্যবাধ্যকতা পালনে ব্যর্থতাকে চ্যালেঞ্জ করে ব্যারিস্টার ওমর সাদাতের করা রিটে ২০১৩ সালে গণপূর্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও পুলিশ মহাপরিদর্শকের পাশাপাশি ঢাকার ডিসি এবং ঢাকা মেট্রোপলিটনের সব থানায় ওসিকে বিবাদি করা হয়। রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে দেয়া রায়ে ঢাকা সিটি ম্যানুয়াল-১৯৮২ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬ অনুসারে ব্যবস্থা নিতে বিবাদিদের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।রায়ে আরও বলা হয়, ভারতে জনস্বার্থে দায়ের করা মামলায় রায় তদারকি করতে একটি সেল খোলা হয়েছে। একই রকম মামলায় দেয়া আদেশ বাস্তবায়নে যথাযথ দৃষ্টি দেয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সেটি আমাদের দেশে হয়নি। প্রধান বিচারপতি জনস্বার্থে দেয়া (পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন) উচ্চ আদালতের রায় ও আদেশ বাস্তবায়ন নজরদারি করতে একটি তদারকি সেল গঠনে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশনা দেবেন। ফুটপাত নিয়ে মূল আবেদনের বিষয়ে রায়ে বলা হয়, ঢাকা শহরে পথচারীদের ‘সহজ ও মুক্ত’ চলাচল নিশ্চিত করতে ‘স্পষ্ট ও কার্যকর’ আইন থাকলেও বিবাদিদের অবহেলা ও নিস্ক্রিয়তায় তা বাস্তবায়ন হয়নি।আইনের মূলনীতিগুলো সতর্কতা ও মনোযোগের সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, ফুটপাত ও মানুষের চলাচলের পথ দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে বা রাস্তা, সড়ক, ফুটপাত ও চলাচলের পথে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা বা জমা করে রাখার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা গ্রহণে বিবাদিরা কাজ করতে পারেন।রায়ের পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করা হয়, ফুটপাতের দরিদ্র হকারদের সরকার ক্রমান্বয়ে পুনর্বাসন করতে পারেন। পুনর্বাসনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন হকারদের বিদেশে পাঠানোর জন্য উদ্যোগ নিলেও হকার ও সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় উদ্যোগটি স্থগিত হয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপ-সচিব) আসাদুজ্জামান আমার সংবাদকে বলেন, ফুটপাত পথচারীদের চলাচলে উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে অভিযান সফল করেছে ডিএসসিসি। যখন হকার উচ্ছেদ হয় না, তখন সাংবাদিকরা লেখেন, এখন উচ্ছেদ হয়েছে কোথায় সাংবাদিকরা লেখেন? সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব কি, পুলিশ টাকা খাইছে এসব লেখেন। কিন্তু হকারদের কাছ থেকে কারা চাঁদা তুলছে, তাদের নাম জানা সত্ত্বেও মিডিয়া ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে না। তাহলে বুঝবো সাংবাদিকতা।হাইকোর্টের রায়ের পরও ঢাকার ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত না হওয়ার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ থেকে শুরু করে সবাই আদালতের রায় মানতে বাধ্য। অথচ প্রতিনিয়তই আদালতের রায় অমান্য করা হচ্ছে। যা দেশের বিচার বিভাগ তো বটেই, রাষ্ট্র পরিচালনায়ও বিরূপ প্রভাব ফেলবে।