Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ

প্রিন্ট সংস্করণ॥রফিকুল ইসলাম

মার্চ ২৪, ২০১৯, ০৬:২৯ পিএম


আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরষ্কুশ বিজয় অর্জনের পর টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সরকার। ওই নির্বাচনের ফলাফল বাতিলসহ পাঁচটি দাবি নিয়ে আগামী এপ্রিল মাস থেকে প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সভা-সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে ফ্রন্ট নেতাদের ওইসব কর্মসূচি আমলে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা বলছে, ফ্রন্ট নেতাদের আন্দোলনের ঘোষণায় সরকার বিব্রত নয়।জানা যায়, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোট ডাকাতি, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, নিরাপদ সড়ক, উপজেলা নির্বাচনে অব্যবস্থা ও ডাকসু নির্বাচনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে আগামী ৩০ মার্চ থেকে শুরু করে এপ্রিল মাসজুড়ে কেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রতিটি বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরগুলোতে সভা-সমাবেশ করার ডাক দিয়েছে বিএনপি ও তাদের জোট শরিকরা। গত শুক্রবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই বৈঠকে তারা দাবি করেন— গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, নিরাপদ সড়ক, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের অব্যবস্থা, ডাকসু নির্বাচনে ভোট ছিনতাইসহ সামগ্রিকভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সরকারের হাতে জিম্বিসহ অর্থনৈতিক বৈষ্যম বৃদ্ধিসহ সরকার লুটপাটের ব্যবস্থা কায়েম করেছে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এই কর্মসূচির কথা জানান, ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, আমরা এপ্রিলে সারা দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে কর্মী সমাবেশ ও গণশুনানি শুরু করবো। এরপর জেলাগুলোতে যাবো। সারা দেশে এ আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।ওই বৈঠক শেষে আসম আবদুর রব বলেন, ইতোমধ্যে ডাকসু নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়েছে, নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন হয়েছে। সরকার স্বীকার করেছে নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা বিধানে তারা ব্যর্থ হয়েছে। এবং গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে ভোট ডাকাতি করে বিনা নির্বাচনে অনেকে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, যারা ঋণখেলাপি ও জনগণের আমানতের কোটি কোটি টাকা লুট করেছে।এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের এমন অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না ১৪ দলীয় জোট সরকার। জোটের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, বিগত দশ বছরে বিএনপি যেসব আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তার মধ্যে একটিতেও সফল হয়নি তারা। বিশেষ করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কটের পর বিভিন্ন আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও রাজনীতির মাঠে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এরপর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ঈদের পরই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলন করার কথা বলেছিলো। কিন্তু তখনো তারা সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামের জোট গঠন করেন। এই জোটের রাজনীতিতেও সফল হয়নি বিএনপি। বরং নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে পরাজয়বরণ করতে হয়েছে। যা ভোটের রাজনীতিতে একটি রেকর্ড। তাই রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে আবারো এ ধরনের ঘোষণাকে একটি অপকৌশল হিসাবেই দেখছে ক্ষমতাসীন আ.লীগের জোট শরিকের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা।সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া আমার সংবাদকে বলেন, ঐক্যফ্রন্টের নেতারা আজ যে আন্দোলনের কথা বলছে এই আন্দোলন কোনো দিন গড়ে তুলতে পারবে না। সেই শক্তি বিএনপি ও ড. কামাল হোসেনের নেই। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এই ধারাবাহিকতা আগামীতে থাকবে। ঐক্যফ্রন্টের ওইসব দফা নিয়ে এখন আমাদের ভাবার কিছু নেই। এই বিষয় নিয়ে বিব্রত নয় ১৪ দলীয় জোট সরকার। আ.লীগ সূত্রে বলছে, জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছিলো ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিএনপির জোট শরিক নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তারা সে সময় ভোট ডাকাতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেন। শুধু তাই নয়, শেষ পর্যন্ত ফ্রন্ট প্রার্থীরা উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেছিলো। ওই মামলায় ‘ভোট কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ’ আনা হয়ে ছিলো। এর পর একই অভিযোগ এনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনকেও প্রত্যাখ্যান করেন তারা। জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যর্থ হওয়ার পর আবারো সারা দেশে সভা-সমাবেশ ঘোষণাকে বর্তমান রাজনৈতিক ইস্যুতে আমলে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আ.লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছে. ঐক্যফ্রন্টের এই ঘোষণায় বিব্রত নয় আ.লীগ। আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, যেকোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সভা-সমাবেশ করার অধিকার বাংলাদেশে আছে। তাই তারা (ঐক্যফ্রন্ট) বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে যে সভা-সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে এটা নিয়ে এখন ভাবার কিছুই নেই। কিন্তু সভা-সমাবেশের নামে তারা যদি মানুষ পুড়িয়ে মারার রাজনীতিতে আবারো ফিরতে চায় তা হলে তাদের প্রতিহত করার জন্য আ.লীগ প্রস্তুত আছে। তিনি বলেন, বিগত দিনে সরকার বিরোধী অনেক কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। আগামীতেও তাদের ওই কর্মসূচি ব্যর্থ হবে। দেশের মানুষ বিগত সময়ে সাড়া দেয়নি এখনো দেবে না। সাধারণ মানুষ এখন শুধু উন্নয়ন চায়।