Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিকল সিসিটিভি

প্রিন্ট সংস্করণ॥ফারুক আলম

মার্চ ২২, ২০১৯, ০৬:৩৩ পিএম


রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিকল সিসিটিভি

রাজধানীতে অপরাধপ্রবণতা কমাতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) স্থাপন ও ব্যবহার নিশ্চিতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন মার্কেট ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিকল হয়ে যাচ্ছে। এতে কোনো অপরাধ সংঘটনের পর অপরাধী সহজেই আত্মগোপনে চলে যায়। ফুটেজ সংরক্ষণের পর সেটি অস্পষ্ট হওয়ায় অপরাধ তদন্তে বিপাকে পড়ছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তান থেকে কয়েক গজ দূরেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এই সিটি কর্পোরেশনের পাশেই সিসিটিভি নেই। এ ছাড়া দৈনিক বাংলার মোড়, প্রেস ক্লাবে সিসিটিভি স্থাপন করলে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিকল হয়ে যায়। দীর্ঘদিন বিকল সিসিটিভি মেরামত না করায় বাধ্য হয়ে ডিএমপি পল্টন মোড়ে সিসিটিভি স্থাপন করে। আর ঢাকার প্রবেশ মুখ আব্দুল্লাহপুরের দুটি সিসিটিভি বিকল। উত্তরা পূর্ব থানার কাছেই আজমপুর চৌরাস্তায় খুঁটি আছে কিন্তু ক্যামেরা নেই। এ অবস্থা শুধু এসব স্থানেই নয়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তত্ত্বাবধানে বসানো সিসিটিভি নষ্ট বা অকার্যকর। এর মধ্যে অনেক স্থানের ক্যামেরা চুরি হয়ে গেছে। সচল থাকা ক্যামেরাগুলো থেকে পাওয়া ফুটেজও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অস্পষ্ট। গুলিস্তান মোড়ে গতকাল দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা ওয়ারী জোনের ট্রাফিক সার্জেন্ট বিষ্ণু দে। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, ২০ বছর আগে গুলিস্তানে অপরাধী ও যানজটের কারণে যাত্রী কিংবা পথচারীরা সার্বক্ষণিক ভয়ে থাকতেন। বর্তমানে এখানে অপরাধপ্রবণতা কমেছে। তবে গুলিস্তান মোড়ে কিছুদিন আগেও সিটি কর্পোরেশনের সিসিটিভি ছিল। এখন সেটি দেখা যাচ্ছে না। একই অবস্থা পল্টন মোড়ের সিটি কর্পোরেশনের সিসিটিভি বিকল হওয়ায় ডিএমপি স্থাপন করে। তিনি গুলিস্তান মোড়ে অতিদ্রুত সিসিটিভি স্থাপনের দাবি জানান। সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরো ঢাকা শহরে দুই সিটি কর্পোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কত সংখ্যক সিসিটিভি স্থাপন করেছে এর পরিসংখ্যান এই মুহূর্তে দেয়া সম্ভব নয়। তবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধী শনাক্তে সিসিটিভি বিশ্বব্যাপী কার্যকর পদ্ধতি হিসেবেই স্বীকৃত। ঢাকায় সিসিটিভির সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। শুধু নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্টে বসালেই পুরোপুরি সুফল আসবে না। অপরাধীরা সিসিটিভি এড়িয়ে বা আগেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অপরাধ ঘটাচ্ছে। কিছু সিসিটিভি থেকে পাওয়া ভিডিওচিত্রের মানও আশানুরূপ নয়। বিশেষ করে একসঙ্গে অনেক মানুষ থাকলে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে শনাক্ত করা মুশকিল হয়ে যায়। শনাক্তের জন্য ছবি বড় করতে গেলে ঝাপসা হয়ে যায়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান আমার সংবাদকে বলেন, বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছর সরকারি ও বেসরকারি, ব্যক্তিগত পর্যায়ে সিসিটিভি ব্যবহার হচ্ছে। প্রথমে সীমিত পরিসরে এর ব্যবহার হলেও ক্রমান্বয়ে পরিধি বেড়েছে এবং ভবিষ্যতেও এর মাত্রা আরো বাড়বে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক সদস্য বলেন, বর্তমানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সন্ত্রাসীদের শনাক্তে সিসিটিভি বিশেষ ভূমিকা রাখছে। অনেক ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ও নিয়মানুযায়ী সিসিটিভি প্রতিস্থাপিত না হওয়ায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পর পলায়নরত সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করা যায়নি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বলা হয়, নিরাপদ ঢাকা’ কর্মসূচি প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে গুলশান, বনানী, নিকেতন ও বারিধারায় এক হাজার ১৪২টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির (এলওসিসি) মাধ্যম এ কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করা হয়। এ কমিটির আওতায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ (ডিএমপি) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্পোরেশনকে সহায়তা করছে। পুলিশ বলছে, ডিএমপির পক্ষ থেকে রাজধানীতে যেসব সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে সেগুলো আধুনিক প্রযুক্তির এবং উচ্চ রেজ্যুলেশন ক্যামেরাসম্পন্ন। এসব ক্যামেরা মাধ্যমে যানবাহনের নম্বর প্লেট শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। এ সংক্রান্ত যন্ত্রাংশ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ থেকে সিসিটিভি ক্রয় করেছে। এ সংযোগ অত্যন্ত উচ্চমূল্যের। এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে এই সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগমাধ্যম ফাইবার অপটিক ক্যাবল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটি মেরামত করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। সমন্বিতভাবে এ কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করতে সহযোগিতার প্রয়োজন। একই সঙ্গে ভিডিও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমসহ বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করার ক্ষেত্রেও দেশীয় বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নেয়া দরকার।ডিএমপির লজিস্টিক শাখার এক কর্মকর্তা জানান, সিসিটিভির তার কাটা পড়া, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটসহ নানা কারণে অকার্যকর হচ্ছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের ক্যামেরাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। প্রসঙ্গত, ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনা, চুরি-ছিনতাই এবং হত্যার মতো ঘটনার প্রমাণ করতে গিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সর্বপ্রথম সিসিটিভির ফুটেজ খোঁজে। ফুটেজ হাতে পেলে অপরাধী শনাক্ত করতে সহজ হয়। কিন্তু বিভিন্ন সময় সিসিটিভি হাতে পেলেও ঝাপসা হওয়ার কারণে ঘটনা তদন্ত করা এবং সঠিক অপরাধী চিহ্নিত করতে বেগ পেতে হচ্ছে।