Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

সড়ক দুর্ঘটনায় এগিয়ে বাস মামলায় মোটরসাইকেল

প্রিন্ট সংস্করণ॥নুর মোহাম্মদ মিঠু

মার্চ ২২, ২০১৯, ০৫:২৪ এএম


সড়ক দুর্ঘটনায় এগিয়ে বাস মামলায় মোটরসাইকেল

সড়কে মৃত্যুর মিছিল। ঘাতক বাস কেড়ে নিলো পথচারীর প্রাণ। থামছেই না মৃত্যুর মিছিল। এ কথাগুলো প্রতিনিয়তই খবরের শিরোনাম হচ্ছে। বিশেষ করে বাসের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া এসব ঘটনায় বিক্ষোভ, মানববন্ধন, রাজপথ অবরোধসহ গোটা দেশেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্যবার। সবশেষ চলমান ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহের মধ্যেই বেপরোয়া সুপ্রভাত বাসের চাপায় সেনা নিয়ন্ত্রিত বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় আবারো দেশব্যাপী আন্দোলনের হুঙ্কার দেখেছে গোটা দেশের মানুষ। এসব ঘটনার রেশ যতদিন থাকছে, ঠিক ততদিনই তৎপর থাকতে দেখা যাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকার পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে। এরপর সড়ক যেমন ফিরে পায় তার চিরচেনা রূপ, তেমনি বাস চালকরাও ফিরে যায় তাদের বেপরোয়া চরিত্রে। তবে পুলিশের ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহের নামে বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে, ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও মোটরসাইকেলের কাগজপত্রাদিসহ বিভিন্ন নিয়মের অনিয়ম দেখতে রাজপথে থাকে ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা। অথচ তাদের নাগালের মধ্যেই বেপরোয়াপনায় লিপ্ত হচ্ছে বাস চালকরা। সড়কে নেমেইে শুরু হয় তাদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ওভারটেকিং করে যাত্রী উঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বাস চালকরা। এমন ওভারটেকিং প্রতিযোগিতায় সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরায় হাত হারায় নাজমা নামের এক নারী। অথচ এতসব অনিয়ম আর চালকদের ফিটনেসবিহীন বাস নিয়ে বেপরোয়াপনায় লিপ্ত হওয়া থেকে ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা শুধু তাই ই নয়- সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বেপরোয়া বাস চালকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে কম হচ্ছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার চলমান ট্রাফিক সপ্তাহের মধ্যেই রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে দুটি বাসের রেষারেষিতে নিহত হয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী। তার মৃত্যুতে আবারো শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠেছে রাজধানীসহ সারাদেশ। দাবি একটাই নিরাপদ সড়ক চাই। রাজীব, দিয়া, মিমের ধারাবাহিকতায় আবরার, একের পর এক ঝরছে তাজা প্রাণ। এ ছাড়া সারাদেশে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। অথচ মৃত্যুর মিছিলে আজ পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য নেই যেখানে মোটরসাইকেল চাপা পড়ে কারো মৃত্যু হয়েছে এবং তার ফলে দেশব্যাপী বিক্ষোভ-সংগ্রামের ঘটনা ঘটেছে। তবুও দেখা যাচ্ছে, ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বাস ছেড়ে মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহনের পিছেই লেগে আছে। পুলিশের চলমান ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহের প্রথম তিনদিনের পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ। ট্রাফিক সপ্তাহের প্রথম তিন দিনের ওই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বাসের বিরুদ্ধেই ট্রাফিক সদস্যরা মামলা করেছে চার হাজার ৭১৯টি, পক্ষান্তরে মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৯ হাজার ৩৩৩টি। যদিও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক গবেষণায় উঠে এসেছে- রাজধানীতে অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা বাসের কারণেই ঘটছে। তা ছাড়া যেখানে-সেখানে বাস থামানো, যাত্রী ওঠা-নামা করা, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি, প্রতিযোগিতাসহ ইত্যাদি অহরহ ঘটনা ঘটাচ্ছে কেবল বাস চালকরাই। বুয়েটের এআরআই জানাচ্ছে, ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৬৬ দুর্ঘটনায় ৬৯৯ জন নিহত এবং এক হাজার ২২৭ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫৪ দুর্ঘটনা বাসের কারণে ঘটেছে। এ ছাড়া ১৩০ দুর্ঘটনা মোটরসাইকেলের কারণে, ট্রাকের কারণে ১৩৩, পিকআপ ৭৩ এবং ব্যক্তিগত গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে ৫৬টি। যদিও পুলিশকে সদা তৎপর থাকতে দেখা যায় মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধেই। এদিকে, সবশেষ গত ৩১ জানুয়ারি শেষ হওয়া ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষের পরিসংখ্যানও দিচ্ছে একই রকম তথ্য। মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে করা মামলার সংখ্যা, বাসের বিরুদ্ধে করা মামলার প্রায় দ্বিগুণ। গত বছরের ১৪ আগস্ট শেষ হওয়া ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহে মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে ৪৩ হাজার ৮৬৩টি। যা বাসের বিরুদ্ধে করা মামলার তিনগুণেরও বেশি। বাস ছেড়ে মোটরসাইকেলের দিকে এত বেশি মনোযোগী কেন পুলিশ এমন প্রশ্নে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ না করায় উত্তর জানা সম্ভব হয়নি। চলতি ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহ শুরু হওয়ার দ্বিতীয় দিনেই রাজধানী নর্দ্দা এলাকায় বাসচাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের শিক্ষার্থী আবরার নিহত হওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবারও রাজধানীর কল্যাণপুরে লরি চাপায় মারা যান এক মাদ্রাসা শিক্ষক। উল্লেখ্য, রাজধানীর রাজপথে শৃঙ্খলা ফেরাতে চলমান ট্রাফিক সপ্তাহ চলবে আগামী ২৩ মার্চ পর্যন্ত।