Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

ভোটারের উপস্থিতি কম উচ্ছ্বসিত বিএনপি

প্রিন্ট সংস্করণ॥আবদুর রহিম

মার্চ ২৬, ২০১৯, ০৬:২৩ পিএম


ভোটারের উপস্থিতি কম উচ্ছ্বসিত বিএনপি

*নির্বাচনে ভোটার নেই, জনগণ নীরবে ক্ষমতাসীনদের জবাব দিচ্ছে- দাবি বিএনপির
*দল পুনর্গঠনের পর ক্ষমতা দখলের প্রস্তুতি নিতে তৃণমূলে বিএনপির নির্দেশনা, মাঠের নেতাদের নিয়ে বৈঠক

জাতীয় নির্বাচনের পর তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হলো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এর আগে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন হলো। সব নির্বাচনেই ছিল ভোটার সংকট। প্রার্থী, প্রিসাইডিং অফিসার, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই ভোটারের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ভোটকেন্দ্র ছিল প্রায় শূন্য। ডাকসু নির্বাচনেও অনিয়মের চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। ভোটের এই পরিস্থিতিতে বিএনপির ঘরে উৎসাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণের পর অনেকে প্রশ্ন তুলেছিল- ড. কামালদের নিয়ে নির্বাচনে যাওয়া বিএনপির ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। এই সরকারের অধীনে, ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় রেখে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের কারচুপির ভোটচরিত্র উন্মোচনের জন্যই বিএনপি নির্বাচনে গেছে। তৃণমূলে দলের নেতাকর্মীদের কাছে ও দেশের জনগণের কাছে বিএনপির পক্ষ থেকে এমন জবাব দেয়ার পর দিনে দিনে ক্ষমতাসীনদের অধীনে নির্বাচনের চিত্র ফুটে উঠায় স্বস্তি ফিরছে বিএনপিতে। দেশের নির্বাচনে ভোটার নেই, জনগণ নীরবে ক্ষমতাসীনদের জবাব দিচ্ছে বলেও দাবি করা হচ্ছে বিএনপির পক্ষ থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্ষমতাসীনদের অধীনে সব নির্বাচনের ভোটের চিত্র বিএনপি সংগ্রহ করছে। দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য, ছবি, ভিডিও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও উপস্থাপন করা হচ্ছে। বিএনপি মাঠপর্যায়ে আন্দোলন করতে না পারলেও দল পুনর্গঠনকালে নির্বাচনে ভোটারশূন্য পরিস্থিতি বৃহৎ ভূমিকা পালন করছে। দলের হাইকমান্ড থেকে তৃণমূল নেতাদের বলা হচ্ছে, বিএনপি নির্বাচনে যাওয়া উপযুক্ত সিদ্ধান্ত ছিল। ক্ষমতাসীনদের যে চরিত্র তার জবাব জনগণ নীরবে দিচ্ছে। এখন কেউ আর উৎসব-আমেজ নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছেন না। ক্ষমতাসীন দল নিজে নিজে নির্বাচন করলেও সেখানেও নিজেরাই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন। নির্বাচনে ভোটার নেই, এজেন্ট, প্রিসাইডিং অফিসাররা ভোটার না পেয়ে ঘুমাচ্ছেন! গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদে ক্ষমতাসীন দল দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। আর বিএনপি দল পুনর্গঠন করে ফের ক্ষমতা দখলের প্রস্তুতি নিতে তৃণমূলে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, মানুষ এই সরকারকে ইতোমধ্যে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণ একটি নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছে। আর কেন্দ্র থেকে জনগণের পক্ষে নির্দেশনা আসবে তখন সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামতে হবে। সমপ্রতি এ নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও। তিনি বলেছেন, বিএনপি প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে, শিগগিরই এ নিয়ে ঘোষণা আসবে। এ ছাড়াও তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশ্যে সমপ্রতি আরেকটি অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, যারা আন্দোলনে নামতে ভয় পান, তারা যেন পদ ছেড়ে দেন। বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মাঠপর্যায়ের যেসব নেতা দলের হাইকমান্ডের ওপর রাগে-ক্ষোভে দূরে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। মাঠে টিকে থাকার জন্য মানসিক দৃঢ়তা তৈরি করা হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপিপন্থি এক বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো ব্যক্তিত্ব যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যার ঋণ বাংলাদেশ কোনোদিনই শোধ করতে পারবে না। তাকে মেরে ফেলার পর সঙ্গে সঙ্গে তো দূরের কথা, এক-দুই বছরের মধ্যেও কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে পারল না কেন? তাহলে কি বঙ্গবন্ধু এক সেকেন্ডের মধ্যে প্রচণ্ড অজনপ্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন? তখন বা তারপর কি আওয়ামী লীগের সংগঠন উধাও হয়ে গিয়েছিল? আসলে ভয়াল আতঙ্ক বা ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে পারেনি। সেই রকমই একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলেই এত বড় একটা জালিয়াতির নির্বাচনের পরও মানুষ চুপ থাকছে। এটা শুধু বিএনপির সংকট নয়, এই সংকট বাংলাদেশের মানুষের, পুরো জাতির। এ পরিস্থিতিগুলো নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশকে ইতোমধ্যে বোঝাতে সক্ষম বলেও কয়েকটি সূত্রের দাবি। পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ হলেই খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যু নিয়ে এবং সামপ্রতিক প্রেক্ষাপটে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন দাবি নিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবে। বিএনপির একটি সূত্রের দাবি, এবার আন্দোলন হবে দুই প্রক্রিয়ায়। ড. কামালকে রেখে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ও দলের পক্ষ থেকে একক কর্মসূচি। এ নিয়ে শিগগিরই আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হবে। দেশের চলমান নির্বাচনে আস্থা হারিয়ে ফেলছে জনগণ। এবার এ নিয়ে মুখ খুলছেন দেশের বিশেষজ্ঞরাও। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হলে ভোটারের উপস্থিতি কম হয় বলে সমপ্রতি এমন দাবি করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মানুষ নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এর কারণ হলো, আগেই দেখেছে ভোটাররা ভোট দিতে পারছেন না, তাদের ভোট আগেই হয়ে যায়, বুথ দখল হয়ে যায়। আগের বড় নির্বাচনগুলোতে যা হয়েছে তার প্রভাব পড়ছে। তার মতে, মানুষের মনের মধ্যে একটা কথা- আমি গেলেই কী, না গেলেই কী? এই রকম ধারণা যখন জন্মে তখন ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকে না। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, যদি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হয় সেখানে গিয়ে মানুষ কাকে ভোট দেবে? এ নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু আমার সংবাদকে বলেন, নির্বাচন কি জিনিস ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমলে মানুষ দে?খে?ছে। আর বাংলাদেশে শেখ হাসিনার আমলে নির্বাচন নামে যে তামাশা এর আগে কোনো সরকারের আমলে মানুষ এমন দেখেনি। নির্বাচন নিয়ে তামাশা হানাদার বাহিনী, পাকিস্তানি বাহিনী, ব্রিটিশ বা?হিনীর কেউ পারেনি। কিন্তু শেখ হাসিনা পেরেছেন। আন্দোলন ছাড়া কোনো সরকারকে হটানো সম্ভব নয়। এ জন্য দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে বলেও ইঙ্গিত দেন এই নেতা। দেশে এখন নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম হচ্ছে দাবি করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আমার সংবাদকে বলেন, আমার জীবনেও আমি এমন নজিরবিহীন ঘটনা দেখিনি। আগে দেখেছি অভিযোগ তুলে প্রার্থী ভোট বর্জন করে, আর এখন দেখছি ভোটাররাই ভোট বর্জন করছে। নির্বাচনের নামে সরকার নতুন নতুন তামাশা করছে বলেই অভিযোগ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের। তিনি বলেন, মানুষ ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন সরকারকে বর্জন করা শুরু করেছে। সরকারের উচিত জনগণের ভাষা বুঝে পদত্যাগ করা।