Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

দখলদারদের বিরুদ্ধে এখনো হয়নি মামলা

প্রিন্ট সংস্করণ॥এনায়েত উল্লাহ

মার্চ ১৭, ২০১৯, ০৬:০৬ পিএম


দখলদারদের বিরুদ্ধে এখনো হয়নি মামলা

বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদী বাঁচাতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) দুই নদীর তীরে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। গত দেড়মাস ধরে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে জোরালো উচ্ছেদ অভিযান চালালেও তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত একটি মামলাও করেনি বিআইডব্লিউটিএ। অভিযানে গিয়ে দখলদার রাঘববোয়ালদের যে পরিমাণ জরিমানা করা হয়েছে, তাও সন্তোষজনক নয়। খবর নিয়ে দেখা যায়, যে পরিমাণ জরিমানা তাদের করা হয়েছে; তা খুবই নগণ্য। চলমান এই অভিযান নিয়ে নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্ছেদের পাশাপাশি দখলদারদের যদি জরিমানা ও শাস্তির আওতায় না আনা হয়, তাহলে অভিযান টেকসই হবে না। নদী পুনরায় দখল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং অতীতেও এরকম হয়েছে। তবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বলছেন, আসল অপরাধীদের সরেজমিন না পাওয়ায় আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করা যাচ্ছে না। নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিতে চলমান এ অভিযানে গত ১৩ মার্চ সকাল থেকে তুরাগ পাড়ে উচ্ছেদ চালায় বিআইডব্লিউটিএ। পরবর্তীতে আবারো সেখানে অভিযান চালানো হয়। এতে দেশের নামি দামি রিয়েল অ্যাস্টেট কোম্পানির সিমানা পিলারও ভেঙে দিয়েছে অভিযান পরিচালনাকারীরা। এ সময় শত শত বিঘা জমি দখল করে গড়ে তোলা সিলিকন সিটি ও আকাশ নিলা ওয়েস্টার্ন সিটিসহ আরও কয়েকটি হাউজিংয়ের অবৈধ স্থাপনার পাশাপাশি উপড়ে ফেলা হয়েছে প্লটের সীমানা পিলার। অভিযান পরিচালনাকালীন বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, যত ভবন রয়েছে- কোনো ভবনের রাজউকের অনুমোদন নেই। জানা গেছে, গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা অভিযানে মাত্র এক লাখ ৫০ হাজারের মতো জরিমানা করা হয়েছে। ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। তবে এখন পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধেই মামলা হয়নি। তারা এটাও মনে করেন যে, সরকারের অর্থ ব্যয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। সুতরাং এর ব্যয়ের সমস্ত টাকা এদের কাছ থেকে নেয়া দরকার। আইনের বিধানে দখলদারদের উচ্ছেদের পাশাপাশি মামলারও অনুমোদন রয়েছে। তবে সংস্থাটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, মামলা না দেয়ার জন্য দখলদারদের সরেজমিন না পাওয়ার অজুহাত দেন। ২৯ জানুয়ারি থেকে চলমান এ অভিযানে এখন পর্যন্ত দুই হাজারেরও বেশি অবৈধ স্থাপনা ও পাঁচটি হাউজিং প্রকল্প উচ্ছেদ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। বুড়িগঙ্গা নদী তীরের পুরোটাই অবৈধ দখলদারদের দখলে ছিল। একতলা থেকে তিলতলা, টিনশেড, খুপরি ঘর এমনকি বাঁশ-খুঁটি আর নানা সরঞ্জাম দিয়েও নদীর জমি দখলে নিয়েছিল প্রভাবশালী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে দীর্ঘ সময় ভবন-স্থাপন করে বসবাস করে আসছিল। এমনকি স্থাপনা টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন মহলে তারা তদবিরও করছেন। কিন্তু তাদের কথায় কান দেয়নি বিআইডাব্লিউটিএ। উচ্ছেদ থেকে রেহায় পায়নি শাহ সিমেন্ট, মাহফুজুর রহমান ও হাজী সেলিমদের মতো প্রভাবশালীরাও। তাদের সমস্ত স্থাপনাও ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন থেকেইে নদী বাঁচানোর আন্দোলন করে আসলেও কোনো কাজে আসছিল না। অবশেষে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে বিআইডব্লিউটিএ এ অভিযান শুরু করেছে বলে জানা যায়। তবে উচ্ছেদ অভিযানে দখলদারদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা কেন হচ্ছে না এটাই এখন জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে প্রত্যেকটা কাজেরই কিছু পদ্ধতি আছে কিছু কৌশল থাকে। উচ্ছেদ অভিযানে তারা কিছু কৌশল অবলম্বন করে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি কৌশলের একটি অংশ। তবে কর্তৃপক্ষ মনে করে, দখলদাররা মামলা থেকে রেহাই পাবে না। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই মামলা হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব-উল ইসলাম আমার সংবাদকে জানান, বর্তমানে আমরা মূল কাজ করে যাচ্ছি। উচ্ছেদ অভিযান শেষ হওয়ার পর মামলা এবং জরিমানাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কারণ, মামলা হচ্ছে একটা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। যদি আমরা এখনই এটা শুরু করি, তাহলে কোর্ট থেকে স্টে-অর্ডার এসে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আর কাজের কাজ কিছুই হবে না। কারণ যখন মামলা হয়ে যাবে তখন সেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। কোর্টে চলে যাবে। সুতরাং আমরা আমাদের মূল কাজ শেষ করে তারপর আইনি প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যাবো। জরিমানা কম হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকারিভাবে জরিমানা নীতিমালায় জরিমানার হার কম। তাই জরিমানা কম করা হয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে তাদের ওপর আবার জরিমানা করা হবে। অন্যদিকে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক এবং ঢাকা নদীবন্দর কর্মকর্তা এ কে এম আরিফ উদ্দিন আমার সংবাদকে বলেন, যারা অবৈধভাবে নদী দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করেছিল, আমরা তাদের সে সেমস্ত স্থাপনা ভেঙে দিয়েছি। এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে মামলা না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার জন্য প্রস্তুতি চলছে। আমরা একটি তালিকা তৈরি করছি। সেটা প্রস্তুত হলে উপরস্থ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমরা মামলায় যাবো। তবে সেটা কবে নাগাদ হতে পারে সে সময় জানাতে পারেননি ওই কর্মকর্তা। নদী বাঁচাও আন্দোলনকারীরা মনে করেন অতীতেও অনেকবার এরকম উচ্ছেদ অভিযান চলেছে। পরবর্তী কিছুদিন পর আবার সেটা দখলদারদের দখলে চলে গেছে। সে কারণে তারা অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা চান। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন, যদি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় তাহলে সেট কোর্টে বিচারাধীন থাকবে। তখন বিচারাধীন জায়গায় তারা আর কিছু করতে পারবে না। সুতরাং দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলার কোনো বিকল্প নেই বলে তারা মনে করেন।