Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

শাহজালালে ক্লিনারদের সহযোগিতায় স্বর্ণপাচার

প্রিন্ট সংস্করণ॥আব্দুল লতিফ রানা

মার্চ ২৩, ২০১৯, ০৮:০৪ পিএম


শাহজালালে ক্লিনারদের সহযোগিতায় স্বর্ণপাচার

হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ময়লার ডাস্টবিন থেকে আবারো স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে ৭ নম্বর বোর্ডিং ব্রিজের পাশে পুরুষ বাথরুমের আবর্জনা ফেলার ঝুড়ি থেকে সাদা স্কচটেপে মোড়ানো অবস্থায় ৯টি প্যাকেট পাওয়া যায়। যার মধ্যে থেকে ৪৮টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। যার ওজন ১৫ দশমিক ৭৩৮ কেজি। উদ্ধার করা স্বর্ণবারের দাম সাত কোটি ৮৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা বলে জানা গেছে। গতকাল শনিবার সকালে শুল্ক, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. সহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতেই অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা রাত দেড়টার দিকে সেখানে অভিযান চালান। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক স্বর্ণচোরাচালানের সদস্যরা বিমানবন্দরের দায়িত্বরত বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ক্লিনারদের সহযোগিতায় স্বর্ণ পাচার করছে। বিমানবন্দর এলাকায় ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারকারীদের সহযোগিতায় স্বর্ণপাচারের জন্যই ময়লার ঝুড়িগুলো ব্যবহার করছে। আর এই ময়লা অপসারণ করার জন্য যেখানে টাকা পাওয়ার কথা, সেখানে উল্টো টাকা দিয়ে বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে বলেও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সময় বিমানবন্দরের বোর্ডিং ব্রিজের শৌচাগার, ময়লার ঝুড়ি, ট্রলির নিচে বা কার্গো গুদামের উচ্ছিষ্ট থেকে কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ, মাদকদ্রব্যসহ নানা ধরনের পণ্য উদ্ধার করা হয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় বর্জ্য ও বর্জ্য রাখার পাত্র বা ঝুড়ি থেকে এসব সোনার চালান জব্দ করা হয়। আর ওইসব ঘটনার তদন্তে সোনা চোরাচালানসহ নানা অপকর্মে বিমানবন্দরে কর্মরত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য অপসারণকারীরা (ক্লিনার) জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিভিল এভিয়েশনের কর্মচারীরা জানিয়েছেন। বর্জ্য অপসারণকারী প্রতিষ্ঠান কী স্বার্থে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে বর্জ্য নিচ্ছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে অনেকেই মনে করছেন। বিমানবন্দরের ভেতরে বারবার স্বর্ণের চালান ধরা পড়ায় কৌশল পাল্টিয়েছে চোরাকারবারীরা।বিমানবন্দর এলাকার (সিএএবি) ময়লা বা বর্জ্য মোটা অংকের টাকা দিয়ে অপসারণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিএএবি কর্তৃপক্ষ আগে নিজস্ব টাকা ব্যায় করে শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের অন্য দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও অন্যান্য বিমানবন্দরের বর্জ্য বা ময়লা অপসারণ করাত। সেখানে এখন সিএএবির প্রশাসন ঠিকাদারদের কাছ থেকে উল্টো লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ময়লা অপসারণ করানো হচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন চোরাচালানিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আর এই অনৈতিক কাজের সাথে সিএএবির কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। এ ধরনের অবৈধ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সিএএবির একাধিক কর্মচারী আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে আটকও হয়েছেন। জানা গেছে, হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কুর্মিটোলা, তেজগাঁও ও বনানী আবাসিক এলাকার ময়লা আবর্জনা অপসারণের কাজ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ গত ২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর ক্রাউন প্রপার্টি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী আলম হায়দার মিঠুকে ইজারার দায়িত্ব দেন। আর এর জন্য সিএএবিএ কর্তৃপক্ষ তাকে প্রতি বছর ৩৭ লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৭ টাকা প্রদান করা হতো। আর ময়লা পরিষ্কার করার কাজ নিতে মিঠুকে লাখ লাখ টাকা সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হতো। তার ইজারার মেয়াদ ২০১৭ এর ১ আগস্ট থেকে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ছিল। অপর এক সূত্র জানায়, ক্রাউন প্রপার্টি সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে আগের চেয়ে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করে বিনা দরপত্রে পুনরায় এক বছরের জন্য লাইন্সেস নবায়ন করেছেন আলম হায়দার ওরফে মিঠু। শুধু তাই নয়, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ক্রাউন প্রপার্টির নামে ইজারা বরাদ্দের জন্য আলম হায়দার ওরফে মিঠু তৎপর হয়েছে। বিমানবন্দরের একজন কর্মচারী জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ময়লা-আবর্জনা বা উচ্ছিষ্ট বর্জ্য অত্যন্ত মূল্যবান বস্তুতে পরিণত হচ্ছে। একসময় সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের (সিএবি) নিয়োগ করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অর্থের বিনিময়ে বর্জ্য অপসারণ (ক্লিনিং) করলেও এখন তা উল্টো টাকা দিয়ে অপসারণ করছে। আর বর্জ্য অপসারণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর স্থানে চলাচলের সুযোগে বিমানবন্দরের নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুখীন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এ ব্যাপারে সিভিল এভিয়েশনের জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা গ্রুপ ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুকের সেল নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে আব্দুল্লাহ আল ফারুকের সেল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করে এ প্রতিবেদকের মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ দেন- ‘আই এম ইন এ মিটিং’।