Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

অনুমোদন পায়নি ‘রিং রোড’ প্রকল্প

প্রিন্ট সংস্করণ॥নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ২৭, ২০১৯, ০৭:২৭ পিএম


অনুমোদন পায়নি ‘রিং রোড’ প্রকল্প

ডিজাউন অসর্ম্পূণ হওয়ায় ঢাকা শহরের চারপাশে রিং রোড প্রকল্প ফেরত পাঠিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বিভিন্ন স্থানে ইউলুপ ইন-এক্সিটসহ বেশ কিছু বিষয় যুক্ত করে নতুন ডিজাইন ও ব্যয় নির্ধারণ করে প্রকল্পটি আবারো পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে কমিটি। গতকাল সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে প্রকল্পটি পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি। তথ্য মতে, ঢাকার যানজট নিরসন এবং বিভাগীয় শহরগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ঢাকার চারপাশে এলিভেটেড রিং রোড নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের দীর্ঘ দিনের। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ নদী তীর ঘেঁষে এলিভেটেড রিং রোড নির্মাণ করে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হলে যানজট কমে আসবে। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে ঢাকা শহরের চারপাশে রিং রোড করার পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসন ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকল্পে এলিভেটেড এক্সপ্রেস সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প এবং ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পরিকল্পিতভাবেল্যান্ডিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। স্থাপিত এলিভেটরগুলোর সঙ্গে প্রয়োজনে সংযোগ দেয়া হবে। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ নদীতে নৌপথ এবং এরই পাড় ধরে ভবিষ্যতে রিং রোড করে দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। ঢাকার শহরের প্রচুর জনসংখ্যার উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া পদ্মা সেতু সচল হলে দক্ষিণ-পশ্চিমা অঞ্চলের ট্রাফিক ব্যবস্থা সরাসরি ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হবে। এ ক্ষেত্রে রিং রোড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দক্ষিণাঞ্চলের গাড়ি সরাসরি চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন রুটে যুক্ত হবে। ঢাকায় ঢুকতে এবং বের হতে বিভিন্ন পয়েন্ট ল্যান্ডিং ও স্টার্টিং পয়েন্ট থাকবে। আর এতে ঢাকায় চাপ বাড়বে না বরং ঢাকার যানজট নিরসনসহ নগর জীবনে আধুনিক ছোঁয়া পাবে। সূত্র মতে, রাজউকসহ বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় প্রকল্পটির প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করা হয়। পরবর্তীতে পাবলিক প্রাইভেট-পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে কনস্ট্রাকশন অব আউটার রিং রোড প্রকল্প হাতে নেয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জাপানের একটি প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন করতে সম্মত হয়। চীনের একটি একটি কোম্পানি নির্মাণ কাজ করবে। গতকাল প্রকল্পটি নীতিগত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ঢাকার শহরে জনসংখ্যা প্রচুর। যানজটের চাপ বেশি। বিদেশের বড় বড় শহরগুলো একই কাজ করেছে। লন্ডন শহরে সার্কেল রোড করেছে। আমাদেরও একই রকম। আমরাও যানজট কমাতে চাই, রিং রোড করতে হবে। রিং রোড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যানজট কিছুটা হলেও কমবে। তিনি আরও জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে পশ্চিম এবং দক্ষিনের সাতটি জেলা সকল ট্রাফিক ঢাকার রাস্তা দিয়ে আসবে। দেড় থেকে দ্বিগুণ ট্রাফিক চাপ বেড়ে যাবে। আমরা আমাদের রিং রোড করতে হবে। প্রকল্পটি যেভাবে আসছে, সেখানে ইউলুপ, ইন এবং এক্সিট যথাযথ হয়নি, সে জন্য ফেরত দেয়া হয়েছে। এটা খুবই গুরত্বপূর্ণ প্রকল্প। নতুন ডিজাউন করে আবারো নিয়ে আসবে। যেহেতু ডিজাইনে পরিবর্তন আসবে, তাই খরচ কিছু বাড়বে বলেও জানান মন্ত্রী। এদিকে, সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে- আন্তজার্তিক কোটেশনের মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্টিক টন গম কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। এতে মোট ব্যয় হবে ১১৪ কোটি টাকা। সরবরাহ করবে সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান এগ্রোকো ইন্টারন্যাশনাল। হাই-টেক পার্ক, সিলেট (সিলেট ইলেক্ট্রনিক্স সিটি) প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। ভেরিয়েশন প্রস্তাবে ব্যয় হবে আরও ১৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের ৪৩৭ কিলোমিটার ড্রেজিংসহ আনুষঙ্গিক কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয় কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৪০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের সুরক্ষা বিভাগের আওতায় দেশের ১৫৬ টি উপজেলা সদর/স্থানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের ১৫টি প্যাকেজে ৩৪টি লটে ৩৪ প্রকার অগ্নিনির্বাপণী ও উদ্ধার সাজসরঞ্জাম ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন পায়। এতে ব্যয় হবে ৮৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বিদ্যমান পাসপোর্ট সরবরাহকারী যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিলারু হতে আগের চুক্তির ধারাবাহিকতায় এবং মূল্য চুক্তির মূল্যে দ্বিতীয় ভেরিয়েশনের দুই মিলিয়ন পাসপোর্ট বুকলেট ও দুই মিলিয়ন লেমিনেশন ফয়েল ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন পায়। এতে নতুন করে ৪০ কোটি ৭১ লাখ টাকা বৃদ্ধিসহ প্রকল্পটির ব্যয় হবে ৪০৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা।