Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনের সদিচ্ছা

প্রিন্ট সংস্করণ॥রফিকুল ইসলাম

মার্চ ১৮, ২০১৯, ০১:০৮ এএম


সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনের সদিচ্ছা

সব বাধা অতিক্রম করে দীর্ঘ ২৮ বছর পর দেশের ‘দ্বিতীয় সংসদ’ হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে বেশকিছু সংগঠনের আপত্তি থাকলেও সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। মূলত দীর্ঘ সময়ের জটিলতা কাটিয়ে ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করাটাই ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফল হয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। কাঙ্ক্ষিত ডাকসু নির্বাচনের পর এবার দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি উঠেছে। আওয়ামী লীগ তথা সরকারের এ ব্যাপারে সদিচ্ছা রয়েছে বলেও জানা গেছে। আ.লীগ তথ্য মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে আওয়ামী লীগ। সেই সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়েছে ডাকসু নির্বাচন। এ নির্বাচনে ছাত্র সংগঠগুলো অংগ্রহণ করে নির্বাচনকে প্রাণবন্ত করে তুলে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ সময় পর ঢাবিতে ছাত্রসংগঠনগুলোর সহাবস্থান দেখা যায়। যা দেশের রাজনীতিতে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। বিভিন্ন সরকারের আমলে বন্ধ থাকায় ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের কৃতিত্বও এখন এই সরকারের পক্ষেই যাচ্ছে। ডাকসু নির্বাচন দিয়ে একক প্রশংসা কুড়িয়েছেন রাষ্ট্রপ্রধান শেখ হাসিনা। শুধু তাই নয়, গণতন্ত্র সুসংহত ও নতুন নেতৃত্ব তৈরির জন্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও নির্বাচনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। এই সফলতাকে ধরে রেখে ডাকসুর মতোই জাকসু, চাকসু, রাকসুসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পক্ষে এখন আওয়ামী লীগ। সেজন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ম্যাসেজ দেবে ক্ষমতাসীন দলটির হাইকমান্ড। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ জাকসু নামে পরিচিত। সেখানেও সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৭ বছর আগে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ বা চাকসু নামে পরিচিত। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে ছাত্র সংসদের কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের কোনো কমিটি নেই। এক বছর আগে নানা অভিযোগে কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। তাই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের পাশাপাশি অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর তৎপরতাও রয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীরাই চায় চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ রাকসু নামে পরিচিত। সেখানে দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। অথচ একসময় বাংলাদেশে ডাকসু ছাড়াও চাকসু, জাকসু, রাকসু নামগুলো বেশ আলোচিত ছিল। আর সরকারি কলেজগুলোতেও ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতো। এখন দেশে মোট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪২টি। আর সরকারি কলেজের সংখ্যা ৫৯৮টি। এসব প্রতিষ্ঠানে গড়ে ২৮ থেকে ৩০ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। সূত্র মতে, মূলত ডাকসু নির্বাচনের প্রভাব আছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্র সংসদের ওপর। যেহেতু ২৮ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন হয়নি, তাই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে তেমন আগ্রহ ছিলো না। বিশেষ করে দেশ পরিচালনার জন্য যে সরকার যখন দায়িত্ব পেয়েছে তাদের ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করেছেন। ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে ফল যদি ক্ষমতাসীনদের অনুকূলে না যায়। এই আশঙ্কা থেকেই ওই সকল ক্ষমতাসীনদের পক্ষে থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়। সামরিক শাসক এরশাদের শাসনামলের শেষ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। এরপর আওয়ামী লীগ বা বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তারাও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রতি অনাগ্রহ দেখায়। সর্বশেষ গত ১১ মার্চ নানা প্রতিবন্ধকতা পারি দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। তবে এই নির্বাচন কিন্তু এতো সহজে অনুষ্ঠিত হয়নি। আদালতের আদেশের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। তবে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির সকল নেতাকর্মীর সৎ উদ্দ্যেশ্য ছিলো। ফল হিসাবে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলটির নীরব ভূমিকাই প্রমাণ করেছে। তবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডাকসু নির্বাচনের মতোই প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে। তারা দাবি করছে শুধু সুষ্ঠু পরিবেশ নয়, প্রতিটি ক্যাম্পাসে সহাবস্থান আছে সকল ছাত্র সংগঠনগুলোর। বিশ্ববিদ্যালয়েই নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রীরা বলছে, ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত। এতে শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের যে সকল অধিকার রয়েছে তা আদায় যেমন সহজ হবে, তেমনি নেতৃত্বের বিকাশও ঘটবে। পরে জাতীয় রাজনীতিতে আমরাও অবদান রাখতে পারবো। যা আগামীতে জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্বের সংকট হবে না বলে দাবি করছেন ওই সকল শিক্ষার্থীরা।আ.লীগ সূত্র মতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের মতোই দেশে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। সেই সকল নির্বাচনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নীরব ভূমিকা পালন করার জন্য ইতোমধ্যে দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের মতোই ওই নির্বাচনগুলোকে বিতর্কমুক্ত রাখতে চায় দলটির সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নেত্রীর ওই নির্দেশের কথা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদেরও জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। অন্যদিকে, সারাদেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতকালে ডাকসুর পক্ষে এমন দাবি জানান নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর। এসময় দীর্ঘ ২৮ বছর পরে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা ইকবাল টিপু আমার সংবাদকে বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীর অধিকার আদায়ের জন্য আমাদের যে ছাত্র সংসদ রয়েছে তা পুনরায় চালু হওয়া দরকার। সরকার ডাকসু নির্বাচনের জন্য যে মহান উদ্যোগ নিয়েছে এবং বাস্তবায়ন করেছে। অনুরূভাবে সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন বাস্তবায়ন করবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক আমার সংবাদকে বলেন, ডাকসু নির্বাচন বিতর্কমুক্ত রাখা আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিলো। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমরা সফল হয়েছি। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের মতোই সারা দেশে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার জন্য যে উদ্যোগ দরকার তা আওয়ামী লীগ সরকার গ্রহণ করেছে। আশা করি সফলভাবেই ওইসব নির্বাচন করতে পারবো। ডাকসু নির্বাচনের মতোই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন শিগগিরই হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। গত ১৪ মার্চ একটি অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচন ভালো হয়েছে বিধায় নির্বাচন বর্জনকারীরাও জয়লাভ করেছেন। এ ছাড়া নেতৃত্ব বিকাশের জন্য ছাত্র সংসদের বিকল্প নেই। তাই আশা করব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সহসাই চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।